ঢাকা, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

পুবালী ব্যাংকে ক্ষমতার লড়াই ও অনিয়মের মহোৎসব

২০২৫ ডিসেম্বর ২১ ১৭:০১:২১
পুবালী ব্যাংকে ক্ষমতার লড়াই ও অনিয়মের মহোৎসব

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিচালনা পর্ষদে দীর্ঘদিনের ক্ষমতার লড়াই, আদালতের রায় ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা উপেক্ষা করে অপরিবর্তিত পর্ষদ কাঠামো এবং বৈদেশিক মুদ্রা ও ঋণ বিতরণে একের পর এক অনিয়ম শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত দেশের অন্যতম প্রাচীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পুবালী ব্যাংকের সুশাসনকে গভীর প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। বিভিন্ন নথিনির্ভর তদন্তে গুরুতর অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়া গেলেও কার্যকর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অভাব এবং পর্ষদ পর্যায়ে ক্ষমতার ভারসাম্যের ঘাটতি ব্যাংকটিকে একটি কাঠামোগত সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস ডিপার্টমেন্ট (এফআইসিএসডি)-এর একটি আংশিক তদন্তে দেখা গেছে, ব্যাংকটির বেশ কিছু শাখা আমদানি ঋণপত্র (এলসি) নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নির্ধারিত বাজার দরের চেয়ে অনেক বেশি টাকা আদায় করেছে। নিয়ম অনুযায়ী এই অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকের নিজস্ব আয়ের খাতে জমা হওয়ার কথা থাকলেও, ব্যাংকিং আইন ও বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা লঙ্ঘন করে সেই অর্থ সরাসরি অন্য নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়েছে।

তদন্তে উঠে আসা একটি সুনির্দিষ্ট ঘটনায় দেখা যায়, ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংকটির বরিশাল বাজার রোড শাখা থেকে ‘মোহাম্মাদী ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেড’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান ২ লাখ ২৩ হাজার ডলারের একটি আমদানি এলসি খোলে। এলসি দায় নিষ্পত্তির সময় ব্যাংকটি ওই গ্রাহকের কাছ থেকে ডলারের প্রচলিত বাজার দরের চেয়ে প্রতি ডলারে প্রায় ৬.৫ টাকা বেশি আদায় করে।

এর ফলে সংগৃহীত প্রায় ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংকের কোষাগারে জমা না করে ওই দিনই মতিঝিল করপোরেট শাখার গ্রাহক ‘রিফাত গার্মেন্টস লিমিটেড’-এর অ্যাকাউন্টে জমা করে দেওয়া হয়। উল্লেখ্য যে, রিফাত গার্মেন্টস হলো হা-মীম গ্রুপের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এবং এই গ্রুপের প্রতিনিধি আবদুর রাজ্জাক মন্ডল পুবালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের একজন পরিচালক হিসেবে দায়িত্বরত আছেন।

জালিয়াতির এই একই চিত্র পাওয়া গেছে ব্যাংকটির সিলেট শাখাতেও, যেখানে ‘মেসার্স হাসান অ্যান্ড ব্রাদার্স’-এর চারটি আমদানি এলসির বিপরীতে আদায় করা অতিরিক্ত ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা একইভাবে রিফাত গার্মেন্টসের চলতি অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে।

এফআইসিএসডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তদন্তে বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতি ডলারে ৬.৫ থেকে ৮ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ আদায় করার প্রমাণ মিলেছে। দীর্ঘস্থায়ী এই অনিয়ম ও শীর্ষ পর্যায়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) তদন্ত শুরু করেছে। মূলত পর্ষদ পর্যায়ে দুর্বল তদারকি এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনার যোগসাজশেই দেশের এই ঐতিহ্যবাহী বেসরকারি ব্যাংকটি আজ গভীর সংকটে নিমজ্জিত।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে