ঢাকা, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
Sharenews24

শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যত মাস্টারমাইন্ড

২০২৫ মে ০৫ ১০:৩৩:০০
শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে যত মাস্টারমাইন্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০১৩ সালের ৫ ও ৬ মে, ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে ঘটে যায় একটি ভয়াবহ রাত, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম আলোচিত এবং বিভীষিকাময় ঘটনা হিসেবে বিবেচিত। ইসলামী সংগঠন হেফাজতে ইসলামের ডাকা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশ দমন করতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পর্যন্ত সমন্বিতভাবে একটি “অপারেশন সিকিউর শাপলা” চালানো হয়। সেই রাতে প্রাণ হারান বহু নিরস্ত্র আলেম, যার প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে আজও বিতর্ক রয়েছে।

হেফাজতে ইসলাম নারী উন্নয়ন নীতি ও ব্লগারদের অবমাননাকর লেখার বিরুদ্ধে “ব্লগার বিরোধী আন্দোলন” এর অংশ হিসেবে ১৩ দফা দাবিতে সমাবেশ আহ্বান করে। সমাবেশটি গণজাগরণ মঞ্চ ও সরকারের সমর্থকদের কাছে হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।

৫ মে সারাদিন চলা সমাবেশ শেষে রাতের আঁধারে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে, পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও সশস্ত্র ক্যাডাররা অভিযান চালায়। বিপুল সংখ্যক আলেম-ওলামা, ছাত্র ও সমর্থক আহত ও নিহত হন।

সঠিক সংখ্যা আজও অজানা, তবে মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ জানিয়েছে, অন্তত ৬১ জন নিহত হন। এর ফলশ্রুতিতে ‘অধিকার’ এবং এর সম্পাদক আদিলুর রহমান শুভ্রও হয়রানির শিকার হন, জেল খাটেন।

২০২৫ সালের মে মাসে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর এই ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হয়। হেফাজতের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি পৃথক অভিযোগ দাখিল করা হয়, যেখানে বলা হয় "৫ মে রাতে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে নিরস্ত্র মানুষের ওপর পরিকল্পিতভাবে গুলি চালিয়ে গণহত্যা চালানো হয়। এই হত্যাকাণ্ডের মূল নির্দেশদাতা ছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।"

মামলায় অভিযুক্ত ৯ জনের মধ্যে ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তারা হলেন:

শেখ হাসিনা – সাবেক প্রধানমন্ত্রী

মহীউদ্দীন খান আলমগীর – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

ইমরান এইচ সরকার – গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র

হাসান মাহমুদ খন্দকার – সাবেক আইজিপি

বেনজীর আহমেদ – সাবেক আইজিপি

ইতোমধ্যে গ্রেফতার হওয়া ৪ জন হলেন:

শামসুল হক টুকু – সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

একেএম শহিদুল হক – সাবেক আইজিপি

মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান – র‌্যাবের সাবেক কর্মকর্তা

মোল্যা নজরুল ইসলাম – সাবেক ডিআইজি

মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য হয়েছে: ১২ মে ২০২৫।

২০২৪ সালের ১৮ আগস্ট, ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বাংলাদেশ পিপলস পার্টির (বিপিপি) চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী একটি মামলা করেন, যেখানে শেখ হাসিনা সহ মোট ৩৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। এই মামলাটিও এখন তদন্তাধীন।

এ মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন:

আসাদুজ্জামান খান কামাল – সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সালমান এফ রহমান – প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা

তারেক সিদ্দিকী – প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা

ফজলে নূর তাপস – ঢাকা দক্ষিণের মেয়র

রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু – সাবেক সংসদ সদস্য

মাহবুবুল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক – আওয়ামী লীগের যুগ্ম মহাসচিব

র‌্যাব ও পুলিশ বাহিনীর কয়েকজন সাবেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা

হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন “এই গণহত্যা শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দেশে সংঘটিত হয়েছে। আমরা ৫০ জনের বেশি অপরাধীর তালিকা দিয়েছি। তদন্তে আরও নাম উঠে আসবে। এই গণহত্যার বিচার চাই।”

এই মামলাগুলো বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হতে পারে। রাষ্ট্রীয় নির্দেশে নাগরিক হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়।

এই মামলাগুলোর নিষ্পত্তির মাধ্যমে হয়তো অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলবে—কে বা কারা দায়ী ছিলেন শাপলা চত্বরে সেই বিভীষিকাময় রাতের জন্য?

মুয়াজ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে