ঢাকা, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

নির্বাচনী প্রচারণায় বড় পরিবর্তন, প্রার্থীদের যা জানা জরুরি

২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ১০:৪৩:৪৩
নির্বাচনী প্রচারণায় বড় পরিবর্তন, প্রার্থীদের যা জানা জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের নির্বাচন মানেই একসময় রঙিন পোস্টারে ছেয়ে যাওয়া দেয়াল, গাছ আর সড়কের মোড়। সেই চেনা দৃশ্য এবার আর থাকছে না। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী প্রচারণার ধরন আমূল বদলে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পোস্টার নিষিদ্ধের পাশাপাশি যানবাহন, হেলিকপ্টার, ড্রোন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসি আচরণবিধিমালায় একাধিক সংশোধন এনেছে। নতুন বিধি অনুযায়ী, কোনো প্রার্থী বা রাজনৈতিক দল প্রচারণায় পোস্টার ব্যবহার করতে পারবে না। লিফলেট, ব্যানার বা ফেস্টুনে প্রার্থী ও দলীয় প্রধান ছাড়া অন্য কারও ছবি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এমনকি প্রচারণায় হেলিকপ্টার ব্যবহারের সুযোগও সীমিত করা হয়েছে।

সংশোধিত বিধিমালায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে কেবল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই হেলিকপ্টার ব্যবহার করতে পারবেন। অন্য কোনো নেতা বা প্রার্থী এই সুবিধা পাবেন না। পাশাপাশি প্রথমবারের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে প্রচারণার জন্য আলাদা ধারা যুক্ত করা হয়েছে।

এবারের নির্বাচনে নতুন আরেকটি সংযোজন হলো— নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে টেলিভিশন সংলাপ আয়োজন। ভোটারদের সামনে প্রার্থীদের বক্তব্য তুলে ধরতেই এই আয়োজন বলে জানিয়েছে ইসি। এসব বিধান আগেই চূড়ান্ত করা হলেও তফসিল ঘোষণার পর থেকে কমিশন কঠোরভাবে তা বাস্তবায়ন শুরু করেছে।

ইতোমধ্যে আচরণবিধি ভাঙার অভিযোগে কয়েকজন প্রার্থীকে জরিমানাও করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশনের ভাষ্য, এবার আর শিথিলতা নয়— আইনের প্রয়োগ হবে কঠোর।

গত বছরের নভেম্বরে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসরণ করে ‘রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণবিধিমালা’ চূড়ান্ত করে নির্বাচন কমিশন। এর মধ্যেই সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্ত ছিল পোস্টার নিষিদ্ধ করা।

নির্বাচনী প্রচারণায় পোস্টার দীর্ঘদিন ধরেই বাংলাদেশের রাজনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। যদিও অতীতে পোস্টার ঘিরে সহিংসতা ও পরিবেশ দূষণের অভিযোগ উঠেছে, তবু কখনোই তা পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়নি। এবারই প্রথম সেই ঐতিহ্যের ইতি টানছে ইসি।

১০ নভেম্বর আচরণবিধি সংশোধন করে গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে পোস্টার নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হয়। নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ জানান, একটি রাজনৈতিক দল ছাড়া বাকি সবাই এই সিদ্ধান্তে সম্মতি জানিয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন আগেই পোস্টার নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছিল। পাশাপাশি পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের আপত্তিও ছিল। পোস্টার লেমিনেটিং করে লাগানোর ফলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় এবং কালি কৃষিজমির ক্ষতি করে— এসব বিবেচনায় সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।

যদিও পোস্টার নিষিদ্ধ, তবে প্রার্থীরা লিফলেট, হ্যান্ডবিল ও ফেস্টুন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে সেগুলো কোনো দেয়াল, গাছ, বিদ্যুৎ খুঁটি, সরকারি স্থাপনা বা যানবাহনে লাগানো যাবে না।

এ ছাড়া ভোটের প্রচারণায় ড্রোন ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। বিদেশে বসে প্রচারণার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২০টি বিলবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন।

যানবাহন ব্যবহার নিয়েও এসেছে কড়াকড়ি। কোনো প্রার্থী বাস, ট্রাক, মোটরসাইকেল বা অন্য কোনো যান্ত্রিক বাহন নিয়ে মিছিল বা শোডাউন করতে পারবেন না। এমনকি মশাল মিছিলও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর এসব বিধি লঙ্ঘনের উদাহরণও মিলেছে। চট্টগ্রামের একটি আসনে বিশাল গাড়িবহর নিয়ে শোডাউন করায় বিএনপির এক প্রার্থীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ইসি বলছে, আচরণবিধি ভাঙলে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড, দেড় লাখ টাকা জরিমানা এমনকি প্রার্থিতা বাতিলের বিধানও রয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ক্ষেত্রেও প্রথমবারের মতো বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রার্থী ও দলকে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জমা দিতে হবে।

ভোটের প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে বিভ্রান্তিকর বা ভুয়া কনটেন্ট তৈরি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ঘৃণাত্মক বক্তব্য, মিথ্যা তথ্য, চরিত্রহনন কিংবা ধর্মীয় ও জাতিগত অনুভূতি উসকে দেওয়ার মতো কোনো কনটেন্ট প্রচার করা যাবে না।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে