ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
Sharenews24

অর্থ পাচার অনুসন্ধানে ট্যাক্স হ্যাভেন খ্যাত দেশে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা

২০২৪ ডিসেম্বর ২৪ ১৮:০৭:৫৬
অর্থ পাচার অনুসন্ধানে ট্যাক্স হ্যাভেন খ্যাত দেশে যাচ্ছেন গোয়েন্দারা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিবাসী বাংলাদেশী করদাতাদের বিদেশে থাকা সম্পদ শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছে। এনবিআরের উদ্যোগে সংস্থাটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) ছয়জন কর্মকর্তা দুই ভাগে শিগগিরই ট্যাক্স হ্যাভেন খ্যাত দেশগুলোতে যাচ্ছেন বলে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছ, আগামী বছরের জানুয়ারি মাসে ট্যাক্স হ্যাভেন খ্যাত দেশগুলোতে অনুসন্ধান শুরু করা হবে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেলের (সিআইসি) মহাপরিচালক (ডিজি) আহসান হাবিব, উপপরিচালক তোফায়েল আহমেদ ও সহকারী পরিচালক জায়ীদ নাসীরী, সিআইসির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) মোহাম্মদ তারিক ইকবাল, উপপরিচালক একেএম মঈন উদ্দিন ও সহকারী পরিচালক মাসরুরা শারমিন ওয়ারেছী ট্যাক্স হ্যাভেন দেশগুলোতে যাবেন।

দেশে বিদ্যমান আয়কর আইনে কোনো নিবাসী বাংলাদেশী করদাতার বিদেশে সম্পদ থাকলে তা আয়কর নথিতে প্রদর্শন করা বাধ্যতামূলক করা হয় ২০২২ সালের জুলাইয়ে। বিধানটিতে এ ধরনের কোনো সম্পদের তথ্য পাওয়া গেলে তা নিয়ে দেশে-বিদেশে অনুসন্ধান চালানো এবং সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা হিসেবে আদায়ের কথা বলা হয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচারের তথ্য বারবার সামনে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড ডিফেন্স স্টাডিজের (সি৪এডিএস) সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ইইউ ট্যাক্স অবজারভেটরির (ইইউট্যাক্স) গত বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তথ্য গোপন করে দুবাইয়ে ৪৫৯ বাংলাদেশির প্রপার্টি কেনার তথ্য উঠে এসেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত তাদের মালিকানায় সেখানে মোট ৯৭২টি প্রপার্টি কেনার তথ্য পাওয়া গেছে। কাগজে-কলমে যার মূল্য সাড়ে ৩১ কোটি ডলার।

তবে প্রকৃতপক্ষে এসব সম্পত্তি কিনতে ক্রেতাদের ব্যয়ের পরিমাণ আরো অনেক বেশি হতে পারে বলে মনে করছে ইইউট্যাক্স। আর অফ প্ল্যান প্রপার্টিকে (উন্নয়ন বা নির্মাণ শেষের আগেই কিনে নেয়া প্রপার্টি) হিসাবে নিলে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫৬২-তে। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত ইইউট্যাক্সের আরেক তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে দুবাইয়ের আবাসন খাতে ৫৩২ বাংলাদেশীর প্রপার্টি মালিকানার (অফ প্ল্যান অর্থাৎ উন্নয়ন বা নির্মাণ শেষের আগেই কিনে নেয়া প্রপার্টির মালিকানাসহ) হিসাব পাওয়া গেছে।

অর্থ পাচারসহ আরো নানাভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েছে দুবাই তথা ইউএই। দেশটি এখন বাংলাদেশে রেমিট্যান্সেরও বড় উৎস। দেশের অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানই এখন দুবাইকে বেছে নিয়েছে ব্যবসায়িক কার্যক্রমের কেন্দ্র হিসেবে। ডলার সংকটের কারণে বাংলাদেশ থেকে অনেক ব্যবসায়ী এখন দুবাইয়ে অনানুষ্ঠানিক অফিস খুলে সেখান থেকে ব্যবসা করছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

ইআরডি সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশীদের প্রপার্টিসহ নানা সম্পত্তি নিয়ে অনুসন্ধানের তাগিদেই এনবিআর কর্মকর্তারা ট্যাক্স হ্যাভেন খ্যাত দেশগুলোতে ভ্রমণ করতে যাচ্ছেন। এক্ষেত্রে অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আয়কর আইনের ২১ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হবে।

আয়কর আইনের ‘রিটার্নে অপ্রদর্শিত বিদেশস্থ সম্পত্তির ওপর জরিমানা আরোপ’ শীর্ষক ২১ নম্বর ধারাটিতে বলা হয়েছে, ‘কোনো নিবাসী বাংলাদেশী করদাতার রিটার্নে অপ্রদর্শিত বিদেশে থাকা সম্পত্তির সন্ধান পাওয়া গেলে এবং সম্পত্তি অর্জনের উৎস বা প্রকৃতি সম্পর্কে কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা তিনি উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে অথবা ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হলে ওই সম্পত্তির বাজারমূল্যের সমপরিমাণ অর্থ জরিমানা ও আদায় করবেন উপকর কমিশনার। তবে জরিমানা আরোপের ক্ষেত্রে করদাতাকে যুক্তিসংগত শুনানির সুযোগ দিতে হবে।

জরিমানার টাকা করদাতার কোনো পরিসম্পদ বা করদাতার পক্ষে অন্য কেউ কোনো পরিসম্পদ অর্জন করলে তা বিক্রি বা বাজেয়াপ্ত করে আদায় করা যাবে। বিদেশে থাকা সম্পত্তির বিষয়ে দেশে ও বিদেশে অনুসন্ধান ও তদন্ত করা যাবে। প্রয়োজনে বিদেশে গিয়ে অনুসন্ধানকারীরা সম্পত্তি ও সম্পত্তির এলাকা চিহ্নিতকরণ ও মূল্য নির্ধারণ করতে পারবেন।’

এস/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে