ঢাকা, শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

ভেঙ্গে পড়েছে শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা

২০২৩ আগস্ট ০৯ ২১:৩০:২৫
ভেঙ্গে পড়েছে শেয়ারবাজারের শৃঙ্খলা

মাসুদ হাসান :পুরোপুরিভাবে বিশৃঙ্খল একটি শেয়ারবাজার। গত ২০ বছরে এমন বিশৃঙ্খল শেয়ারবাজার আগে দেখি নাই। ন্যূনতম শৃঙ্খলা নেই বর্তমান শেয়ারবাজারে।

বাজারে এ, বি, জেড ও এন ক্যাটাগরির কোম্পানি রয়েছে। যে সকল কোম্পানি ন্যূনতম ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড দেয়ম সেসব কোম্পানি এ ক্যাটাগরিতে থাকে। আর যে সকল কোম্পানি ১০ শতাংশের কম ডিভিডেন্ড দেয়, সেসব কোম্পানি বি ক্যাটাগরিতে থাকে। যেসব কোম্পানি ডিভিডেন্ড দিতে পারে না, সেগুলো জেড ক্যাটাগরিতে থাকে। আর শেয়ারবাজারে নতুন আসা কোম্পানিগুলো এন ক্যাটাগরিতে লেনদেন করে। অথচ বর্তমানে ডিভিডেন্ড না দিয়েও বছরের পর বছর অনেক কোম্পানি এ এবং বি ক্যাটাগরিতে লেনদেন করছে। সব যেন লেজেগোবরে। যেমন- ডেল্টা স্পিনার্স, ইয়াকিন পলিমার, রিজেন্ট টেক্সটাইল, রিং শাইন টেক্সটাইল, সেন্ট্রাল ফার্মা, ইনটেক অনলাইন, ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড, ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স।

আবার অনেক কোম্পানি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করেও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না। এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে যাচ্ছে কিন্তু বিনিয়োগকারীদের কাছে এখন পর্যন্ত ডিভিডেন্ড পৌঁছেনি।

নিয়ম অনুযায়ী এজিএম হওয়ার ১ মাসের মধ্যে ডিভিডেন্ড বিনিয়োগকারীদের এক্যাউন্টে পাঠাতে হবে। অথচ গত বছর ফরচুন সুজ, লুব-রেফ, অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন, সাফকো স্পিনিং ও প্যাসিফিক ডেনিম, ওরিজা এগ্রো, বিডি পেইন্টস, মামুন এগ্রো ও কৃষিবিদ ফিড কোম্পানি ডিভিডেন্ডে ঘোষণা করেও বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেয়নি। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে এমনটি ঘটেনি। এভাবে যদি ডিভিডেন্ড ঘোষণা করে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড না দেয়ার প্র্যাকটিস স্টক এক্সচেঞ্জে শুরু হয়, তাহলে তা হবে বিনিয়োগকারীদের জন্য ভয়ঙ্কর এবং শেয়ারবাজারের জন্য অশনিসংকেত।

এদিকে, বছরের পর বছর ডিভিডেন্ড দিচ্ছে না, কোম্পানির কোন অস্তিত্ব নেই, এমন অনেক কোম্পানি এখনও শেয়ারবাজারে লেনদেন হচ্ছে। অথচ এগুলো অনেক আগেই তালিকাচ্যুত হবার কথা ছিল। উল্টো তালিকাচ্যুত কোম্পানিগুলো বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য তৈরি করে মূল বাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে, যা গত ২০ বছরের ইতিহাসে আগে দেখা যায়নি।

অপরদিকে, ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফিরে আসার পর প্রথম ৩ বছর রাইট শেয়ার ইস্যু করা যায় না। প্রথম ৩ বছর পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি করা যায় না। প্রথম ৩ বছর বোনাস শেয়ার ইস্যু করা যায় না। অথচ এই নিয়ম খোদ বিএসইসি ভঙ্গ করে ওটিসি থেকে মূল মার্কেটে ফিরে আসা কোম্পানিগুলোকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছে। যেন নিয়ম ভাঙ্গতে বিএসইসি-ই সবার আগে।

প্রায় ১ বছর হতে চললো বাজারে ফ্লোর প্রাইজ দেয়া হয়েছে। যে কোম্পানিগুলো বাজারের শক্তি সেগুলো আজ পর্যন্ত ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়াতে পারেনি। অথচ জাপানি কোম্পানির ধুয়া তুলে এমারেল্ড অয়েল ১৫ টাকা থেকে এখন ১৮০ টাকা। শুনলে অবাক লাগবে এই কোম্পানির সম্পদ ঋণাত্মক। পুরো বাংলাদেশ ঘুরেও আপনি বাজারে একটি স্পন্দন তেলের বোতল খুঁজে পাবেন না। কিন্তু শেয়ারবাজারে চলছে চমকের পর চমক। শোনা যায়, খোদ বিএসইসির কর্মকর্তারা কোম্পানিটির পেছনে যারা কলকাঠি নাড়াচ্ছেন, তাদের ইন্ধন যোগাচ্ছেন। তারা এখন শেয়ারবাজারে মুকুটহীন সম্রাট বলে বিনিয়োগকারীদের বহুল আলোচিত-সমালোচিত।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। বিএসইসি, ডিএসই, সিডিবিএল এর কর্মকর্তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এই বিষয়ে সমকাল সহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় আমরা প্রমানসহ রিপোর্ট দেখতে পেয়েছি। বন্ধ, দুর্বল কোম্পানিগুলো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়িয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সেই সব কোম্পানির প্রতি প্রলুব্ধ করার চেষ্টা চলছে। বাজারে লেনদেনে শীর্ষে থাকে বছরের পর বছর বন্ধ থাকা কোম্পানিগুলো। বিনিয়োগ শিক্ষা ভুলে বিনিয়োগকারীরা এখন ভালো-মন্দের বিচার করা ভুলে গেছে। সত্যিই এমন বিশৃঙ্খল শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীরা আগে দেখেনি।

লেখক শেয়ারবাজারের একজন বিনিয়োগকারী

শেয়ারনিউজ, ১১ জুলাই ২০২৩

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে