ঢাকা, শুক্রবার, ৩ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

দুপুরের পর স্বাক্ষর করেন না প্রশাসক, ভোগান্তিতে ইউপিবাসী

২০২৪ অক্টোবর ৩০ ১১:৩৮:২৪
দুপুরের পর স্বাক্ষর করেন না প্রশাসক, ভোগান্তিতে ইউপিবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক : সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তানভীর আহমদ। সরকার পরির্তনের পর দেশের অনেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আত্মগোপেনে গেলে সরকার উপজেলা বিভিন্ন কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ইউপি প্রশাসকের দায়িত্ব দেন। এমনই একজন মো: তানভীর আহমদ। যিনি দুপুর ২টার পর ইউপির কোনো সনদে স্বাক্ষর করেন না।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন হলে বর্তমান সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিউল আলম জুয়েল আত্মগোপন চলে যান। পরে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) প্রশাসক নিয়োগ দেন মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক।

ইউনিয়ন পরিষদের সকল ধরনের সনদে স্বাক্ষর নিতে গেলে জনগণকে উপজেলা পরিষদের সহকারী কমিশনারের (ভূমি) দপ্তরে গিয়ে স্বাক্ষর আনতে হয়। আর এতেই বিপত্তিতে পড়তে হচ্ছে দিঘুলিয়া ইউনিয়নের প্রায় ২৫ হাজার নাগরিকের।

অভিযোগ উঠেছে, প্রশাসক মোঃ তানভীর আহমদের কাছে বিভিন্ন সনদে স্বাক্ষর নিতেসাটুরিয়া উপজেলায় যেতে হচ্ছে। প্রত্যান্ত অঞ্চল থেকে উপজেলা অফিসে যেতে একেক জন নাগরিকের ৩ শত থেকে ৫ শত টাকা খরচ হচ্ছে। তবে উপজেলাতে গেলেও এই প্রশাসকের সাথে দেখা করার অনুমতি মিলছে না। এছাড়া প্রশাসকের দায়িত্ব নেওয়ার পর মাত্র একদিন অফিস করেছেন বলে অভিযোগ ইউপি সদস্যদের।

দিঘুলিয়া দেলুয়া গ্রামের মো. মোসা ইব্রাহিম বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরকার ক্ষমতা পরিবর্তন হলেও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ তানভীর আহমদ নিজেকে এখনো লর্ড মনে করেন। আমার জন্ম সনদ প্রথমে আবেদন করেছি। সেখানে স্বাক্ষর আনতে দিঘুলিয়া থেকে প্রশাসকের স্বাক্ষরের জন্য গিয়েছি সাটুরিয়া উপজেলায়। এরপর পুনরায় পরিষদে গিয়ে সনদ প্রিন্ট করেছি। সচিবের স্বাক্ষর নিয়ে আবার ঘুরতে হচেছ প্রশাসকের কার্যালয়ে। তবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ তানভীর আহমদ আবার দুপুর ২টার পরে কোনো সনদে স্বাক্ষর দেন না।

রোববার জেলার সাটুরিয়া উপজেলার দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, নাগরিক সনদ পেতে ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জটলা করছিল কয়েকজন বেকার যুবক। তারা জানায়, আগামী ১০ নভেম্বর মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনে পুলিশ সদস্য নেওয়ার মাঠপর্যায়ের পরীক্ষা। পরিষদের বারান্দায় একটি সনদপত্রের বই রাখা আছে। স্থানীয় বেকার যুবক আকাশ হোসেন, জাকির হোসেন ও আলামিন নিজেরাই লিখে নিচ্ছেন সনদ। ওই সনদ নিয়ে ইউপি সদস্যের স্বাক্ষর করে নিয়ে যেতে হবে প্রশাসকের কাছে।

যুবকরা অভিযোগ করে বলেন, দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাটুরিয়া উপজেলা দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসকের কার্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার। প্রতিদিন আসা যাওয়া করতে খরচ হচ্ছে দুই থেকে তিনশত টাকা। একটি স্বাক্ষরের জন্য ঘুরতে হচ্ছে কয়েকদিন। বেলা ১১টার পর তিনি তার সাটুরিয়া অফিসে বসেন। বসেই ভূমি অফিসের অফিসিয়াল নথিপত্রের কাজ করেন। আর আমাদের ভূমি অফিসের গোল ঘরে বসিয়ে রাখেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। বেলা ২টা বাজলেই তিনি আর স্বাক্ষর করবে না বলে অফিস থেকে পিয়ন জানিয়ে দেয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকার পর খালি হাতে ফিরে আসতে হয়। এভাবে এলাকার সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছে।

দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্যদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ দেওয়ার পর টিসিবি, ভিজিডি চাল বিতরণের সময় মোট ৩ দিন অফিস করেছেন। এরপর প্রশাসক পরিষদে বসেননি। ফলে ইউনিয়নের নাগরিকদের জম্ম নিবন্ধন, চেয়ারম্যানের সনদ, নাগরিক সনদপত্র, বিভিন্ন ভাতার কার্ড ও কৃষকদের কৃষি কার্ড বিতরণ স্বাক্ষর করতে নাগরিকদের যেতে হচ্ছে প্রশাসকের কার্যালয়ে।

ইউপি সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, বেলা ২টার পর স্বাক্ষর না করায় নাগরিকরা সেবা পেতে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে।

দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিসদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. রাশেদ বলেন, আমরা সকল ইউপি সদস্যরা বসে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসককে সপ্তাহে একদিন পরিষদে বসতে বলেছিলাম। কিন্তু তিনি না বসে উপজেলায় তার কার্যালয়ে যেতে বলেছেন। এতে প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নাগরিক সেবা পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছে।

এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও দিঘুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক মো. তানভীর আহমদ বলেন, কোনো নাগরিক হয়রানির শিকার হচ্ছে না। ইউনিয়ন পরিষদে বসেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে নাগরিকের প্রয়োজন তিনি তার প্রয়োজনেই আমার অফিসে আসবেন।

এস/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে