ঢাকা, বুধবার, ২২ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী: রয়টার্সকে জয়

২০২৪ আগস্ট ১০ ০৭:৩০:২৬
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেননি, এখনও বৈধ প্রধানমন্ত্রী: রয়টার্সকে জয়

নিজস্ব প্রতিবেদক : গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান।

তবে তিনি কখনোই পদত্যাগ করেননি। সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনা এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী-এমনটাই দাবি করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

আজ শনিবার (১০ আগস্ট) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন দাবি করেন জয়।

ওয়াশিংটন থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, আমার মা কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। সেই সময় তিনি পাননি।

জয় বলেন, একটি বিবৃতি দিয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেয়ার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু এরপর আন্দোলনকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলো এবং তখন আর সময় ছিল না। এমনকি আমার মা গোছানোর সময়টুকুও পায়নি।

শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই সরকারের মেয়াদ এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

হাসিনাপুত্র বলেন, প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়াকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।

তবে আগামী তিন মাসের ভেতর বাংলাদেশে নির্বাচন দেখতে চান জয়। যেখানে অংশ নেবে আওয়ামী লীগও। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে জানিয়ে জয় বলেন, সেটা না হলে আমরা বিরোধী দল হব। যেটাই হোক ভালো হবে।

এদিকে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের দুদিনের মাথায় ঢাকায় বিএনপির প্রথম সমাবেশ করে। সেই সমাবেশে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা নয়, দেশ হোক শান্তির।

খালেদা জিয়ার বক্তব্য ধরে জয় বলেন, আমি খালেদা জিয়ার ভাষণ শুনে খুশি হয়েছি। বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও গণতান্ত্রিক নির্বাচন করতে আমি বিএনপিকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। তাদের সঙ্গে কাজ করে নিশ্চিত করতে হবে যে, আমাদের শান্তিপূর্ণ গণতন্ত্র রয়েছে যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

জয় বলেন, আমি বিশ্বাস করি, রাজনীতিতে আলাপ-আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা তর্ক করতে পারি এবং সবসময় একটি সমঝোতার পথ খুঁজে বের করতে পারি।

জয় বলেন, আসুন আমরা অতীতকে ভুলে যাই। আমরা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি না করি। ঐক্যবদ্ধ সরকার হোক বা না হোক, আমাদের একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্রদের ওপর গুলি চালানো হয়। এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে জয় রয়টার্সের কাছে দাবি করেন, তার মা শেখ হাসিনা গুলি চালানোর কোনো নির্দেশনা দেননি।

তার মতে, সরকার একটি বড় বিষয়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা ছাত্রদের ওপর গুলি চালানোর পক্ষে ছিলেন না। যে বা যারা গুলি চালিয়েছেন তাদের আইনের আওতায় আনার দাবিও তোলেন তিনি।

জয়ের দাবি, পুলিশ সহিংসতা বন্ধ করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু কিছু পুলিশ অফিসার অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করেছে। তাদের বিচারের আওতায় আনা দরকার।

শেখ হাসিনার রাজনীতি থেকে অবসর নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের হাল ধরবেন কিনা, এই বিষয়ে জানতে চাইলে জয় বলেন, দল যদি আমাকে চায়, আমি অবশ্যই বিবেচনা করব।

আরেক প্রশ্নে জয় বলেন, যখন ইচ্ছা তিনি দেশে ফিরতে পারেন। তিনি কখনও কোনো অন্যায় করেননি জানিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে বলেন, তাহলে আমি দেশে ফিরতে চাইলে কেউ ঠেকাতে যাবে কেন?

জয় বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে যেকোনো বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত। তিনি বলেন, গ্রেফতারের হুমকিতে আমার মা আগে কখনো ভয় পাননি।

তিনি জোর দাবি করেন, আমার মা কোনো অন্যায় করেননি। শুধু তার সরকারের লোকেরা বেআইনি কাজ করেছে, তার মানে এই নয় যে, আমার মা আদেশ দিয়েছেন এবং এজন্য তিনি দায়ী।

দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আওয়ামী লীগকে প্রয়োজন উল্লেখ করে জয় বলেন, আমাদের সাহায্য ছাড়া, আমাদের সমর্থক ছাড়া আপনারা দেশে কখনও স্থিতিশীলতা ফেরাতে পারবেন না।

ওই প্রতিবেদনে রয়টার্স জানিয়েছে, সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন আগস্টের শুরুতে সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত হয়। জেলায় জেলায় সহিংসতায় মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে প্রায় তিনশ মানুষের প্রাণ যায়।

রয়টার্স জানায়, ৫ অগাস্ট আন্দোলনারীদের ঢাকামুখী লংমার্চের মধ্যে শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবর আসে। সেদিন বিকালে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সাংবাদিকদের বলেন, পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পদত্যাগের পর দেশের টানা ১৫ বছরের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে হেলিকপ্টর ও পরে সামরিক বিমানে চড়ে আগরতলা যান। এরপর সেদিন রাতেই দিল্লি পৌঁছান । এখনও তিনি সেখানেই আছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে