ঢাকা, সোমবার, ৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

বেসিক ব্যাংকের লুট: সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তাদের মিলে ভয়াবহ প্রতারণা

২০২৫ জানুয়ারি ০৫ ১০:১৪:০৭
বেসিক ব্যাংকের লুট: সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ব্যাংক কর্মকর্তাদের মিলে ভয়াবহ প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসিক ব্যাংক লুটের ঘটনা একমাত্র আবদুল হাই বাচ্চুর একার কাজ নয়, বরং এতে জড়িত ছিল সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা, বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী পরিবারের পছন্দের লোক, বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু এই লুটপাটের নেতৃত্ব দেন। ২০০৯ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে বেসিক ব্যাংকটি লুটের পরিমাণ ছিল ভয়াবহ, যা ছিল প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা।

বেসিক ব্যাংকের পর্ষদে ছিলেন তৎকালীন সরকারি কর্মকর্তারা, যাদের মধ্যে ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা, সাবেক কাস্টমস কমিশনারসহ আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের সবার সম্মিলিত ষড়যন্ত্রেই ব্যাংকটি লুটের শিকার হয়। এই সময় ব্যাংকের ৬৪ শতাংশ ঋণই খেলাপি হয়ে পড়ে, যার ফলে ব্যাংকটি ব্যাপক লোকসান করতে থাকে।

২০০৯ সালের ১০ সেপ্টেম্বর সাবেক সংসদ সদস্য শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয়। তার আমলে শুরু হয় ব্যাংকের ব্যাপক অনিয়ম এবং দুর্নীতি। পরবর্তীতে, এই দুর্নীতির কারণে বেসিক ব্যাংকের দেওয়া ঋণগুলো অনেকেই ফেরত দেয়নি, যা ব্যাংকের আর্থিক ভিত্তি ভেঙে দেয়।

তবে, ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদের অধিকাংশ সদস্যদের পরবর্তীতে পদোন্নতি দেওয়া হয় এবং তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ সরকারি পদে নিযুক্ত হন। যাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সচিব, সচিব, কাস্টমস কমিশনার, এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তা। এ সময়, মাত্র দুইজন পরিচালক ছিলেন যারা লুটপাটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছিলেন—এরা হলেন সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ কামরুল ইসলাম এবং সাবেক অতিরিক্ত সচিব এ কে এম রেজাউর রহমান।

এদিকে, বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা ১৬টি দুর্নীতির মামলার তিন তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেছে আদালত। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা তদন্তে ত্রুটিপূর্ণ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেছেন, যেখানে ব্যাংক পর্ষদের সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

বিশ্লেষকরা দাবি করেছেন, বেসিক ব্যাংকের লুটের সঙ্গে শুধু আবদুল হাই বাচ্চুই নয়, পুরো পর্ষদ এবং ব্যাংকের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও যুক্ত ছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে সম্পদের হিসাব নেওয়া এবং বিচারের আওতায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারের সংশ্লিষ্টদেরও এই দুর্নীতিতে সরাসরি দায়ী করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক ড. মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, “এটি এক বিশাল চক্রান্ত ছিল, যেখানে বেসিক ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যবসায়ী এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা মিলে লুটপাটে যুক্ত হয়েছিল।”

তবে, তদন্তের মাধ্যমে এই চক্রের সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা উচিত, যাতে দেশের ব্যাংক খাতে শুদ্ধি আনা সম্ভব হয়।

কেএইচ

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে