ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

পাঁচ ব্যাংক লুটপাটে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

২০২৫ নভেম্বর ১৭ ০৬:৩৬:০৭
পাঁচ ব্যাংক লুটপাটে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা গ্রহণের নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: একীভূত হয়ে নতুন ব্যাংক গঠনের পথে থাকা ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল), এক্সিম ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক লুটপাটে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে সরকার। এ বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংককে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠিয়েছে।

সরকারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—পাঁচ ব্যাংকের মালিক, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি খেলাপি ঋণ ও বিনিয়োগ দ্রুত পুনরুদ্ধারের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই পাঁচটি সমস্যাগ্রস্ত ব্যাংক একীভূত হয়ে একটি নতুন ব্যাংকে রূপ নেবে। নতুন ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা—যার মধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকা দেবে সরকার, আর অমানতকারীদের ১৫ হাজার কোটি টাকা রূপান্তর করা হবে শেয়ারে।

এক্সিম ব্যাংকের দীর্ঘদিনের অনিয়ম তুলে ধরে বলা হয়, প্রতিষ্ঠানটি নিয়ন্ত্রণ করতেন ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার। তার স্ত্রী নাসরিন ইসলাম ও ঘনিষ্ঠ পরিচালকরা দীর্ঘদিন বোর্ডে ছিলেন। তদারকির সময় তিন এমডি—ফরীদ উদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া ও মোহাম্মদ ফিরোজ হোসেন—ব্যাংকের সংকটময় অবস্থায় নেতৃত্বে ছিলেন। বর্তমানে নজরুল ইসলাম মজুমদার ও ফিরোজ হোসেন কারাগারে রয়েছেন।

ইউনিয়ন ব্যাংক পরিচালনায় এস আলম গ্রুপের প্রভাব ছিল উল্লেখযোগ্য। প্রতিষ্ঠানের প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন গ্রুপের ছেলে আহসানুল আলম; পরে দায়িত্ব নেন অধ্যাপক মো. সেলিম উদ্দিন। বোর্ডে ছিলেন সাবেক সামরিক কর্মকর্তা, ব্যবসায়ীসহ গ্রুপের ঘনিষ্ঠজনরা। সাবেক এমডি এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী সরকার পরিবর্তনের পর বিদেশে পালিয়ে যান। চেয়ারম্যান ছিলেন গ্রুপের প্রধান মোহাম্মদ সাইফুল আলম; তার স্ত্রী ফারজানা পারভীনসহ পরিবারের আরও কয়েকজন সদস্য বোর্ডে দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘদিন এমডি হিসেবে ছিলেন এ এ এম জাকারিয়া ও সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী। অব্যবস্থাপনা, দুর্বল তদারকি ও ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ ব্যাংকের আর্থিক অবস্থাকে দ্রুত দুর্বল করে দেয়।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকেও একই ধরনের অনিয়মের চিত্র উঠে এসেছে। ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন প্রবাসী নিজাম চৌধুরী। পরিচালনা পর্ষদের বেশিরভাগ সদস্যই ছিলেন এস আলম পরিবারের সদস্য বা ঘনিষ্ঠজন। শুরুতে আলোচিত পিকে হালদার এমডি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন, পরে আসেন হাবিব হাসনাত। অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ন্ত্রিত ঋণ বিতরণ ব্যাংকটিকে অল্প সময়েই গভীর সংকটে ঠেলে দেয়।

২০১৭ সালে এসআইবিএলের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় এস আলম গ্রুপের কাছে। প্রথমে বোর্ডের নেতৃত্বে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আনোয়ারুল আজিম আরিফ। পরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যান হন গ্রুপের জামাতা বেলাল আহমেদ। বোর্ডে পরিবর্তন আনলেও অনিয়ম নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

সরকার মনে করছে, বছরের পর বছর গড়ে ওঠা অব্যবস্থাপনা রোধ করতে এবং নতুন ব্যাংককে ঝুঁকিমুক্ত করতে দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়াই এখন জরুরি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কার্যকর তদন্ত ও দায় নির্ধারণ ছাড়া নতুন ব্যাংকের জন্য কাঙ্ক্ষিত স্থিতিশীলতা অর্জন কঠিন হবে।

সালাউদ্দিন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে