ঢাকা, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
Sharenews24

সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করল বিবিএস

২০২৫ ডিসেম্বর ২৪ ১৬:২৮:৪৬
সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করল বিবিএস

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকারি সেবা নিতে গিয়ে সবচেয়ে বেশি দুর্নীতির মুখে পড়ছেন সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) গ্রাহকরা—এমন চিত্রই উঠে এসেছে রাষ্ট্রীয় জরিপে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিচালিত সর্বশেষ ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিআরটিএ থেকে সেবা নিতে গিয়ে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ নাগরিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন।

বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিবিএস অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে জরিপ প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আক্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা বিভাগের সচিব এস এম শাকিল আখতার এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মাসুদ রানা চৌধুরী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিবিএসের মহাপরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিআরটিএতে সেবা নিতে গিয়ে ৬৩.২৯ শতাংশ নাগরিক দুর্নীতির অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন। দুর্নীতির তালিকায় দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (৫৭.৯৬ শতাংশ) এবং পাসপোর্ট অফিস (৫৭.৪৫ শতাংশ)।

জরিপে অংশ নেওয়া নাগরিকদের মধ্যে ৩১.৬৭ শতাংশ জানিয়েছেন, গত এক বছরে তারা সরকারি সেবা পেতে সরাসরি ঘুষ দিতে বাধ্য হয়েছেন। ঘুষ দেওয়ার ক্ষেত্রে পুরুষদের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি—৩৮.৬২ শতাংশ, যেখানে নারীদের মধ্যে এ হার ২২.৭১ শতাংশ। ঘুষ হিসেবে প্রায় সবাই নগদ অর্থ দেওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন, যার হার ৯৮.৪৮ শতাংশ।

বিবিএস জানায়, ২০২৫ সালের ৬ থেকে ২৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়কালে দেশব্যাপী এ জরিপ পরিচালনা করা হয়। ৬৪ জেলার ১ হাজার ৯২০টি প্রাইমারি স্যাম্পলিং ইউনিট থেকে ৪৫ হাজার ৮৮৮টি খানার ১৮ বছর ও তদূর্ধ্ব বয়সী মোট ৮৪ হাজার ৮০৭ জন নাগরিকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। এর মধ্যে পুরুষ ছিলেন ৩৯ হাজার ৮৯৪ জন এবং নারী ৪৪ হাজার ৯১৩ জন।

জরিপে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও নাগরিকদের মতামত নেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, দেশের ৮৪.৮১ শতাংশ মানুষ সন্ধ্যার পর নিজের বাসার আশপাশে একা চলাচল করতে নিরাপদ মনে করেন। তবে এই হার পুরুষদের মধ্যে বেশি (৮৯.৫৩ শতাংশ) এবং নারীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে কম (৮০.৬৭ শতাংশ)। সন্ধ্যার পর নিজ বাসায় নিরাপদ বোধ করার হার আরও বেশি—৯২.৫৪ শতাংশ।

সুশাসনের সূচকে নাগরিক অংশগ্রহণের চিত্র বেশ হতাশাজনক। মাত্র ২৭.২৪ শতাংশ মানুষ মনে করেন, তারা সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলতে পারেন। রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে প্রভাব রাখার সক্ষমতা নিয়ে আত্মবিশ্বাস আরও কম—মাত্র ২১.৯৯ শতাংশ। জাতীয়ভাবে প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ মনে করেন, দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সাড়া প্রদানকারী।

সরকারি সেবা গ্রহণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত এক বছরে ৪৭.১২ শতাংশ মানুষ সরকারি স্বাস্থ্যসেবা নিয়েছেন। ৪০.৯৩ শতাংশ জানিয়েছেন, তাদের অন্তত একটি সন্তান সরকারি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। এছাড়া পরিচয়পত্র ও নাগরিক নিবন্ধনের মতো অন্যান্য সরকারি সেবা গ্রহণের চেষ্টা করেছেন ৭৩.৭৭ শতাংশ নাগরিক। এসব সেবার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যখাতে সন্তুষ্টির হার ৭২.৬৯ শতাংশ এবং অন্যান্য নাগরিক সেবায় সন্তুষ্টির হার ৬৬.৯১ শতাংশ।

বিচারপ্রাপ্তি ও সামাজিক বৈষম্য বিষয়েও জরিপে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। গত দুই বছরে ১৬.১৬ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো বিরোধে জড়িয়েছেন। তাদের মধ্যে অধিকাংশই আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ পেয়েছেন। অন্যদিকে, ১৯.৩১ শতাংশ নাগরিক কোনো না কোনো ধরনের বৈষম্যের শিকার হয়েছেন, যার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে আর্থ-সামাজিক অবস্থা ও লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য। তবে এসব ঘটনার মাত্র ৫.৩৭ শতাংশ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে।

এমজে/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে