ঢাকা, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
Sharenews24

আকর্ষণ হারাচ্ছে সঞ্চয়পত্র: বিপাকে সাধারণ মানুষ

২০২৫ জুলাই ০৪ ০৮:২৮:৪৬
আকর্ষণ হারাচ্ছে সঞ্চয়পত্র: বিপাকে সাধারণ মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক: সরকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টেনে ধরেছে এবং এর সুদহার কমিয়ে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সরকার এই উদ্যোগ নিতে বাধ্য হয়েছে।

সরকারেরর এমন উদ্যোগের ফলে ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা বাড়ছে এবং নিম্ন-মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, পেনশনার ও ঝুঁকিপূর্ণ বয়স্ক নাগরিকদের কাছে সঞ্চয়পত্রের আকর্ষণ কমছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত হলো সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ কমিয়ে আনা এবং সুদহার বাজারভিত্তিক করা। অর্থাৎ সঞ্চয়পত্রের সুদহার সরকারি ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের গড় সুদহারের সঙ্গে যুক্ত হবে। গত ছয় মাসে ট্রেজারি বিলের সুদহার কমে যাওয়ায় সঞ্চয়পত্রের সুদহারও কমানো হয়েছে। বর্তমানে সাড়ে ৭ লাখ টাকার নিচের সঞ্চয়পত্রের সুদহার ১২.৫৫% থেকে কমে ১১.৮২% এবং এর উপরের সুদহার ১২.৩৭% থেকে কমে ১১.৭৭% এ দাঁড়িয়েছে। মধ্য মেয়াদে এই সুদহার ৬% এর নিচে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার যখন সংকোচনমূলক বাজেট ও মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করছে, তখন সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো পরস্পরবিরোধী। সাবেক সিনিয়র অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফায় সংসার চালানো মধ্যবিত্তরা এতে সমস্যায় পড়বে। তিনি মনে করেন, সুস্থ বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া উচিত। আরেক অর্থনীতিবিদ এম কে মুজেরীর মতে, আইএমএফের শর্ত মানতে গিয়ে সরকার সঞ্চয়পত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, যা বয়স্ক, নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের বঞ্চিত করছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন, মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছে এবং ব্যাংকে উচ্চ সুদ থাকায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, সঞ্চয়পত্রে বেশি সুদ দিলে আর্থিক সিস্টেম, বিশেষ করে বন্ড মার্কেট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কারণ উচ্চ সুদের কারণে বেসরকারি কোম্পানিগুলো বন্ড ছাড়তে আগ্রহী হয় না, যা আর্থিক খাতের উন্নয়নে বাধা। তারা প্রস্তাব করেন, নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সরকার ভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধার মাধ্যমে সহায়তা করতে পারে, যেমন পেনশনারদের পেনশনের অঙ্ক বাড়িয়ে।

অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের প্রথম কিস্তি দেওয়ার পর থেকেই সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো হয়েছে। ২০২৩ সালের ৩৫ হাজার কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে চলতি অর্থবছরে ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় আনা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, আইএমএফ সঞ্চয়পত্রকে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি দায় হিসেবে দেখছে, যদিও সরকার এটিকে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি মনে করে। এই পদক্ষেপের ফলে একটি বড় শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে