ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫
Sharenews24

পরিবারতন্ত্র রোধে বীমা আইনে আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন

২০২৫ জুন ২৩ ০৯:২১:৫৭
পরিবারতন্ত্র রোধে বীমা আইনে আসছে যুগান্তকারী পরিবর্তন

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের বীমা খাতে একের পর এক কেলেঙ্কারির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার বীমা আইন ২০১০-এ বড় ধরনের সংশোধনী আনতে যাচ্ছে। এই সংশোধনের মূল লক্ষ্য হলো—বীমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে পরিবারতন্ত্র রোধ করে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ যথার্থভাবে রক্ষা করা।

প্রস্তাবিত সংশোধনীতে পরিচালনা পর্ষদে পরিচালক নিয়োগে কঠোর বিধান, পরিবারের মালিকানায় সীমা, এবং ব্যর্থ বীমা প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করে গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেওয়ার বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ অধ্যাদেশটির খসড়া প্রকাশ করে জনমত আহ্বান করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, বিদ্যমান আইনে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অপসারণ বা প্রতারণার ক্ষেত্রে গ্রাহকের অর্থ ফেরত দেওয়ার কোনো সুস্পষ্ট বিধান ছিল না, যা অসংখ্য জালিয়াতি ও দুর্নীতির সুযোগ তৈরি করেছিল। ছয়টি জীবন বীমা কোম্পানি ইতিমধ্যেই গ্রাহকদের ৩ হাজার ৭৩৬ কোটি টাকার দাবি পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছে।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ বা ইডরা) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইনটি সংশোধনের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষিত করাই মূল উদ্দেশ্য। খসড়া অধ্যাদেশে আইডিআরএ'র ক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যার ফলে তারা বীমা কোম্পানির সম্পদ বিক্রি করে রিসিভার নিয়োগ করতে পারবে এবং পরিচালনা পর্ষদ বাতিল বা সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট টিম অপসারণের ক্ষমতা পাবে।

নতুন আইনে পরিবারভিত্তিক দখলদারিত্ব রোধে কঠোর বিধি আনা হচ্ছে। কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা পরিবার সর্বোচ্চ ১০ শতাংশের বেশি শেয়ার রাখতে পারবে না। একই পরিবারের সর্বোচ্চ দুইজন পরিচালক পর্ষদে থাকতে পারবেন এবং সকল পরিচালক নিয়োগে ইডরার আবশ্যিক অনুমোদন নিতে হবে।

এছাড়া, পরিচালক হওয়ার জন্য কমপক্ষে ১০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং ঋণখেলাপি বা ফৌজদারি অপরাধে জড়িত না থাকার শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। একটি বীমা কোম্পানিতে সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক থাকতে পারবেন, যার মধ্যে কমপক্ষে ৬ জন স্বতন্ত্র পরিচালক বাধ্যতামূলক।

গ্রাহকদের ভবিষ্যৎ প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে লাইফ ও নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোকে পৃথক তহবিলে অর্থ সংরক্ষণ করতে হবে, যা নিরাপদ ও লাভজনক খাতে বিনিয়োগ করা হবে। এজেন্টদের পারিশ্রমিকও নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে, যেখানে প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বীমা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের বীমা খাত ১৮ হাজার ২২৭ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করলেও জীবন বীমায় ১২ হাজার ৫১ কোটি টাকার দাবির মধ্যে মাত্র ৮ হাজার ৭২৮ কোটি টাকা পরিশোধ হয়েছে। এই সংশোধনীগুলো বীমা খাতের স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়াতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে