ঢাকা, সোমবার, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

সূরা মায়িদাহ এর সংক্ষিপ্ত তাফসীর

২০২৫ অক্টোবর ২৭ ১২:২৩:১৩
সূরা মায়িদাহ এর সংক্ষিপ্ত তাফসীর

নিজস্ব প্রতিবেদক: সূরা আল-মায়েদার প্রথম আয়াত দিয়ে, যেখানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা অঙ্গীকার রক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছেন, অর্থাৎ মুমিনদেরকে তাদের কৃত অঙ্গীকার ও চুক্তিগুলো পরিপূর্ণ করতে বলা হয়েছে । একই আয়াতে চতুষ্পদ জন্তু খাওয়া হালাল করা হয়েছে, তবে যেগুলো নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেগুলো ছাড়া । এরপর সূরাটির শুরুর দিকে আল্লাহ তায়ালা আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন: ভালো ও কল্যাণের কাজে, তাকওয়ার কাজে একে অপরের সহায়তা করো, আর মন্দ কাজে কেউ কারো সহায়তা করবে না ।

এরপর, সূরা মায়েদার ৩ নম্বর আয়াতে কী কী জিনিস হারাম করা হয়েছে তার তালিকা দেওয়া হয়েছে, যেমন: মৃত পশু, রক্ত, শুকরের মাংস, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা পশু, ফাঁস লেগে বা উপর থেকে পড়ে মারা যাওয়া পশু ইত্যাদি । মুফাসসিরদের মতে এই আয়াতটি কোরআনে কারীমের বিধান সংশ্লিষ্ট সর্বশেষ আয়াত, অর্থাৎ এরপরে আর নতুন কোনো বিধান আসেনি । এই আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, "আজ আমি তোমাদের প্রতি দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম ইসলামকে, এবং আমার নেয়ামতকে তোমাদের উপর পরিপূর্ণ করে দিলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।"

পাঁচ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হালাল খাদ্য এবং আহলে কিতাবদের (ইহুদি ও খ্রিস্টান) জবাই করা পশু খাওয়া জায়েজ হওয়ার কথা বলেছেন। এমনকি আহলে কিতাবদের মেয়েদেরকে (ইহুদি-খ্রিস্টান মেয়ে) বিয়ে করাও জায়েজ ।

পরবর্তী, সূরা মায়েদার ৬ নম্বর আয়াতে ওজু ও তায়াম্মুমের বিধান বর্ণিত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, হে মুমিনরা! যখন সালাত পড়তে চাইবে তখন মুখমণ্ডল ও হাত ধোবে, মাথা মাসাহ করবে এবং পা ধোবে। যদি পানি ব্যবহার করতে অক্ষম হও (অসুস্থতা বা পানি না থাকার কারণে), তবে পবিত্র মাটি বা মাটি জাতীয় বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে ।

৮ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন যে, কারো প্রতি বিদ্বেষের কারণে যেন আমরা ইনসাফ থেকে দূরে সরে না যাই। মীমাংসার সময় কারো প্রতি শত্রুতার কারণে ইনসাফ না করা যাবে না ।

১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঈসা মাসিহকে (আ.) যারা আল্লাহ বানায়, তাদের বিষয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেছেন যে, "দেখো, ঈসা এবং তাঁর মাকে যদি আল্লাহ শেষ করতে চান, তাহলে কে রক্ষা করার আছে?" এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে ঈসা (আ.) মাবুদ নন, বরং তিনি সৃষ্টি ।

২৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের ঘটনা তুলে ধরেছেন। তাদের মধ্যে হাবিলের সদকা কবুল করা হয়েছিল কিন্তু কাবিলেরটা হয়নি, কারণ কাবিল মুত্তাকী ছিল না এবং তার ভাইকে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছিল । এটি মুত্তাকীদের দান কবুল হওয়ার একটি শিক্ষা।

৩১ নম্বর আয়াতে মানব ইতিহাসের প্রথম হত্যাকাণ্ড (কাবিল কর্তৃক হাবিলকে হত্যা) এবং প্রথম দাফনের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। একটি কাক অন্য একটি কাকের লাশ মাটি সরিয়ে দাফন করে দেখানোর মাধ্যমে কাবিল তার ভাইকে কীভাবে দাফন করবে তা জানতে পারে ।

৩৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা দাঙ্গাহাঙ্গামা ও ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী এবং ডাকাতি করা ব্যক্তিদের শাস্তি সম্পর্কে কথা বলেছেন। ইসলামের দণ্ডবিধিতে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি, যেমন: হত্যা, শূলে চড়ানো, বা ডান হাত ও বাম পা বিপরীত দিক থেকে কেটে ফেলার কথা বলা হয়েছে ।

৩৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদেরকে আল্লাহর ভয় করতে এবং তাঁর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করতে বলেছেন। এখানে 'ওছিলা' বলতে আল্লাহর নৈকট্য বোঝানো হয়েছে, কোনো মাধ্যম ধরা নয় ।

৩৮ নম্বর আয়াতে চোরের শাস্তির কথা বলা হয়েছে, যেমন: তার হাত কাটার বিধান ।

৪২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিচার ফয়সালা করার ক্ষেত্রে ইনসাফ বা ন্যায়বিচার করতে বলেছেন, কারণ আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদের ভালোবাসেন।

৪৫ নম্বর আয়াতে কেসাস বা প্রতিশোধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে: "জানার বদলে জান, চোখের বদলে চোখ, কানের বদলে কান"।

সর্বশেষ, ৯৬ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা সমুদ্রের শিকার এবং খাদ্যকে হালাল করেছেন, তবে স্থলভাগের শিকার এহরাম অবস্থায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।

৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা মদ ও জুয়াকে হারাম ঘোষণা করেছেন । বক্তা উল্লেখ করেন যে এটি মদ হারাম হওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত আয়াত, যেখানে স্পষ্টভাবে একে শয়তানের কাজ এবং বর্জনীয় বলা হয়েছে ।

১০৪ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন। তারা তাদের বাপ-দাদাদের অনুসরণের দোহাই দিয়ে আল্লাহ যা নাজিল করেছেন তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করে ।

১১০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ.) ও তাঁর মায়ের প্রতি প্রদত্ত নেয়ামতসমূহ স্মরণ করতে বলেছেন। এর মধ্যে রয়েছে শৈশবে মায়ের কোলে কথা বলার শক্তি, তাওরাত ও ইঞ্জিলের জ্ঞান, এবং অলৌকিক ক্ষমতা (যেমন মৃতকে জীবিত করা) ।

১১৬ নম্বর আয়াতে কেয়ামতের দিন ঈসা (আ.) এবং তাঁর হাওয়ারিদের (সাহাবীগণ) সাথে কথোপকথনের কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা ঈসা (আ.) কে জিজ্ঞাসা করবেন যে তিনি কি মানুষকে তাঁকে ও তাঁর মাকে উপাসনা করতে বলেছিলেন। ঈসা (আ.) তখন বলবেন যে তিনি এরূপ কিছু বলেননি এবং তাঁর এ কথা বলার কোনো অধিকার ছিল না, বরং তিনি শুধু আল্লাহর ইবাদতের নির্দেশ দিয়েছিলেন । এই আয়াতগুলি তাওহিদের গুরুত্ব এবং আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে শরিক না করার আহ্বানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।

মুয়াজ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

ধর্ম ও জীবন এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম ও জীবন - এর সব খবর



রে