ঢাকা, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারের ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ: সমাধান নাকি জটিলতা?

২০২৫ মে ০৫ ০৬:০৩:১৬
শেয়ারবাজারের ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূতকরণ: সমাধান নাকি জটিলতা?

নিজস্ব প্রতিবেদক: সম্প্রতি বাংলাদেশের ইসলামী ব্যাংকিং খাতে একটি সম্ভাব্য নীতিগত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের একটি মন্তব্য অনুযায়ী, দেশে কার্যরত ১০টি ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করে দুটি বৃহৎ ব্যাংকে রূপান্তরের একটি পরিকল্পনা সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এই প্রস্তাবটি দেশের আর্থিক খাতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।

বর্তমানে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত ১০টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। এদের সম্মিলিত আমানত প্রায় ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা এবং মোট বিনিয়োগ ৪ লাখ ৮৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। যদিও খাতটি সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, কিছু ব্যাংকের সুশাসনে ঘাটতি এবং প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি ব্যাংকের কার্যক্রমে অস্থিরতা দেখা গেছে, যা সমাধানের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে।

এই প্রেক্ষাপটে, সরকার ‘ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫’ অনুমোদন করেছে। এই অধ্যাদেশটি আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে বন্ধ বা একীভূত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রয়োজনীয় ক্ষমতা প্রদান করবে।

প্রস্তাবিত একীভূতকরণ নিয়ে বিশ্লেষকদের মধ্যে ভিন্ন মতামত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, একসঙ্গে ১০টি ব্যাংক একীভূত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মুস্তাফা কে মুজেরি সুশাসন এবং আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির উপর অধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন দুর্বল ব্যাংকগুলোকে প্রথমে শক্তিশালী করার পর একীভূতকরণের সম্ভাবনার কথা বলেছেন।

বর্তমানে অধিকাংশ ইসলামী ব্যাংক আন্তর্জাতিক নিরীক্ষা সংস্থার মাধ্যমে সম্পদের মান যাচাইয়ের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এই পর্যালোচনা ফলাফল একীভূতকরণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ড. আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি বলেন, "দেশে একাধিক ছোট ও দুর্বল ইসলামী ব্যাংক রয়েছে, যাদের একীভূত করে দুটি শক্তিশালী ব্যাংক গঠন করা হবে। এছাড়াও শরীয়াহভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের জন্য পৃথক আইন ও তদারকি কাঠামো গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে।"

বাংলাদেশের আর্থিক খাত দীর্ঘদিন ধরে কিছু মৌলিক সমস্যার সম্মুখীন। তারল্য সংকট এবং ঋণখেলাপি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, একীভূতকরণ একটি বিকল্প হতে পারে, তবে ব্যাংকগুলোকে এই পরিবর্তনের জন্য পর্যাপ্ত সময় এবং প্রস্তুতি দেওয়া প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞদের মতে, একীভূতকরণ যদি সুশাসন এবং আর্থিক স্বচ্ছতার ভিত্তিতে বাস্তবায়িত হয়, তবে তা খাতটির স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি করতে পারে। তবে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিলে এর বিপরীত ফলও হতে পারে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানিয়েছেন যে, ‘ব্যাংক রেজুলেশন অধ্যাদেশ, ২০২৫’ জারির পর এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে আর্থিক খাত পুনর্গঠনের একটি নতুন পর্যায় শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে