ঢাকা, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বেক্সিমকোর কারখানা–বেল টাওয়ার নিলামে তুলছে জনতা ব্যাংক

২০২৫ নভেম্বর ২৬ ২২:৫৭:৫০
বেক্সিমকোর কারখানা–বেল টাওয়ার নিলামে তুলছে জনতা ব্যাংক

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংক বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি (বেক্সিমকো) লিমিটেডের বিভিন্ন স্থাপনা বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। চলমান আর্থিক সংকটের সময়ে ব্যাংকটি কোম্পানির কারখানা, জমি এবং ঢাকার ধানমন্ডির করপোরেট ভবন ‘বেল টাওয়ার’ নিলামে তোলার ঘোষণা দিয়েছে। মোট বকেয়া ১ হাজার ৩২২ কোটি টাকার বেশি হওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে— এমন এক সময় যখন সরকার আন্তর্জাতিক লিজিং উদ্যোগের মাধ্যমে বেক্সিমকোর টেক্সটাইল ইউনিটগুলো পুনরায় চালু করার জন্য কাজ করছে।

মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) একাধিক জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জনতা ব্যাংক জানায়, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সুদসহ বকেয়া ঋণের বিপরীতে কোম্পানির বন্ধকী সম্পত্তি নিলামে তোলা হচ্ছে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, নিলামে অংশ নিতে আগ্রহীরা আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দরপত্র জমা দিতে পারবেন।

একই বিজ্ঞাপনপত্রে ব্যাংকটি অ্যাসেস ফ্যাশনস লিমিটেডের সম্পদ নিলামে তোলার ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ১৩৩ কোটি টাকারও বেশি ঋণ খেলাপি রয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বেক্সিমকোর যেসব সম্পত্তি নিলামের আওতায় আনা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে— গাজীপুরে ৩ হাজার ৫২৭ ডেসিমেল জমিসহ কারখানা, আশুলিয়ায় ১৪৬.৬৫ ডেসিমেল জমি এবং নারায়ণগঞ্জে ৪৪০ ডেসিমেল জমি। এ ছাড়া ধানমন্ডিতে অবস্থিত ১৫ তলা বেল টাওয়ারকেও বিক্রির তালিকায় যুক্ত করা হয়েছে।

এর আগেই ২১ নভেম্বর ব্যাংকটি আরও একটি বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বেক্সিমকো গ্রুপের তিন প্রতিষ্ঠান— ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেল লিমিটেডের ইউনিট-১ ও ইউনিট-২, আরবান ফ্যাশনস এবং অ্যাপোলো অ্যাপারেলস— এর সম্পদ নিলামের ঘোষণা দেয়। প্রথম দুটির মূল্যায়ন দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫৪.৭ কোটি টাকা, আর অন্য দুটি ইউনিটের মূল্য যথাক্রমে ৭২৪.২৬ কোটি ও ৮১৬.৪ কোটি টাকা।

নিলাম কার্যক্রম ঘোষণার সময়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ একই সময়ে বেক্সিমকোর বন্ধ হয়ে যাওয়া কারখানাগুলো পুনরায় চালু করতে দুই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে— জাপান-বাংলাদেশের যৌথ প্ল্যাটফর্ম রিভাইভাল এবং যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাংলাদেশি পেশাজীবীদের সংগঠন ইকোমিলি। তারা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো লিজের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত করার প্রস্তাব দিয়েছে।

এই দুই সংস্থা জানায়, দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ সংকট বৃদ্ধি পাওয়ায় বেক্সিমকোর কারখানাগুলো অচল হয়ে পড়ে। যৌথ বিবৃতিতে তারা উল্লেখ করে, সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় জনতা ব্যাংকের এ ধরনের বিক্রয় সিদ্ধান্ত তাদের জন্য "অপ্রত্যাশিত ও হতবাক" হওয়ার মতো।

প্রতিষ্ঠানদ্বয়ের ভাষ্যমতে, বেক্সিমকোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এলাকার কর্মী, ব্যবসায়ী, ছোট দোকানি ও পরিবারের সঙ্গে ব্যাপক আলোচনা সম্পন্ন হয়েছে এবং সবাই কারখানা পুনরায় চালুর অপেক্ষায় ছিলেন। তাদের দাবি— জাতীয় পর্যায়ের শিল্পসম্পদ নিলামে তোলার বিষয়টি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং এটি বাস্তবায়নে শ্রমিক, বিনিয়োগকারী ও বিশেষজ্ঞ মতামত নেওয়া প্রয়োজন।

তারা সতর্ক করে জানায়, নিলাম প্রক্রিয়া চালু থাকলে দক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশিদের নেতৃত্বে বিনিয়োগের সম্ভাবনা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একই সঙ্গে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, পোশাক খাতে সাম্প্রতিক বিদেশি আগ্রহও এতে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মজিবুর রহমানের সঙ্গে ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। একইভাবে বেক্সিমকোর এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীর কাছ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া সম্ভব হয়নি।

মামুন/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে