ঢাকা, সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

নেপালের উদাহরণ দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে যা বলছে আ.লীগরা

২০২৫ সেপ্টেম্বর ১৫ ১৯:২৩:০৯
নেপালের উদাহরণ দিয়ে ইনিয়ে-বিনিয়ে যা বলছে আ.লীগরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: নেপালে সাম্প্রতিক সরকার পতনের ঘটনা ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক রূপান্তর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন-পরবর্তী রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, নেপালের ঘটনাপ্রবাহকে সামনে এনে তুলনামূলক আলোচনায় মেতে উঠেছে রাজনৈতিক মহল, বুদ্ধিজীবী ও গণমাধ্যম।

নেপালে একটি তুলনামূলকভাবে ছোট সামাজিক ইস্যুকে কেন্দ্র করে তরুণ সমাজ রাস্তায় নামে। পরবর্তীতে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে কয়েকজন বিক্ষোভকারী নিহত হয়। উত্তাল পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে তখনকার প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন। দায়িত্ব গ্রহণ করেন নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকি। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই তিনি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেন এবং বিক্ষোভকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে নিজেদের শিক্ষাঙ্গনে ফিরে যায়।

বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, নেপালের আন্দোলনকারী তরুণরা জনজীবনে বিভ্রাট ঘটানো ও ধ্বংসযজ্ঞের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান, যা আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়। এ পরিস্থিতিকে অনেকেই “গণতান্ত্রিক আত্মশুদ্ধির দৃষ্টান্ত” বলে অভিহিত করেছেন।

বাংলাদেশে ২০২৫ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলন এক ভয়াবহ ও রক্তক্ষয়ী মোড়ে গড়ায়। বিক্ষোভ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে হাজারো মানুষ প্রাণ হারান। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ১,০০০ বলা হলেও, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, প্রকৃত সংখ্যা প্রায় ১,৫০০ জন।

আন্দোলনকারীরা সরকারি ভবন, মন্ত্রীদের বাসভবন এমনকি সংসদ ভবনেও হামলা চালান। পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে হয় যে, সেনাবাহিনী হস্তক্ষেপ করে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। এর মাধ্যমে দেশে একটি নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়।

আওয়ামী লীগঘনিষ্ঠ একাংশ নেপালের শান্তিপূর্ণ রূপান্তরকে বাংলাদেশের সহিংস বাস্তবতার বিপরীতে দাঁড় করিয়ে তুলনামূলক ব্যাখ্যা দিচ্ছে।

দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকা সাংবাদিক নাঈম নিজাম লিখেছেন,"নেপালের শিক্ষার্থীরা ক্ষমতার ভাগ চায়নি, চাঁদাবাজি বা লুটপাট করেনি। তারা ক্ষমা চেয়ে ক্লাসে ফিরেছে। নির্বাচনের তারিখ দ্রুত ঘোষণা করা হয়েছে। এই শান্তিপূর্ণ মানবিক নেতৃত্বের প্রতীক হচ্ছেন সুশীলা কারকি।"

অন্যদিকে প্রবাসী সাংবাদিক মাস্কওয়াইথ আহসান রসিকতা করে মন্তব্য করেন,"নেপালী পারে, নেপালী পারবে; শুধু আমরাই পারব না।"তিনি নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনকারী তরুণদের হাত মেলানোর একটি ছবি পোস্ট করে বাংলাদেশের তরুণদের ‘মব রাজনীতি’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

আলোচনাগুলোর একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির দ্বৈরথ। আওয়ামী লীগপন্থী মহলের দাবি, নেপালের তরুণরা ধ্বংসযজ্ঞের দায় স্বীকার করে রাষ্ট্রকে সহযোগিতা করেছে, অথচ বাংলাদেশের আন্দোলনে তা অনুপস্থিত ছিল। তাদের মতে, বাংলাদেশে শিক্ষার্থীরা ‘ক্ষমতার ভাগ’ চেয়েছে, যা আন্দোলনের লক্ষ্যকে দুর্বল করেছে।

তবে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এই তুলনাকে একপেশে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে করছেন। তাঁদের মতে,“নেপালের শান্তিপূর্ণ পরিবর্তন আর বাংলাদেশের রক্তক্ষয়ী অভিজ্ঞতাকে এক কাতারে এনে উপস্থাপন করার চেষ্টা বাংলাদেশের দমন-পীড়নের ভয়াবহতা আড়াল করার কৌশল। বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ছিল বহুগুণ বেশি, এবং আন্দোলনের জবাবে সরকার ন্যূনতম রাজনৈতিক উদারতাও দেখায়নি।”

জাহিদ/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে