ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

এবার বিলুপ্তির পথে শেয়ারবাজারের আট আর্থিক প্রতিষ্ঠান

২০২৫ নভেম্বর ২৭ ০৭:২৫:০০
এবার বিলুপ্তির পথে শেয়ারবাজারের আট আর্থিক প্রতিষ্ঠান

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুর্বল আর্থিক অবস্থার কারণে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বিলুপ্তির সিদ্ধান্ত আসায় এবার বাজারে নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে, সম্প্রতি পাঁচটি দুর্বল শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত হওয়ার ঘোষণার পর তাদের শেয়ারহোল্ডাররা তাদের সম্পূর্ণ বিনিয়োগ হারাবেন বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছিল, যার ফলে আনুমানিক ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকার 'কাগজে থাকা সম্পদ' রাতারাতি বিলীন হয়ে যায়। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগেই, শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা এখন আরও আটটি তালিকাভুক্ত এনবিএফআই বিলুপ্তির আশঙ্কায় প্রায় সবকিছু হারানোর উদ্বেগে ভুগছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর গত আগস্ট মাসে ঘোষণা করেন, মোট নয়টি এনবিএফআই-এর আর্থিক অবস্থা পুনরুদ্ধারের অযোগ্য পর্যায়ে চলে যাওয়ায় সেগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হবে। এদের মধ্যে ফাস ফিন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফিন্যান্স, জিএসপি ফিন্যান্স, প্রাইম ফিন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সহ মোট আটটি প্রতিষ্ঠান শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত।

এই আটটি এনবিএফআই-এর সম্মিলিত পরিশোধিত মূলধন প্রায় ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ক্ষুদ্র ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে প্রায় ৯৪৭ কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ার। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি এই সংস্থাগুলো বাস্তবে বিলুপ্তির পথে যায়, তবে বিনিয়োগকারীরা তাদের এই বিপুল অংকের অর্থ সম্পূর্ণরূপে হারাতে পারেন। কারণ, বিলুপ্তির ক্ষেত্রে শেয়ারের বাজার মূল্য (যা বর্তমানে ১০০ কোটি টাকার বেশি) সামান্যই বিবেচ্য হয়। পাওনা পরিশোধ করা হয় কেবল কোম্পানির প্রকৃত সম্পদ বিক্রি করে যা পাওয়া যায়, তার ওপর ভিত্তি করে।

বিনিয়োগকারীদের কিছুই না পাওয়ার প্রধান কারণ হলো—এই এনবিএফআইগুলোর দায় তাদের মোট সম্পদের চেয়ে অনেক বেশি। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) বা নিট সম্পদ মূল্য চরমভাবে নেতিবাচক। অর্থাৎ, যখন কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে ঋণ ও দায় পরিশোধ করা হবে, তখন সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না, কারণ বিলুপ্তির ক্ষেত্রে পাওনাদারদের তালিকায় শেয়ারহোল্ডারদের অবস্থান সবার নিচে।

এ বিষয়ে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পরিস্থিতি বহু বছর ধরে তৈরি হয়েছে। ব্যাংক ও এনবিএফআইগুলো থেকে অর্থ পাচার হওয়ায় তাদের খেলাপি ঋণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে পুনর্গঠনের আর কোনো সুযোগ নেই। তারা বলছেন, নিরীক্ষক, ক্রেডিট রেটিং সংস্থা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা—সকলকে এই পরিস্থিতির জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত বছরের শেষে এনবিএফআই খাতে মোট ২৫,০৮৯ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে এই আটটি প্রতিষ্ঠানই ৫২ শতাংশের জন্য দায়ী ছিল।

এদিকে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)-এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, যদিও এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সরকার তাদের সঙ্গে আলোচনা করে না, তবুও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় তারা বিলুপ্তি প্রক্রিয়া শুরু হলে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তবে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট পথ তারা দেখাতে পারেননি।

তহা/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে