ঢাকা, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

দুদকের জালে সাবেক সেনাপ্রধানসহ ১০ সামরিক কর্মকর্তা

২০২৫ জুন ০৮ ১২:৫১:৫৭
দুদকের জালে সাবেক সেনাপ্রধানসহ ১০ সামরিক কর্মকর্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার পরিবর্তনের পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি অনুসরণ করে জোরালো অভিযান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এবার তাদের অভিযানের আওতায় এসেছেন সামরিক বাহিনীর সাবেক ১০ জন শীর্ষ কর্মকর্তা। এদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ গ্রহণ, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও বিপুল অঙ্কের অর্থপাচারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত শুরু হয়েছে। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব ও সম্পদ জব্দ করা হয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে।

অভিযুক্তদের তালিকায় যারা রয়েছেন

১. জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ – সাবেক সেনাপ্রধান: তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, শত কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন এবং হুন্ডির মাধ্যমে মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। দুদকের চার সদস্যের কমিটি এ বিষয়ে অনুসন্ধান করছে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে তার ভিসা বাতিল করেছে।২. এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) শেখ আব্দুল হান্নান – সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান: অভিযোগের মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়, ঘুষ ও অবৈধ সম্পদ অর্জন। তার ও স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব ও ফ্ল্যাটসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

৩. মেজর জেনারেল টি এম জোবায়ের – সাবেক এনএসআই মহাপরিচালক: তার বিরুদ্ধে চাকরিতে ঘুষ গ্রহণ, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে সম্পদ অর্জন এবং লন্ডনে অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। তার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।

৪. মেজর জেনারেল (অব.) মো. সিদ্দিকুর রহমান – সাবেক রাজউক চেয়ারম্যান: রাজউকের প্রকল্পে দুর্নীতি ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তার ও স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে এবং অনুসন্ধান চলমান।

৫. মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজী – সাবেক সামরিক সচিব: তার বিরুদ্ধে জমি দখল করে পার্ক নির্মাণ ও দুর্নীতির মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। তাকে যশোর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল এবং বর্তমানে কারাবাসের পর তিনি জামিনে মুক্ত আছেন।

৬. মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক – সাবেক ডিজিএফআই প্রধান: আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তাকে ও স্ত্রীকে বিদেশযাত্রা থেকে বিরত রাখতে আদালতের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।৭. লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মজিবুর রহমান – সাবেক এসএসএফ ডিজি: তার বিরুদ্ধে স্ত্রীসহ বিপুল সম্পদ অর্জন ও অর্থপাচারের অভিযোগ রয়েছে। তার দুটি বাড়ি, ১০টি প্লট ও ১৬টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

৮. লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী – সাবেক এমপি: মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে দুর্নীতি ও অবৈধ ব্যবসার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে ১৬টি মামলা হয়েছে। তিনি ফেনীর সাবেক এমপিও ছিলেন।

৯. মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান – এনটিএমসির সাবেক মহাপরিচালক: তার বিরুদ্ধে ৪০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং ৩৪২ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। দুদক তার বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে এবং বিদেশে ব্যাংক একাউন্টেরও তথ্য মিলেছে।

১০. নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল: তার বিরুদ্ধেও অনুসন্ধান চলছে। তিনি বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন।

এ বিষয়ে দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন বলেছেন, প্রত্যেকটি অভিযোগ নিয়ম অনুযায়ী যাচাই করা হচ্ছে। অনুসন্ধান শেষ হলে কমিশনে প্রতিবেদন জমা পড়বে, তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তাদের এভাবে দুর্নীতির জালে ধরা পড়া দেশবাসীর মধ্যে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। এই অনুসন্ধান প্রমাণ করছে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের অবস্থান অত্যন্ত কঠোর।

মিরাজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে