ঢাকা, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণে তৈরি হলো নতুন রেকর্ড

২০২৫ সেপ্টেম্বর ২০ ১১:১৯:১৯
বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণে তৈরি হলো নতুন রেকর্ড

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিভিন্ন দেশের সরকারের জন্য বিদেশি ঋণ নেওয়া একটি সাধারণ ঘটনা। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই প্রায় ৩৭ ট্রিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণে জর্জরিত এবং শুধু বিদেশি সরকারগুলোর কাছেই তাদের ৯ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ রয়েছে। তবে বিদেশি ঋণ তখনই স্বাভাবিক হয়, যখন তা পরিশোধের ক্ষমতা দেশের থাকে।

বাংলাদেশের ইতিহাসে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ নতুন রেকর্ড গড়েছে। চলতি বছরের জুন শেষে দেশের মোট বৈদেশিক ঋণ দাঁড়িয়েছে ১১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। অর্থাৎ, প্রায় ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে এই অর্থের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১৪ লাখ কোটি টাকা।

বর্তমানে প্রশ্ন হলো, এই ১১২ বিলিয়ন ডলার কে ঋণ নিয়েছে? তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে গণআন্দোলনে শেখ হাসিনা পালানোর সময় দেশের কাঁধে প্রায় ১০৪ বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক ঋণের বোঝা রেখে যান। এরপর গত এক অর্থ বছরে ড. ইউনূসের সরকার ৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশি দেনা শোধ করেছেন, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বার্ষিক পরিশোধ। পরিসংখ্যান বলছে, গত ছয় মাসে বাংলাদেশের বিদেশি দেনা বৃদ্ধি পেয়েছে ৯ বিলিয়ন ডলার।

বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশের অর্থনীতি ক্রান্তিকালে বিদেশি ঋণের এই অর্থপ্রবাহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রাবাজারকেও স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করেছে, ফলে ডলারের বিনিময় হার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে, ২০০৬ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের মেয়াদ শেষে বৈদেশিক ঋণ ছিল ১৯ বিলিয়ন ডলারের কিছু কম। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিদেশি দেনা বেড়ে ২০০৮ সালে দাঁড়ায় ২৩ বিলিয়ন ডলারে। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ঋণের পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৩ সালের শেষে বাংলাদেশের বিদেশি ঋণ দাঁড়ায় ৩২ বিলিয়ন ডলারে, এবং ২০১৮ সালের শেষে তা বেড়ে হয় ৫৭ বিলিয়ন ডলার। ২০২৩ সালের শেষে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের বিদেশি দেনা সেঞ্চুরি অতিক্রম করে, তখন বিদেশি ঋণ দাঁড়ায় ১০০.৭ বিলিয়ন ডলারে।২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি হয়েছে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। সেই হিসাবে বাংলাদেশের জিডিপির প্রায় ২৪ শতাংশ বৈদেশিক দেনা রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, বিভিন্ন সংস্থা থেকে ঋণ এসেছে, যেমন আইএমএফ থেকে ১.৩ বিলিয়ন ডলার এবং বাজেট সহায়তার জন্য ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, এডিবি ও এআইআইবি থেকে প্রায় ৩ বিলিয়ন ডলার এসেছে। এই অর্থগুলো সরকারের বৈদেশিক ঋণে যুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান বৈদেশিক ঋণের মধ্যে প্রায় ৮১ বিলিয়ন ডলারই বেড়েছে গত সাড়ে ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে।

বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, জিডিপি অনুপাতে বৈদেশিক ঋণ এখনো সহনীয় মাত্রায় রয়েছে। তবে বৈদেশিক মুদ্রার তুলনায় ঋণের সুদ ও মূল অর্থ পরিশোধের পরিমাণ অনেক বেড়ে গেছে। তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি যদিও স্বস্তিদায়ক, তবে পরিশোধে যথেষ্ট চাপ এবং কঠোর প্রচেষ্টার প্রয়োজন পড়বে।

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে