ঢাকা, মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

চার সচিবের কবজায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ২৫ কোম্পানি

২০২৪ জুলাই ১৫ ১২:১৩:৪৯
চার সচিবের কবজায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানির ২৫ কোম্পানি

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি কোম্পানিগুলোর কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্ত্রণালয়ের সচিবদের। কিন্তু তাঁরা নিজেরাই এসব কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে বসে আছেন। এতে সরকারের নিয়মিত কাজ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি ছাড় পেয়ে যাচ্ছে কোম্পানিগুলোর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি।

বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ খাতের ১৫টি ও জ্বালানি খাতের ১৬টি কোম্পানি রয়েছে। এরমধ্যে বিদ্যুৎ খাতের আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান হলেন বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান। আর জ্বালানি খাতের সাতটি কোম্পানির চেয়ারম্যান জ্বালানি সচিব মো. নূরুল আলম।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব মো. আমিন উল আহসানের ভাগে আছে ছয়টি কোম্পানির চেয়ারম্যানের পদ। আর পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান সরকারের অতিরিক্ত সচিব জনেন্দ্র নাথ সরকার আছেন চারটি কোম্পানির চেয়ারম্যানের দায়িত্বে।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখাতের কোম্পানিগুলোর কাজের যে ধরন, তাতে এখাতের কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পর্ষদের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদেরই থাকা উচিত। তাঁরা বলছেন, সরকারের সচিব হিসেবে শীর্ষ আমলাদের দায়িত্ব হলো, তাঁদের অধীনে থাকা কোম্পানিগুলোর অনিয়ম ও দুর্নীতি প্রতিরোধ করা, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করা। কিন্তু সচিবেরা যদি কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে বসে থাকেন, তাতে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তা হিসেবে (আপ স্ট্রিম রেগুলেটরি বডি) সংশ্লিষ্ট কোম্পানির অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁদের পক্ষে কঠোর হওয়া সম্ভব নয়।

বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান যে আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান, সেগুলো হলো পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি), নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড (এপিএসসিএল), কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল), বাংলাদেশ-ভারত ফ্রেন্ডশিপ কোম্পানি লিমিটেড (বিআইপিসিএল), বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) ও বাংলাদেশ-চায়না রিনিউয়েবল এনার্জি কোম্পানি লিমিটেড (বিসিআরইসিএল)।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোম্পানির বোর্ড পরিচালকেরা একবার পর্ষদ সভায় হাজির হলেই ১২ হাজার টাকা সম্মানী পান। বছরে একটি কোম্পানি পরিচালকদের নিয়ে ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক হয়। সে হিসাবে বছরে একটি কোম্পানি থেকে বোর্ড সভার বৈঠক বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা সম্মানী পান একজন পরিচালক।

সিনিয়র সচিব মো. হাবিবুর রহমান যেহেতু আটটি কোম্পানির চেয়ারম্যান, সে হিসেবে বছরে প্রায় ২০ লাখ টাকা সম্মানী ভাতা পাওয়ার কথা তাঁর, যা তাঁর মূল বেতনের দ্বিগুণের বেশি। উল্লেখ্য, একজন সিনিয়র সচিবের বছরে মূল বেতন মাসে ৮২ হাজার টাকা, বছরে ৯ লাখ ৮৪ হাজার টাকা।

এদিকে, জ্বালানিসচিব মো. নূরুল আলম সরকারের সাতটি কোম্পানি এবং একটি ইনস্টিটিউটের চেয়ারম্যান। এগুলো হলো বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেড (বাপেক্স), গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেড (জিটিসিএল), বাংলাদেশ গ্যাস ফিল্ডস কোম্পানি লিমিটেড (বিজিএফসিএল), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসি, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড ও মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট।

সরকারের সচিব পদমর্যাদায় মাসে মূল বেতন পান ৭৮ হাজার টাকা এবং বছরে ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা মূল বেতন পান মো. নূরুল আলম। অন্যদিকে ইনস্টিটিউট ও কোম্পানির পরিচালক বোর্ডের মিটিংয়ে পান প্রতিটির জন্য ১২ হাজার টাকা। বছরে ১৫ থেকে ২০টি বৈঠক করে ৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা সম্মানী পান তিনিও।

অন্যদিকে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ও সরকারের সচিব মো. আমিন উল আহসান আছেন পাঁচটি কোম্পানির চেয়ারম্যান পদে। এগুলো হলো যমুনা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, স্ট্যান্ডার্ড এশিয়াটিক অয়েল কোম্পানি লিমিটেড, এলপিজি লিমিটেড, ইস্টার্ন লুব্রিকেন্টস ব্লেন্ডার্স পিএলসি, ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল), জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। মো. আমিন উল আহসান বছরে মূল বেতন পান ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। আর কোম্পানিগুলোর বোর্ড সভায় হাজিরা দিয়ে তার চেয়েও বেশি পান, প্রায় ১২ লাখ টাকা।

অপরদিকে, সরকারের অতিরিক্ত সচিব ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার চারটি সরকারি কোম্পানির চেয়ারম্যান। এগুলো হলো বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার দায়িত্বে থাকা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (আরপিজিসিএল), বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড (বিসিএমসিএল), মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেড ও জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দ্বিতীয় গ্রেডে জনেন্দ্র নাথ সরকার মাসে মূল বেতন পান ৭৬ হাজার ৪৯০ টাকা, বছরে তিনি বেতন পান প্রায় ৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। অন্যদিকে চারটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হিসেবে বোর্ডে হাজিরা দিয়ে বছরে পান প্রায় ৯ লাখ ৬০ হাজার টাকা।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে