ঢাকা, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

এনায়েতের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের মুখে জাতীয় পার্টি!

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ১২:২৬:৩৩
এনায়েতের অভিযোগ নিয়ে প্রশ্নের মুখে জাতীয় পার্টি!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এনায়েত করিম চৌধুরীকে রাজধানীতে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে— তিনি নিজেকে সিআইএ (CIA) ও দক্ষিণ এশিয়ার পরিচালক পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিলেন। পুলিশ জানিয়েছে, এনায়েত করিমের এই পরিচয় ভুয়া এবং এটি ছিল নিছক একটি ছলনা। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, এবং এখন জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (JIC)-এ তার জবানবন্দি নেওয়া হচ্ছে।

ডিবি সূত্রে জানা যায়, জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত করিম স্বীকার করেছেন, তিনি কোনো দিনই সিআইএর এজেন্ট ছিলেন না। বরং, ২০১৪ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভাঙার একটি রাজনৈতিক 'অ্যাসাইনমেন্ট'-এ তিনি জড়িত ছিলেন। সে সময় তিনি তৎকালীন ডিজিএফআই (সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা) ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহযোগিতায় কাজ করেছিলেন। তিনি জানান, রাজনৈতিক প্রভাব তৈরি ও নতুন দল গঠনের উদ্দেশ্যে তিনি প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করেন এবং একটি রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনসাফ কায়েম কমিটি’র কার্যক্রমেও অর্থায়ন করেন। ২০২৩ সালে বনানীর শেরাটন হোটেলে আয়োজিত ইনসাফ কমিটির সভার সম্পূর্ণ খরচ বহন করেছেন বলেও তিনি দাবি করেছেন।

এনায়েত করিম আরও দাবি করেছেন, দেশের রাজনীতি, ব্যবসা ও গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখতেন এবং কেউ কেউ তার কার্যক্রমে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন। এই তালিকায় রয়েছেন— জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম, সাবেক ডিজিএফআই মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) তাবরেজ শামস, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাইফুল আলম, সাবেক আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি, জাতীয় পার্টির আরেক নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, বিএনপির সাবেক নেতা মফিকুল হাসান তৃপ্তি, নুরুল হক নুর, নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম, এবং আরো কয়েকজন।

জিএম কাদেরের সঙ্গে তার যোগাযোগ নিয়মিত ছিল বলে এনায়েত দাবি করেছেন। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর, জাতীয় পার্টি নেতা কাজী মামুনুর রশীদ তাকে জিএম কাদেরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। যদিও, এনায়েত দাবি করেছেন এর আগেও জিএম কাদেরের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলে, জিএম কাদের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে আর ফোন ধরেননি।

ডিবি পুলিশের তদন্তে উঠে এসেছে, এনায়েত দীর্ঘদিন ধরে নিজের তৈরি ভুয়া ডকুমেন্ট দেখিয়ে নিজেকে সিআইএর এজেন্ট বলে দাবি করতেন। তিনি এসব স্ক্যান করা নথি মোবাইলে পাঠিয়ে বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির বিশ্বাস অর্জন করতেন। পুলিশের ধারণা, এই প্রতারণার মাধ্যমে তিনি দেশে ও বিদেশে বিপুল অর্থ লেনদেন করেছেন এবং কোনো প্রকার বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার না করে তার নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে টাকা আদান-প্রদান করতেন।

এনায়েতের অন্যতম সহযোগী এস এম গোলাম মোস্তফা আজাদ, যিনি একসময় একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে কাজ করতেন, তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আজাদকে মাসে ২ লাখ টাকা বেতনে সহকারী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে তিনি টাকা পাচারের কাজে ব্যবহার করতেন। তাদের দুজনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্র এবং বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার হয়ে কাজ করার অভিযোগ আনা হতে পারে।

জিজ্ঞাসাবাদে এনায়েত আরও জানিয়েছেন, ২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের নির্বাচন ঘিরে তিনি বাংলাদেশে এসে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন। পুলিশের মতে, তার কার্যক্রম কখনো সরকার উৎখাতের পরিকল্পনা, কখনো রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি এবং কখনো ভুয়া আন্তর্জাতিক প্রভাব দেখানোর চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা যায়।

ডিবি পুলিশ জানিয়েছে, তারা এখনো যাচাই করছে এনায়েতের দেওয়া নামগুলো সত্যি কতটা সংযুক্ত ছিল তার ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ডে। যদি তার সঙ্গে কারো আর্থিক বা সাংগঠনিক সহযোগিতা প্রমাণিত হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে