ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

বিশেষ সুবিধায় মুনাফা বেশি দেখানোর সুযোগ পেয়েছে ১৬ ব্যাংক

২০২৩ আগস্ট ২৮ ০৬:১২:১৮
বিশেষ সুবিধায় মুনাফা বেশি দেখানোর সুযোগ পেয়েছে ১৬ ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে। তবে খেলাপি ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রভিশন হিসেবে রাখতে হবে। যার প্রভাব পড়ে সরাসরি মুনাফায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় অনেক ব্যাংক চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গত বছর ১৬টি ব্যাংক বিশেষ সুবিধা নিয়েছে, যা ডেফারেল সুবিধা হিসেবে বিবেচিত।

গত বছর ১৬টি ব্যাংক বিভিন্ন মেয়াদের জন্য এই ডেফারেল সুবিধা পেয়েছে। ব্যাংকভেদে এক থেকে ৯ বছরের জন্য ডেফারেল সুবিধা দেয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ১৬টি ব্যাংককে ৪৯ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দেয়া হয়। এর মাধ্যমে প্রভিশন ঘাটতি লুকিয়ে বেশিরভাগ ব্যাংকই মুনাফা দেখিয়েছে। তবে এই সুবিধা নেয়ার পরও দু-একটি ব্যাংক লোকসানেই রয়ে গেছে।

ব্যাংকগুলোর মধ্যে প্রভিশন সংরক্ষণে ১০টি ব্যাংককে এক বছরের সময় দেয়া হয়েছে। চার বছর সময় দেয়া হয়েছে দুটি ব্যাংককে, পাঁচ বছর একটি, সাত বছর একটি ও ৯ বছর পর্যন্ত অতিরিক্ত সময় (ডেফারেল) দেয়া হয়েছে আরও দুটি ব্যাংককে।

এক্ষেত্রে প্রতি বছর সমান ভাগে ভাগ করে এই বকেয়া প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি করেছে ব্যাংকগুলো। তবে এক্ষেত্রে অনেক ব্যাংক তা বাস্তবায়ন করতে পারবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মূলত ব্যাংকগুলোর বছর শেষে আর্থিক প্রতিবেদন ভালো দেখাতে এই ধরনের সুবিধা নিয়ে প্রভিশন ঘাটতি আড়াল করা হয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে ব্যাংকের মূলধন ঘাটতিতে পড়ে যায়। তাই মূলধন ঘাটতি ঢাকতেও নিয়েছে ডেফারেল নামক বিশেষ সুবিধা।

ডেফারেল সুবিধাপ্রাপ্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ও বেসিক ব্যাংক। বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিক্যালচার এন্ড কমার্স ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক। তবে এর একই ধরনের সুবিধা দেয়া হয়েছিল পদ্মা ব্যাংককে, যা চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত বহাল আছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, গত বছর সবচেয়ে বেশি ডেফারেল সুবিধা পেয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক। ব্যাংকটিকে ১০ হাজার ৮৭০ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দেয়া ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত। তবে ডেফারেল সুবিধা নিয়েও গত বছর লোকসান গুনেছে ব্যাংকটি। গত বছর এই ব্যাংকের রেকর্ড ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি লোকসান হয়।

বিশেষ এই সুবিধা নেয়ায় পরের ব্যাংক হলো জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটিকে ৮ হাজার ৫০৩ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দেয়া হয়। পরবর্তী ৯ বছরের মধ্যে তা সমন্বয় করার সুযোগ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

এবি ব্যাংক ৬ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার সুবিধা নেয় ২০২৯ সাল পর্যন্ত। রূপালী ব্যাংক প্রভিশন ঘাটতির বিপরীতে ৬ হাজার ৪৭ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা পায় ২০২৩ সালে আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করার আগ পর্যন্ত।

এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক ৫ হাজার ৯১১ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা পায় চার বছরের জন্য। ৯ বছরের জন্য বেসিক ব্যাংক ৪ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার সুবিধা দেয়া হয়। সোনালী ব্যাংক চার বছরের জন্য পায় ৩ হাজার ৭২১ কোটি টাকার।

পাঁচ বছরের জন্য ওয়ান ব্যাংক ১ হাজার ২৪ কোটি টাকা, চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত এনসিসি ব্যাংকে ৬৮৫ কোটি টাকা এবং ঢাকা ব্যাংক ৪৯৮ কোটি টাকা সমন্বয়ের সুবিধা পায় ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রস্তুত করা পর্যন্ত।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৪২৮ কোটি, আইএফআইসি ৪২০ কোটি, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৯৯ কোটি, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৭০ কোটি, সাউথইস্ট ব্যাংক ১২১ কোটি এবং সাউথ বাংলা এগ্রিক্যালচার ব্যাংক ৩৭ কোটি টাকার ডেফারেল সুবিধা দেয়া হয়। সবগুলোকে আগামী ২০২৩ সালের আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার আগ পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। এছাড়া পদ্মা ব্যাংকের সুবিধা অব্যাহত রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা না থাকার কারণে গত বছর বিপুল পরিমাণ ঋণ খেলাপি হয়েছে, যার কারণেই প্রভিশন ঘাটতি বেড়েছে। তাই বিপুল পরিমাণ প্রভিশন ঘাটতির বিপরীতে ডেফারেল সুবিধা নিতে হয়েছে।

এই ধরনের সুবিধার ফলে ব্যাংকগুলোর প্রকৃত আর্থিক চিত্র আড়াল করা হচ্ছে। আর আমানতকারীদের আমানত ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলেন, বিষয়টা আমানতকারীদের জন্য বড় ঝুঁকি। সাধারণ আমানতকারীরা যদি না জানে তারা যে ব্যাংকে টাকা রাখছে তার ভিত্তি দুর্বল, তাহলে তাদের প্রতারিত হওয়ার সুযোগ থাকে।

নিয়ম অনুযায়ী, ঋণের মানভেদে শূন্য দশমিক ২৫ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত প্রভিশন সংরক্ষণের বিধান রয়েছে। যেসব ব্যাংক তা রাখতে পারে না, তাদের ব্যাংকের মূলধন থেকে সেই ঘাটতি সমন্বয় করা হয়। ফলে ব্যাংকের মূলধন কমে যায়।

পাশাপাশি যেসব ব্যাংক পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তারা ঘাটতি রেখে শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিতে পারে না। এ দুই সমস্যা সমাধানে ডেফারেল নামক অস্ত্র ব্যবহার করছে ব্যাংকগুলো। এতে কাগজে কলমে সাময়িক সমাধান হলেও দীর্ঘমেয়াদে হুমকির সম্মুখীন হবে এসব ব্যাংক।

শেয়ারনিউজ, ২৭ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে