ঢাকা, সোমবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বিনিয়োগকারীদের কথা

ফার কেমিক্যাল ও আরএন স্পিনিংয়ের শেয়ারে ক্ষতি ৫৫ কোটি টাকা

২০২৩ নভেম্বর ১৪ ১৫:০৬:৩৯
ফার কেমিক্যাল ও আরএন স্পিনিংয়ের শেয়ারে ক্ষতি ৫৫ কোটি টাকা

হাফিজ আল আসাদ : আসলে কিভাবে শুরু করব বুঝিতে পারছি না। কোনটা নিয়ে শুরু করবো- কোম্পানি নিয়ে, না যারা কোম্পানি দেখাশোনা করেন, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগকারীদের তথাকথিত সুরক্ষা দেন, তাদের দায় দায়িত্ব নিয়ে!

যাহোক, প্রথমে কোম্পানি নিয়ে আলোচনা শুরু করি। সম্প্রতি ডিএসই এবং সিএসই-তে নিবন্ধিত দুটি কোম্পানি তাদের অনিবন্ধিত দুটি কোম্পানির সাথে একিভূত করার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছেন। এক কোম্পানি আরেক কোম্পানির সাথে একীভূতহবে-এটা কোন দোষের নয়। একীভূত হতেই পারে। কিন্তু প্রশ্ন হল- এখানে কার সাথে কার একীভূত হয়েছে, তা আমাদের মত সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বোধগম্য নয়। আসলে এখানে কি ঘটলো। সিডিবিএল থেকে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর কাছে (যাদের সিডিবিএল এলার্ট মেসেজ চালু আছে) মেসেজ আসলো যে আপনার ১২৬০টি ফার কেমিক্যাল শেয়ার ডেবিট এবং ৪২০টি ফার কেমিক্যাল ক্রেডিট।

অনুরূপভাবে আরএন স্পিনিংয়ের ক্ষেত্রে মেসেজ আসলো আপনার ২০০০টি আরএন স্পিনিং ডেবিট এবং ৩৫টি আরএন স্পিনিং মিলসের শেয়ার ক্রেডিট।

উপরোক্ত মেসেজ থেকে আমরা বিনিয়োগকারীরা বুঝলাম যে আমরা ৩টি ফার কেমিক্যালের বিপরীতে ১টি নতুন ফার কেমিক্যালের শেয়ার পেলাম এবং অনুরূপভাবে ৫.৫৯ টি আরএন স্পিনিংয়ের বিপরীতে ১টি নতুন আরএন স্পিনিংয়ের শেয়ার পেলাম।

এখন আমরা কি বলবো ফার কেমিক্যাল, ফার কেমিক্যাল এর সাথে এবং আরএন স্পিনিং, আর এন স্পিনিং এর সাথে একীভূত হয়েছে?

ডিএসই এবং সিএসই-তে নিবন্ধিত একটি কোম্পানির বিনিময়ে কিভাবে একটি অনিবন্ধিত কোম্পানি বিনিময় করা যায়? নিবন্ধিত কোম্পানির সাথে অনিবন্ধিত কোম্পানির বিনিময় করা যায় না বলেই হয়তো নতুন কোম্পানির নাম আসেনি!

আমি লেখার প্রথমেই বলেছি নিজেকে নিজের সাথে একীভূত করা যায় না। সিডিবিএল থেকে যে মেসেজ এসেছে সে মেসেজ দেখে মনে হয় নিজেকে নিজের সাথে একীভূত করেছে। যদি এক কোম্পানি অন্য আরেক কোম্পানির সাথে একিভূত হতো তাহলে সিডিবিএল থেকে মেসেজ আসতে হতো যে আপনার ১২৬০টি ফার কেমিক্যাল ডেবিট এবং ৪২০টি এসএফ টেক্সটাইল ক্রেডিট।

অনুরূপভাবে, আপনার ২০০০টি আরএন স্পিনিং ডেবিট এবং ৩৫৭টি সামিন ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ ক্রেডিট এবং ডিএসই ও সিএসই-তে এসএফ টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সামিন ফুড এন্ড বেভারেজের সম্পদ মূল্য, ইপিএস, ফ্লোর প্রাইস প্রদর্শিত হতো। এগুলো কিছুই হয়নি। যা হয়েছে পুরোটাই গাজাখুরি। এর জন্য কে দায়ী- কোম্পানির পরিচালক না ডিএসই, না সিডিবিএল, না বিএসইসি?

এবার আসি ডিএসই এবং বিএসইসি’র কর্তাব্যক্তিদের কথায়। গত ৩ নভেম্বর প্রকাশিত শেয়ারনিউজের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী ডিএসই’র ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক অপারেটিং অফিসার এম সাইফুর রহমান মজুমদার বলেন. ‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি ফ্লোর প্রাইস সমন্বয়ের যে নীতিমালা করেছে, তার আলোকে তাদের করার কিছু ছিল না।’

এখন আমরা বিনিয়োগকারীরা কি বলেবা, আরে ভাই আপনি হলেন শেয়ারমার্কেটের কর্ণধার। আপনি যদি বলেন করার কিছু ছিল না, তাহলে এটা বললেই আপনার দায়-দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। আপনি একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি, আপনার কাছে একটা লোককে দড়ি দিয়ে ভালো করে বেঁধে বলল আপিন একে পানিতে ফেলে দেন। তারপর আপনি তাকে পানিতে ফেলে দিবেন! আর বললেন আমার করার কিছু ছিল না। এভাবে শেয়ারবাজার চলতে পারে? পারে না। এটা শেয়ারবাজার। এটা ছোটবেলার সেই ফুটবল খেলা না যে, সবাই মিলে একটা ফুটবল কিনলাম, একটু পরে মনমালিন্য হল আর ফুটবলটা টুকরো টুকরো করে ভাগ করে নিলাম।

এই বিষয়ে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যম বলেছেন "এই বিষয়টি যেভাবে হয়েছে সেটি আইনসম্মত না হলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

আচ্ছা বলেনতো শেয়ারবাজারের এই কর্ণধার ব্যক্তি এটা কি বললেন। এতো বড় পদে থেকে উনিতো সহজেই বুঝতে পারেন, এটা আইনসম্মত হয়েছে, কি হয়নি? তারপরও উনি বিনিয়োগকারীদের সান্তনা দিয়েছেন এবং পরেরদিন অবশ্য ফ্লোর প্রাইস বসিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছেন।

আরএন স্পিনিং মিল এবং ফার কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজের ফ্লোর প্রাইস নতুন করে যথাক্রমে ২০ টাকা ৯০ পয়সা এবং ২৮ টাকা ২০ পয়সা নির্ধারণ করেছেন।

এখন আলোচনা করা যাক, নতুন ফ্লোর প্রাইস অনুযায়ী বিনিয়োগকারীদের কি লাভ হয়েছে? একীভূত হওয়ার আগে আরএন স্পিনিং মিলসের ফ্লোর প্রাইস ছিল ৬ টাকা ২০ পয়সা। তার মানে ৬.২০X৫.৫৯ =৩৪.৬৬ টাকা। অর্থাৎ আরএন স্পিনিংয়ের ফ্লোর প্রাইস হওয়ার কথা ৩৪ টাকা ৬৬ পয়সা। কিন্তু ফ্লোর প্রাইস হয়েছে ২০ টাকা ৯০ পয়সা। তাহলে বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে (৩৪.৬৬ - ২০.৯০ =১৩.৭৬/ ৫.৫৯ = ২.৪৬ টাকা) । আর এন স্পিনিং এর টোটাল নাম্বার অফ শেয়ার ৩০ কোটি ৩৪ লাখ ৫২ হাজার ১০৯ টি এবং ৩১ শে অক্টোবর ২০২৩ তারিখে রেকর্ড অনুযায়ী এই কোম্পানিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ার ৫৯.১২℅, তাহলে রেকর্ড অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা ১৭ কোটি ৯৪ লক্ষ ৮৮৬ টি শেয়ার। তাহলে সর্বশেষ রেকর্ড অনুযায়ী এই কোম্পানিতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের লোকসান হয়েছে (২.৪৬* ১৭৯৪০০৮৮৬)= ৪৪ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ১৭৯ টাকা।

অনুরূপভাবে ফার কেমিক্যাল শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে (১০.৬০X৩ = ৩১.৮০ - ২৮.২০=৩.৬০/৩= ১.২০ টাকা)। ফার কেমিকেলের এর টোটাল নাম্বার অফ শেয়ার ১৫ কোটি ৩০ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩৩ টি এবং ৩১ শে অক্টোবর ২০২৩ তারিখ রেকর্ড অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ৫৬.৬৮%। তাহলে রেকর্ড অনুযায়ী সাধারণ বিনিয়োগ কারীদের শেয়ার সংখ্যা ৮ কোটি ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৫ ৬৮ টি শেয়ার । ফলে এই কোম্পানিতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লোকসান হয়েছে (১.২০X৮৬৭৭৫৫৬৮)= ১০ কোটি ৪১ লাখ ৩০ হাজার ৬৮১ টাকা।

পরিশেষে শেয়ারবাজারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তাব্যক্তিদের কাছে আমার মত লক্ষ বিনিয়োগকারীদের প্রশ্ন আপনাদের খামখেয়ালির কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হারিয়ে যাওয়া ৫৫ কোটি (প্রায়) টাকার দায়-দায়িত্ব কার? এর জবাব কে দেবে?

শেয়ারনিউজ, ১৪ নভেম্বর ২০২৩

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে