ঢাকা, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

জানুয়ারি থেকে ইরাকে ডলারে লেনদেন নিষিদ্ধ

২০২৩ অক্টোবর ০৭ ১৪:০৩:৩৪
জানুয়ারি থেকে ইরাকে ডলারে লেনদেন নিষিদ্ধ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন আর্থিক অপরাধ দমন এবং ইরানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পরোক্ষ প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশীয় বাজারে ডলার লেনদেন নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে ইরাক। বার্তা সংস্থা রয়টার্স ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানিয়েছে, আগামী বছরের ১ জানুয়ারি থেকে মার্কিন ডলারে নগদ অর্থ উত্তোলন ও লেনদেন নিষিদ্ধ করা হবে।

দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (সিবিআই) ইনভেস্টমেন্টস অ্যান্ড রেমিট্যান্সের মহাপরিচালক মাজেন আহমেদ বলেছেন, এই পদক্ষেপের লক্ষ্য হল নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভ থেকে ইরাক বার্ষিক ১০ বিলিয়ন ডলারের নগদ অর্থের প্রায় ৫০ শতাংশের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা।

এটি ডলার থেকে অর্থনীতিকে মুক্ত করার একটি বৃহত্তর পদক্ষেপেরও অংশ। ২০০৩ সালে মার্কিন আগ্রাসনের পর থেকে, ইরাক যুদ্ধ এবং অর্থনৈতিক সংকটে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে লেনদেনের ক্ষেত্রে ডলারের চেয়ে স্থানীয় নোটকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে। ইরাকি কর্তৃপক্ষ মনে করে তাদের মুদ্রা শক্তিশালী করার জন্য এর চেয়ে ভালো উপায় আর নেই।

মাজেন আহমেদ জানিয়েছেন, ২০২৩ সাল শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত যাঁরা ব্যাংকে ডলারে অর্থ জমা করেছেন তাঁরা ২০২৪ সালে ডলারে তাঁদের টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। ২০২৪ সালে জমা করা ডলার শুধু ১ হাজার ৩২০ ইরাকি দিনার সরকারি বিনিময় হারে উত্তোলন করা যাবে।

গত বৃহস্পতিবার (০৫ অক্টোবর) স্থানীয় মানি এক্সচেঞ্জগুলোতে ডলার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ ইরাকি দিনারে। এটি সরকার নির্ধারিত বিনিময় হারের চেয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ বেশি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা বলছেন, ব্যাংকে ডলারে আমানত রাখলেও তুলতে গেলে অবশ্যই ইরাকি দিনারে নিতে হবে।

ইরাকের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নগদ ডলার তোলার ওপর নিষেধাজ্ঞা শুধু সেসব অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে যেগুলো থেকে বিদেশে ডলার স্থানান্তরিত হয়।

এরই মধ্যে দেশটি ওয়্যার ট্রান্সফার বা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার নিয়ন্ত্রণ করার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। এই পদ্ধতিতেই সবচেয়ে বেশি ডলার স্থানান্তর হয়। দেখা যায়, জাল রসিদ তৈরি করে এসব লেনদেন করা হয়। জালিয়াতির মাধ্যমে লেনদেনের সবচেয়ে জনপ্রিয় পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে এটি। এ পদ্ধতিতে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা ইরান ও সিরিয়ায় ডলার পাচার হয় বেশি।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে একটি ব্যবস্থা ঠিক করেছে ইরাকি কর্তৃপক্ষ। সেখানে ইরাকের তেল বিক্রির ১২০ বিলিয়ন ডলার মজুত রাখা হয়েছে। সেই ব্যবস্থাটি এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রেমিট্যান্স বিভাগের প্রধান। তিনি বলেছেন, যারা খাদ্যপণ্য আমদানির মতো বৈধ বাণিজ্যে জড়িত তাঁদের সরকার নির্ধারিত হারে ডলার সরবরাহ করা হচ্ছে।

তবে নগদ উত্তোলনের অপব্যবহার অব্যাহত রয়েছে। বিদেশে ভ্রমণের সময় সঙ্গে তিন হাজার ডলার নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সরকারের ডলার নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাটির অপব্যবহার করার আশঙ্কা থাকছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক জ্বালানি তেল রপ্তানি থেকে আয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই অর্থ নিরাপদ রাখতে এবং মার্কিন নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত থাকতে বাগদাদ ওয়াশিংটনের সদিচ্ছার ওপর অনেক বেশি নির্ভরশীল। তবে একই সময়ে, ইরান-সমর্থিত শক্তিশালী রাজনৈতিক দল এবং সশস্ত্র সংগঠনগুলোর সমর্থন পাওয়া বর্তমান ইরাক সরকার তেহরানকে বিচ্ছিন্ন না করার ব্যাপারেও সতর্ক।

ইরাকে ডলার সংকট বেড়েছে। স্থানীয় অনেক ব্যাংক এরই মধ্যে ডলারের নগদ উত্তোলন সীমিত করেছে। এতে ডলারের ঘাটতি আরও বেড়েছে। ফলে বাজারে বেসরকারি বিনিময় হার ক্রমাগত বাড়ছে। সিবিআই আশঙ্কা করছে, নতুন ব্যবস্থা কার্যকর হওয়ায় দিনার আরও মূল্য হারাতে পারে। তবে এটিকে আর্থিক ব্যবস্থাকে আনুষ্ঠানিক করার একটি গ্রহণযোগ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বলেও মনে করছেন তাঁরা।

তবে ডলারের ঘাটতি নিয়ে কিছু হতাশাও রয়েছে। বিশেষ করে যাঁরা ব্যক্তিগত আমানতে ডলার রেখেছিলেন, তাঁরা ব্যাংকে টাকা তুলতে গিয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছেন। কারণ, তাঁদের এখন সরকার নির্ধারিত হারে ডলারের পরিবর্তে ইরাকি দিনার নিতে হচ্ছে।

শেয়ারনিউজ, ০৭ অক্টোবর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে