ঢাকা, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

আইসিবির সহায়তা আবেদন নাকচ, বাড়ছে আরও অনিশ্চয়তা

২০২৫ নভেম্বর ২১ ২০:৪৭:০৯
আইসিবির সহায়তা আবেদন নাকচ, বাড়ছে আরও অনিশ্চয়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ সংস্থা ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) এখন থেকে নতুন করে আর কোনো ঋণপরিশোধ তহবিল পাবে না। অর্থ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। এই কঠোর সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘদিন ধরে লোকসানের বোঝা টানা সংস্থাটির জন্য পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো আরও কঠিন হয়ে পড়ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তটি এসেছে আইসিবি’র বিগত কয়েক বছরের আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার পর, বিশেষ করে ২০২৪–২৫ অর্থবছরে সংস্থাটির রেকর্ড ১২ হাজার কোটি টাকার লোকসান প্রকাশ হওয়ার পরে। গত বছরের ডিসেম্বরে সরকার আইসিবিকে যে ৩ হাজার কোটি টাকা সহায়তা দিয়েছিল, তার দুই-তৃতীয়াংশ ঋণ পরিশোধে ব্যবহৃত হলেও বাকি অংশ বিনিয়োগ খাতে গিয়েছিল।

আইসিবি তার আর্থিক পুনরুদ্ধারের 'শেষ ভরসা' হিসেবে আরও ১৩ হাজার কোটি টাকার নতুন তহবিল চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় চূড়ান্তভাবে জানিয়ে দিয়েছে—নতুন করে আর কোনো অর্থ দেওয়া হবে না; বরং শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করে আইসিবিকে নিজেই আয়ের পথ খুঁজে নিতে হবে।

আইসিবি'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিরঞ্জন চন্দ্র দেবনাথ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, "অর্থ মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত স্পষ্ট—আর কোনো তহবিল দেওয়া হবে না। এর আগে ৩০০০ কোটি টাকা আসার পর আমরা প্রতিটি ঋণদাতার কাছে দায় মেটাতে পেরেছিলাম। তবে নতুন ঋণ সহায়তা বন্ধ হওয়ায় আমাদের সামনে পথ আরও কঠিন হয়ে গেল।"

তিনি জানান, আইসিবি ইতোমধ্যে প্রতি মাসে ৯০০ কোটি টাকা সুদ পরিশোধ করছে, যা আগের সময়ের তুলনায় দ্বিগুণ। শেয়ারবাজার থেকে যে অর্থ পাওয়া যায়, তা দিয়ে এই বিশাল চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারি তহবিল না পাওয়ায় আইসিবি এখন নিজেদের সঞ্চিত আয়, বাজার থেকে প্রাপ্ত ডিভিডেন্ড এবং পুরাতন বিনিয়োগ থেকে পাওয়া রিটার্ন দিয়েই ঋণের বোঝা টানবে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে আইসিবি’র নতুন তহবিল পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

তবে আইসিবি কর্তৃপক্ষের দাবি—পূর্ববর্তী বোর্ডের অব্যবস্থাপনাই এই বিপর্যয়ের মূল কারণ। পুরোনো ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত কোম্পানিতে বিনিয়োগ এবং অপ্রয়োজনীয় সাবসিডিয়ারি খরচে প্রতিষ্ঠানটিকে লোকসানে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। নতুন বোর্ড এখন নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে কোনো অর্থ আর অপব্যবহার হবে না।

আইসিবি’র বড় সমস্যা হলো ব্যক্তিখাত বা সরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় অত্যন্ত কম সুদের হারে সরকারের কাছ থেকে নেওয়া বিপুল পরিমাণ ঋণ। অন্যদিকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে নেওয়া উচ্চ সুদের ঋণের বোঝাও রয়েছে। এতে সুদ পরিশোধেই আইসিবি’র বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, নতুন তহবিল না পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। তাদের পরামর্শ, আইসিবিকে এখন বাজারমুখী বিনিয়োগ, ব্যয় সংকোচন এবং সাবসিডিয়ারিগুলোর কার্যক্রম পুনর্গঠনের মাধ্যমে টিকে থাকতে হবে।

আইসিবি’র এমডি বলেন, "আমরা চেষ্টা করবো নিজস্ব সক্ষমতা দিয়ে পুনরুদ্ধারের পথ খুঁজতে। সরকার দেখবে আমরা কীভাবে এগোই। এরপরই পরবর্তী সিদ্ধান্ত আসবে।"

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে