ঢাকা, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

ডিএসই’র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনার দাবি ডিবিএ’র

২০২৫ জুলাই ১৯ ২০:০০:১৬
ডিএসই’র ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনার দাবি ডিবিএ’র

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম পর্যালোচনা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) ডিবিএ’র প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত একটি চিঠি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং শেয়ারবাজার উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে।

চিঠির অনুলিপি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানকেও পাঠানো হয়েছে।

চিঠিতে ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম-এর ৪.১(বি)(আই) ধারা সংশোধনের সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমান ধারা অনুযায়ী, ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ১৩ সদস্যের হয়। এর মধ্যে ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালক, ৪ জন ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, ১ জন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক এবং ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এক্স-অফিসিও) থাকেন। পর্ষদ চেয়ারম্যান শুধুমাত্র ৭ জন স্বতন্ত্র পরিচালকের মধ্য থেকে মনোনীত হন।

ডিবিএ মনে করে, এই ভারসাম্যহীন পর্ষদ কাঠামোর কারণে পূর্বে রাজনৈতিক বিবেচনায় চেয়ারম্যানসহ স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হতো। যেহেতু এই স্বতন্ত্র পরিচালকদের অনেকেই শেয়ারবাজারের বাইরের খাত থেকে আসতেন, তাদের শেয়ারবাজার সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা না থাকায় তারা কার্যকর সিদ্ধান্ত নিতে বা বাজার উন্নয়নে তেমন ভূমিকা রাখতে পারেননি। এছাড়াও, মালিকানা সত্ত্ববিহীন স্বতন্ত্র পরিচালকদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা শেয়ারবাজার এবং বাজার অংশীজনদের স্বার্থের পরিপন্থী সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ তৈরি করেছে। এই ধরনের বিধান ও অনুশীলন শেয়ারবাজারকে রাজনীতিকরণের মাধ্যমে সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, যা বাজারের শৃঙ্খলা নষ্ট করেছে, বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত করেছে এবং ডিএসই’র প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি দুর্বল করে দিয়েছে। এই অবস্থায় ভবিষ্যতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছে ডিবিএ।

এই পরিস্থিতি থেকে শেয়ারবাজারকে এগিয়ে নিতে, ডিবিএ ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিমের উল্লেখিত ৪.১(বি)(আই) ধারার নিম্নলিখিত সংশোধনের সুপারিশ করেছে:

সুপারিশ-১: ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ কাঠামোর পুনর্গঠন ও পরিবর্তন

ডিএসই পরিচালনা পর্ষদ ১১ সদস্য বিশিষ্ট হবে, যার মধ্যে ৫ জন স্বতন্ত্র পরিচালক, ৪ জন ডিএসই শেয়ারহোল্ডার পরিচালক, ১ জন কৌশলগত বিনিয়োগকারী পরিচালক এবং ১ জন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এক্স-অফিসিও) নিযুক্ত হবেন। সেক্ষেত্রে "পর্ষদ চেয়ারম্যান" এক্স-অফিসিও পরিচালক ব্যতীত অন্য সকল পরিচালকদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং নতুন বোর্ড গঠনের পর প্রথম সভায় পর্ষদ সদস্যদের দ্বারা নির্বাচিত হবেন। ডিবিএ বিশ্বাস করে, এর ফলে ডিএসই’র পর্ষদ কাঠামোয় ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে, সকল কার্যক্রম ও সিদ্ধান্তে স্বচ্ছতা আসবে এবং বাজারের উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হবে।

সুপারিশ-২: ব্যবস্থাপনা পরিচালককে প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) রিপোর্টিং কর্তৃপক্ষ হিসেবে ক্ষমতায়ন

ডিএসই বোর্ড ও অ্যাডমিনিস্ট্রেশন রেগুলেশন ২০১৩ এর ধারা নং- ১৬(১) এবং ডিএসই ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম-এর ধারা নং- ৫.২.২(বি) অনুসারে, প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা (সিআরও) সরাসরি রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটি (আরএসি)-এর কাছে রিপোর্ট করেন, তবে সিইও-এর কাছে প্রশাসনিক রিপোর্টিং থাকে। বর্তমান রেগুলেশনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক/সিইও-এর কাছে সিআরও-কে তার কার্যক্রম সম্পর্কিত রিপোর্ট প্রদানের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেয়ারবাজারের রেগুলেটরি বিষয়ে অবহিত থাকেন না, যা সমন্বয়হীনতা সৃষ্টি করে এবং বাজার অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়ায়।

ডিবিএ’র সুপারিশ হলো, ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তার (সিআরও) রিপোর্টিং কর্তৃপক্ষ হিসেবে গণ্য হবেন এবং রেগুলেটরি সকল কার্যক্রম তার এখতিয়ারভুক্ত থাকবে। একই সাথে, সিআরও ডিএসই রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির নিকট তার রিপোর্টিং অব্যাহত রাখবেন। ডিবিএ মনে করে, যেহেতু ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডিএসই’র সকল কার্যক্রম, কর্তৃত্ব এবং শেয়ারবাজারের বিষয়গুলোর জন্য দায়ী ও জবাবদিহি করেন, তাই রেগুলেটরি বিষয়ে তার সম্যক অবগতি বাজার অংশগ্রহণকারীদের সাথে সমন্বয় বাড়াবে এবং আস্থাহীনতা দূর করবে।

সুপারিশ-৩: ডিএসই’র সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম থেকে রহিতকরণ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিমিউচুয়ালাইজেশন স্কিমের ৪.৪.৩ (এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা) ধারায় ডিএসই’র জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও স্থায়ী সাংগঠনিক অর্গানোগ্রামের রূপরেখা দেওয়া আছে, যা এক্সচেঞ্জ পরিচালনায় সাংগঠনিক কাঠামো এবং প্রয়োজনীয় পদ পরিবর্তনকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। ডিবিএ’র মতে, উক্ত সাংগঠনিক অর্গানোগ্রাম সংশোধন করার ক্ষমতা কেবলমাত্র ডিএসই বোর্ডের উপর ন্যস্ত থাকা উচিত, যাতে প্রয়োজনীয় পরিস্থিতি বিবেচনায় সময়োপযোগী এবং কার্যকর সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়। অতএব, ডিবিএ এই ধারাটি ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন স্কিম থেকে রহিত করার সুপারিশ করেছে, যা এক্সচেঞ্জকে ক্ষমতায়িত করতে এবং একটি স্ব-নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এসআরও) হিসাবে কাজ করতে সহায়তা করবে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে