ঢাকা, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
Sharenews24

সাবেক মন্ত্রীর ধর্ষণের প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে

২০২৫ অক্টোবর ১৫ ০৯:৫২:৩৯
সাবেক মন্ত্রীর ধর্ষণের প্রমাণ হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালের একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলার অভিযোগ উপস্থাপন করেছেন ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। মামলাটির প্রেক্ষাপটে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হস্তক্ষেপে আসামি দায়মুক্তি পেয়েছিলেন বলেও দাবি করা হয়।

সোমবার, বিচারপতি মোহাম্মদ গোলাম মোর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন প্রসিকিউটর।

প্রসিকিউশনের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে টঙ্গীতে এক নবদম্পতি গাড়িতে যাওয়ার সময় আক্রমণের শিকার হন। অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক ও তার সহযোগীরা গাড়ি থামিয়ে স্বামীকে হত্যা করে এবং নববধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। পরবর্তীতে ওই নারীর মৃতদেহ টঙ্গী ব্রিজের নিচ থেকে উদ্ধার করা হয়।

প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনাটি খ্যাতনামা লেখক হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাস ‘দেয়াল’-এ উল্লেখ আছে। তিনি আদালতে উপন্যাসের ৮৫ নম্বর পৃষ্ঠা পাঠ করে শোনান, যেখানে মোজাম্মেলের গ্রেপ্তার ও বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপের বিবরণ রয়েছে। প্রসিকিউটর আরও বলেন, এন্থনি মাসকারেনহাসের লেখা ‘Bangladesh: A Legacy of Blood’ বইতেও এই ঘটনার উল্লেখ আছে। বইটির ভাষ্য অনুযায়ী, এ ধরনের ঘটনা সেনাবাহিনীর মধ্যে আস্থার সংকট সৃষ্টি করেছিল, যা মেজর ফারুকদের মধ্যে সরকার পতনের পরিকল্পনার প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল।

আদালতে উপস্থাপিত আরেক বিবরণে বলা হয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নিজে মোজাম্মেল হককে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং তাকে আটককারী মেজর নাসেরকে টঙ্গী থেকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। প্রসিকিউটরের দাবি, এই ঘটনাই প্রমাণ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে মোজাম্মেল হক বিচার থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।

প্রসিকিউটর আরও বলেন, ২০২১ সালের ১৮ জুলাই এক সমাবেশে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক বলেছিলেন, “আমরা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি, চেতনা জমা দেইনি।” এর প্রেক্ষিতে প্রসিকিউটর প্রশ্ন তোলেন, “যিনি এক সময় ধর্ষণ ও হত্যার মতো অপরাধে অভিযুক্ত ছিলেন, তিনিই কীভাবে আজ বঙ্গবন্ধুর চেতনার কথা বলেন?”

এছাড়া, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং আ ক ম মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও হত্যার অভিযোগে পৃথক মামলার যুক্তিতর্কও চলছে।

শেখ হাসিনাকে মামলায় পলাতক হিসেবে দেখানো হয়েছে। মোজাম্মেল হকও বর্তমানে পলাতক বলে জানানো হয়। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলাও বিচারাধীন রয়েছে।

আদালতে উপস্থাপিত এই যুক্তিতর্কে একদিকে ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায় উঠে এসেছে, অন্যদিকে সাহিত্যের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়ায় এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত তৈরি হয়েছে।

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে