ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
Sharenews24

শেয়ারবাজারে ফের বড় পতন, বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গ

২০২৫ মে ১৩ ১৫:২৩:৪৪
শেয়ারবাজারে ফের বড় পতন, বিনিয়োগকারীদের স্বপ্নভঙ্গ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শেয়ারবাজারের ধারাবাহিক পতন ঠৈকাতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে বৈঠকের খবরে বিনিয়োগকারীদের চোখেমুখে স্বপ্নের ঝিলিক দেখা গেলেও সেটি মোটেও স্থায়ী হলো না। বৈঠকের খবরে আগের কর্মদিবসে সূচকে আশাব্যঞ্জক উত্থান এলেও দ্রুতই সেই উত্থান চাপা পড়ে গেল বিনিয়োগকারীদের হতাশায়।

বাজারের টানা দুরাবস্থার মধ্যে গত রোববার ছুটির দিনে অনুষ্ঠিত হয় শেয়ারবাজার পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (অর্থ মন্ত্রণালয়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক।

এই বৈঠককে ঘিরে বাজারে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। বাজার সংশ্লিষ্টরা ধারণা করেছিলেন, বাজারে তারল্য বাড়াতে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে বৈঠক থেকে কার্যকর কিছু পদক্ষেপ আসবে। ফলস্বরূপ বৈঠকের আগের কর্মদিবসে (বৃহস্পতিবার) সূচক বেড়ে যায় প্রায় ১০০ পয়েন্ট।

কিন্তু বৈঠকে বাজার উত্তরণের তাৎক্ষণিক কোনো আর্থিক বা নীতিগত প্রণোদনার ঘোষণা আসেনি। বরং শেয়ারবাজার নিয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান এবং শেয়ারবাজার সংস্কার কমিশন সাম্প্রতিককালে যেসব আদর্শগত কথাবার্তা বলে আসছিলেন, সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি হয়েছে। এতে বিনিয়োগকারীদের আশা দ্রুতই হতাশায় রূপ নেয়। বৈঠকের পরদিন গতকাল সোমবার সূচক ফের নেতিবাচক ধারায় প্রবেশ করে। যদিও শেষ বেলায় কোন রকমে সূচক উত্থান ধারায় রাখা হয়।

আজ মঙ্গলবার (১৩ মে) শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয় খানিকটা উত্থানের মধ্য দিয়ে। তবে দিনের মধ্যভাগ থেকে পতনের বৃত্তে স্থান নেয় উভয় বাজার। লেনদেনের শেষ পর্যায়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক প্রায় ৬০ পয়েন্ট পড়ে যায়। যা দিন শেষে অ্যাডজাস্টমেন্টের পর ৪৭ পয়েন্টে স্থির হয়। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও একই চিত্র দেখা যায়।

বাজারে লেনদেন চলাকালে মতিঝিলের এক ব্রোকারেজ হাউজে গিয়ে দেখা যায়, ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা হতাশার সুরে বলছেন, “বৈঠক হলো, বক্তৃতা হলো, কিন্তু কাজে কী এলো? আমাদের পুঁজি তো দিন দিন গলছে।”

একজন মধ্যবয়সী বিনিয়োগকারী বললেন, “বাজার নিয়ে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম, কিন্তু আজ বুঝলাম সেটা ছিল মরিচিকা মাত্র।”

আবদুর রহমান নামের এক তরুণ বিনিয়োগকারী আক্ষেপ করে বলেন, “রাশেদ মাকসুদ শেয়ারবাজারটাকে শেষ করে দিল। অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ কেন রাশেদ মাকসুদকে ধরে রেখেছেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়। তিনি যদি এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হন, তাহলে তাকে অন্য কোন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বসানো হোক। শেয়ারবাজারে তাকে চাপিয়ে দিতে হবে কেন?”

বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজার এখন একধরনের দিকহীনতার মধ্যে রয়েছে। বৈঠক থেকে স্পষ্ট কোনো বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা না আসায় বিনিয়োগকারীরা সিদ্ধান্তহীনতায় পড়েছেন। কেউ নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন না, আবার অনেকেই পুরোনো শেয়ার নিয়েও রয়েছেন বিপাকে। বর্তমান কমিশন নিয়ে শেয়ারবাজারের সবাই চরম হতাশায় রয়েছেন।

মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ

আজ (১৩ মে) ডিএসইর প্রধান সূচক ৪৬.৯৭ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৭৪ পয়েন্টে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরীয়াহ সূচক ১২.১৯ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৬৩ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৬.৭৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৭৯৮

ডিএসইতে আজ ৩৪৩ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৩৬৪ কোটি ০৯ লাখ টাকার।

এদিন লেনদেন হওয়া ৩৯৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ৫৪টির, কমেছে ৩০৯টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৩৫টির।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ

সিএসইতে আজ ৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের দিন লেনদেন হয়েছিল ৭ কোটি ২৯ লাখ টাকার।

এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ৫৫টির, কমেছে ১১৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির।

আজ সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৩৬.৯৩ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৬৮৬ পয়েন্টে। আগেরদিন সিএএসপিআই বেড়েছিল ১৯.১৫ পয়েন্ট।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

শেয়ারবাজার এর সর্বশেষ খবর

শেয়ারবাজার - এর সব খবর



রে