ঢাকা, রবিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে’

২০২৩ নভেম্বর ১০ ০৭:০১:৪৮
‘বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার প্রতি ভারতের সমর্থন রয়েছে’

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশকে একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ভারত তার সমর্থন অব্যাহত রাখবে বলে আবারও জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র বলেছেন, ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করে ভারত। বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ভারতের সরকারি বার্তা সংস্থা এএনআই ’এর বরাত দিয়ে দ্যা প্রিন্টসহ ভারতের একাধিক গণমাধ্যম বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট করেছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে একাধিক বিএনপি নেতাদের গ্রেফতার এবং বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন কঠোরভাবে দমনের বিষয় উল্লেখ করে এই বিষয়ে ভারতের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়।

তবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান। তিনি বলেন, “আমরা তৃতীয় কোনো দেশের নীতি নিয়ে মন্তব্য করতে চাই না। বাংলাদেশে নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে।

অরিন্দম বাগচি আরও বলেন, “একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং অংশীদার হিসেবে আমরা বাংলাদেশে তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সম্মান করি এবং আমরা একটি স্থিতিশীল, শান্তিপূর্ণ ও প্রগতিশীল জাতির বাংলাদেশের স্বপ্নকে সমর্থন করে যাব।”

গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি সরকারের পদত্যাগের দাবিতে মহাসমাবেশ করে। ওই সমাবেশকে কেন্দ্র করে ব্যাপক হিংসাত্মক ঘটনা ঘটে। পরে বিএনপি আহুত অবরোধ কর্মসূচিকে ঘিরেও বাসে অগ্নিসংযোগের মত নানা নাশকতামূলক ঘটনা গঠছে।

বিএনপি অভিযোগ করছে, সরকার এজেন্টের মাধ্যমে এসব ঘটনা ঘটিয়ে তাদের উপর দায় চাপাচ্ছে। অন্যদিকে সরকারি দল ও পুলিশের দাবি, বিএনপির নেতা-কর্মীরা এবং তাদের নির্দেশে কিছু ভাড়া করা দুর্বৃত্ত এসব নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছে। নাশকতার অভিযোগে বিএনপির ডজনখানে কেন্দ্রীয় নেতাসহ দেড় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ বিরোধী নেতা-কর্মীদের উপর নিপীড়ন চালানো হচ্ছে অভিযোগ তুলে তার নিন্দা জানিয়েছে। তারা বিএনপি ও অন্যান্য দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতিমধ্যে ভিসা নীতিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অনেকটা সরকারের বিপক্ষে যায় বলেই মনে করা হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে এতকিছু ঘটে গেলেও প্রতিবেশী ভারত মূলত চুপ করে ছিল। তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে ওই প্রশ্নের জবাবে হলেও দেশটির অবস্থান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল।

এতদিন বিএনপি ও অনেক বিশ্লেষকের বক্তব্য ছিল, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পাশে না থাকা, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল আমদানি, প্রবল মুসলমান বিদ্বেষ ও তীব্র সাম্প্রদায়িকতাসহ নানা কারণে মোদী সরকারের উপর যথেষ্ট চাপ আছে। এছাড়া দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক ধীরগতি এবং প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর জোট গঠন করে বিজেপিকে হটানোর চেষ্টায় বেশ অস্বস্তিতে আছে বিজেপি সরকার। তাই তারা এবার আওয়ামীলীগের পাশে থাকার মতো বাড়তি ঝুঁকি নেবে না। বরং একটা নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করবে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের আশা, চীনকে ঠেকানোর যুদ্ধে ভারতে পাশে দরকার যুক্তরাষ্ট্রের। তাই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে ভারতে চাওয়ার বাইরে যাবে না। মৌলবাদ, জঙ্গী তৎপরতা যাতে বাংলাদেশে জেঁকে বসতে না পারে, সে লক্ষ্যে আওয়ামীলীগকে সরকারে দেখতে চাইবে ভারত। আর তারা নিজেদের প্রয়োজনেই যুক্তরাষ্ট্রকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করবে।

অরিন্দম বাগচি অবশ্য এর আগেও বাংলাদেশের নির্বাচন ইস্যুতে প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। গত ৩ আগস্ট ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে তার মতামত জানতে চাওয়া হয়।

তিনি তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘সেখানে কীভাবে নির্বাচন হবে তা বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে।

এরপর গত ১৭ অক্টোবর ভারত সফরে যাওয়া বাংলাদেশের গণমাধ্যম প্রতিনিধি দলের সাথে মত বিনিময়কালে তিনি আবারও বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন কীভাবে হবে, তা দেশটির জনগণই ঠিক করবে। তবে আমরা চাই, একটি গণতান্ত্রিক ও স্থিতিশীল বাংলাদেশ।’

তবে এবারের বক্তব্যকে বেশ তাৎপর্যময় মনে করা হচ্ছে। কারণ অরিন্দম বাগচি এমন সময়ে এই বক্তব্য দিলেন, যার একদিন পরেই ভারত সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সাথে সরকারের বৈঠক হওয়ার কথা। যদিও ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়েই আলোচনা হবে বলে বলা হয়েছে, তবে সেখানে আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা জায়গা পেতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভারত হয়তো তার অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দুই নীতিনির্ধাকের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করবে।

আলোচিত বক্তব্যে নির্বাচনী আবহে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ভারতের অবস্থান কী, তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা জাতীয় শব্দচয়নের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও ভারতের অবস্থান একই মেরুতে মিলেছে বলে অনুমান করা যায়।

আর এর মাধ্যমে আওয়ামীলীগের প্রতি ভারতের প্রচ্ছন্ন সমর্থনের বিষয়টির কিছুটা ইঙ্গিত মিলছে মনে করা যেতেই পারে।

শেয়ারনিউজ, ১০ নভেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে