ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

মালয়েশিয়ায় বেনজীরের বিপুল সম্পত্তির সন্ধান

২০২৪ জুন ০২ ১৩:৫৪:৪৭
মালয়েশিয়ায় বেনজীরের বিপুল সম্পত্তির সন্ধান

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ‘মালয়েশিয়া মাই সেকেন্ড হোম’ প্রকল্পের আওতায় বিপুল বিনিয়োগ করেছেন। দেশ থেকে টাকা নিয়ে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেছেন তিনি। বাড়ি কিনেছেন। সিঙ্গাপুরে স্ত্রীর চিকিৎসা শেষে তিনি মালয়েশিয়ার ওই বাড়িতে গিয়ে আপাতত উঠেছেন।

দেশে-বিদেশে বেনজীরের সম্পদের অনুসন্ধান করতে গিয়ে এই তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধান টিম। মালয়েশিয়ার বিভিন্ন ব্যাংকে তার অর্থ লেনদেনের সুস্পষ্ট তথ্য-প্রমাণও পেয়েছে দুদক।

এদিকে দেশে বেনজিরের আরও সম্পদের তথ্য পাচ্ছে দুদক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন ঠিকাদারি কাজে বিতর্কিত মোতাজেরুল ইসলাম মিঠুর সঙ্গে বেনজীর আহমেদের ব্যবসা রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

উত্তরের দুই জেলায় কয়েকশ বিঘা জমি কিনেছেন তারা। এর মধ্যে অন্তত তিনটিতে শত বিঘা জমিতে গড়ে উঠেছে ‘উত্তর পোল্ট্রি ফার্ম’। তাদের মুরগির খাবারের ব্যবসাও রয়েছে। এসব তথ্য যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুদক।

দুদকের তদন্ত ও বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিআইএফইউ)সহ বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের টাকা দিয়ে মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে বাড়ি কেনার সুযোগ নেই। যারা সেখানে বাড়ি কিনেছেন তারা মূলত অর্থ পাচার করেছেন। এক্ষেত্রে বেনজীর আহমেদও ব্যতিক্রম নন।

জানা গেছে, মালয়েশিয়ার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রতনের সঙ্গে বেনজির আহমেদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মোহামেডান ক্লাবের পরিচালক এজিএম সাব্বির তাদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে তোলেন। এই ক্লাবের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক আইজিপি বেনজিরের অবৈধ আয়কারীদের একজন সাব্বির। বেনজীর আহমেদ তার মধ্যস্থতায় রতনের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন।

এছাড়া বেনজীর আহমেদ মালয়েশিয়ার অন্যতম হুন্ডি ব্যবসায়ী হুমায়ন কবিরের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন। জনশক্তি রপ্তানি ব্যবসার আড়ালে হুমায়ন বিশাল হুন্ডি ব্যবসা করেন। তার অফিস সিচুয়াংসা, কুয়ালালামপুরে। হুমায়ুন ও রতনের মাধ্যমে পাচার করা টাকা দিয়ে বেনজির পরিবারের জন্য একটি অত্যাধুনিক বাড়ি কেনেন এবং আবাসন খাতে বিনিয়োগ করেন।

রতন এখন ইউরোপের একটি দেশে এবং সাব্বির যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। হুমায়ন মালয়েশিয়ায়। বিএফআইইউর মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় বেনজিরের সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ শুরু করেছে দুদক কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, দেশে-বিদেশে বেনজিরের সম্পদের তথ্য খুঁজতে গিয়ে নতুন কিছু তথ্য পেয়েছে দুদক। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ের জগন্নাথপুর ইউনিয়নের বড় খোচাবাড়ি এলাকায় একটি বড় মুরগির খামার রয়েছে। বিতর্কিত স্বাস্থ্য ঠিকাদার মিঠুর সঙ্গে যৌথ মালিকানাধীন খামারটির নাম ‘নর্থ পোল্ট্রি ফার্ম’।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ভিনজগত পার্ক সংলগ্ন এলাকায় একই নামে আরেকটি খামার রয়েছে। এই খামার উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন বেনজীর আহমেদ ও মিঠু।

এ ছাড়া কিশোরগঞ্জ উপজেলার দয়ার বাজার এলাকায় আরও একটি খামার রয়েছে। এই খামারের নামে কয়েকশ বিঘা জমি কেনা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব খামার দেখাশোনা করেন মিঠুর ভাই মানিক হাজী।

প্রসঙ্গত, আইজিপি থাকাকালে বেনজীর আহমেদ বিভিন্ন সভা-সেমিনার ও পুলিশের অনুষ্ঠানে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জোরালো কথা বলেছেন।

চাকুরি থেকে অবসর নেওয়ার পর গত এপ্রিল মাসে তিনি এবং তার পরিবারের সদস্যদের নামে বিপুল সম্পদের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশের পর নতুন করে আলোচনায় আসেন। এরপর বিভিন্ন মহল থেকে তার সম্পদ অনুসন্ধানের দাবি ওঠে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সাইদুল হক সুমনও তার সম্পদ অনুসন্ধানের জন্য দুদকের কাছে আবেদন করেন। এরপর এই বিষয়ে তিন সদস্যের একটি টিম গঠন করে কমিশন। এই দলের প্রাথমিক তদন্তে দুদক বেনজির ও তার পরিবারের কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের সন্ধান পাওয়া গেছে।

শেয়ারনিউজ, ০২ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে