ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
Sharenews24

জাতীয় নির্বাচন: তারেক-ইউনূস বৈঠকের পর জামায়াত ও নূরের ইউটার্ন

২০২৫ জুন ১৮ ০৭:২৫:৩৮
জাতীয় নির্বাচন: তারেক-ইউনূস বৈঠকের পর জামায়াত ও নূরের ইউটার্ন

নিজস্ব প্রতিবেদক: লন্ডনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর জামায়াত ইসলামী ও গণঅধিকার পরিষদ নির্বাচন ইস্যুতে ইউটার্ন নিয়েছে। যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় ড. ইউনূসের নিরপেক্ষতা ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে দল দুটি মনে করছে।

জামায়াত মনে করছে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে লন্ডনে দেওয়া যৌথ বিবৃতিতে তাদের 'অবজ্ঞা' করা হয়েছে এবং এই সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়েও তাদের সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরও তার নির্বাচনি এলাকায় (পটুয়াখালীর গলাচিপায়) বিএনপির নেতাদের হাতে হামলার শিকার হয়ে অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। সোমবার রাতে তিনি বলেছেন, বিএনপির সঙ্গে সহাবস্থানে থেকে নির্বাচন সম্পর্কে আগে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তার জন্য ঢাকায় ফিরে ড. ইউনূসের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন। তিনি বর্তমান নির্বাচনের পরিবেশ নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

এই দুই দলের পাশাপাশি জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) এর 'সংস্কার-বিচারের পর নির্বাচন' অবস্থানও রাজনীতির মাঠে নতুন সংকট তৈরি করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, মতানৈক্য কিছুটা থাকবেই, তবে সরকার আন্তরিক ও রাজনৈতিক দলগুলো সহনশীল হলে এসব সংকট কেটে যাবে।

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে সরকার ও বিএনপিসহ মিত্র দলগুলোর মধ্যে দূরত্ব নিরসনে সম্প্রতি লন্ডনে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন তারেক রহমান। দীর্ঘ দুই ঘণ্টার এই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ঐকমত্যে আসেন দুই পক্ষ। এরপর ড. ইউনূস ও তারেক রহমান যৌথ বিবৃতিতে জানান, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরুর আগের সপ্তাহে নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে, তবে এর আগে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন জরুরি।

এই বিবৃতি দেশের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল স্বাগত জানালেও, জামায়াতে ইসলামী এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল এনসিপি ক্ষোভ প্রকাশ করে। এনসিপির নেতারা বলছেন, নির্বাচন নিয়ে একটি দল বা এক ব্যক্তির সঙ্গে সমঝোতা করা হয়েছে, যা গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে প্রতারণার শামিল।

একই সুরে কথা বলছে জামায়াতে ইসলামীও। তারা জানিয়েছে, সরকার প্রধান হিসেবে কোনো একটি দলের সঙ্গে যৌথ প্রেস ব্রিফিং নৈতিকভাবে যথার্থ নয় এবং এতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জামায়াতসহ বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও প্রধান উপদেষ্টার নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

যৌথ বিবৃতি নিয়ে এই মান-অভিমানের পর মঙ্গলবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় যোগ দেয়নি জামায়াত। তবে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় অংশ নিয়েছে। ঐকমত্য কমিশনের সভায় যোগ না দেওয়ার কারণ হিসেবে জামায়াত বলেছে, প্রধান উপদেষ্টার লন্ডন সফরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণার মাধ্যমে জামায়াতকে 'ইগনোর' করা হয়েছে। এর প্রতিবাদেই তারা বৈঠকে যোগ দেয়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আশা প্রকাশ করে বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আজ (বুধবার) ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় অংশ নেবে।

অন্যদিকে, ডিসেম্বরে নির্বাচনের দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে বিএনপির সঙ্গে সরব থাকলেও, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের ওপর বিএনপির হামলার পর দলটির অবস্থান পাল্টেছে। নুরুল হক নূর নিজেই নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এবং বলেছেন, "একমাত্র বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল নির্বাচন নিয়ে শক্ত অবস্থানে নেই... তাই বিএনপির সঙ্গে সহাবস্থানে থেকে নির্বাচন সম্পর্কে আগে যে বক্তব্য দিয়েছিলাম তার জন্য ঢাকায় ফিরে ইউনূস স্যারের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলতে হবে, যখন নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি হবে তখন রোডম্যাপ ঘোষণা করবেন।" মঙ্গলবারও ঐকমত্য কমিশনের সভা শেষে তিনি একই সুরে কথা বলেছেন এবং 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরির ওপর জোর দিয়েছেন। গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফও জানিয়েছেন, এটি তাদের দলীয় বক্তব্য এবং তারা মনে করছেন নির্বাচনের আগে 'লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড' তৈরি করা জরুরি।

এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরফিুল ইসলাম আদীব বলেছেন, একটি দল বা ব্যক্তির সাথে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করার চেষ্টা করা অন্য সব দল ও শহিদ পরিবারের প্রতি অবমূল্যায়ন। তিনি সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের সময় ঠিক করার প্রয়োজনীতার ওপর জোর দিয়েছেন।

সরকার ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রমে পক্ষপাতদুষ্টের অভিযোগ প্রসঙ্গে শফিকুল আলম বলেছেন, "আমরা সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছি। গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া প্রতিটি রাজনৈতিক দলের গুরুত্ব আমাদের কাছে সমান।"

সার্বিক বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধান স্টেক হোল্ডাররা একমত হয়েছেন। জামায়াতের সঙ্গে আলোচনা না করে যৌথ বিবৃতি দেওয়ায় তারা একটু অভিমান করেছে। তিনি এটিকে রাজনৈতিক 'ইগো' বলে অভিহিত করে বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা উদ্যোগ নিলেই এসব সংকট কেটে যাবে।

মারুফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে