ঢাকা, শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
Sharenews24

এক ভুলনীতিতে পোশাক রপ্তানি বিপদে

২০২৫ মে ১১ ০৯:৪৯:২৪
এক ভুলনীতিতে পোশাক রপ্তানি বিপদে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয় হলেও টিকে থাকতে হলে কাঁচামাল উৎপাদনে আত্মনির্ভরতা, শিল্পনীতির সমতা এবং সরকারিভাবে টেক্সটাইল খাতে সক্রিয় সহায়তা এখন সময়ের দাবি।

বিশ্বের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ কটননির্ভর পোশাকে এখনও পিছিয়ে আছে। অথচ বিশ্ববাজারে দিন দিন কটনের পরিবর্তে ম্যান-মেইড ফাইবার (MMF) বা পলিয়েস্টার কাপড়ের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে।চাহিদা বাড়লেও বাংলাদেশ এই সম্ভাবনার বাজার ধরতে পারছে না মূলত কাঁচামাল আমদানিনির্ভরতা ও বৈষম্যমূলক শিল্পনীতির কারণে।

বর্তমানে বিশ্বের অধিকাংশ দেশে তুলা-নির্ভর কাপড়ের পরিবর্তে পলিয়েস্টার বা মিক্সড ফাইবারের চাহিদা বাড়ছে।চীন, ভিয়েতনাম, তুরস্কের মতো দেশের পোশাক রপ্তানির বড় অংশই ম্যান-মেইড ফাইবারনির্ভর। চীনের রপ্তানিকৃত পোশাকের ৬২ শতাংশ, ভিয়েতনামের ৬৬ শতাংশ এবং তুরস্কের ৪৯ শতাংশই পলিয়েস্টার বা MMF-ভিত্তিক।বাংলাদেশের রপ্তানির ৬৭ শতাংশ এখনও কটন-নির্ভর। MMF মাত্র ২৮ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক চাহিদা বিবেচনায় দ্রুত এই খাতে রূপান্তর না হলে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়বে।

চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোনে মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেড নামে একটি কোম্পানি পলিয়েস্টার ফাইবার উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছে। তবে নীতিগত সহায়তার অভাবে উৎপাদন ও বাজার প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি।

বাংলাদেশে বছরে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টন MMF কাঁচামালের চাহিদা থাকলেও, মডার্ন পলি ইন্ডাস্ট্রির উৎপাদন সক্ষমতা মাত্র ৮০ হাজার টন। তবুও এই উদ্যোগ বিদেশি মুদ্রা সাশ্রয়ে বছরে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন ডলার বাঁচাচ্ছে।

দেশে অন্তত ১৫টি প্রতিষ্ঠান MMF-এর কাঁচামাল উৎপাদনে বিনিয়োগ করতে চাইলেও তারা পিছিয়ে পড়ছে বৈষম্যমূলক শুল্কনীতির কারণে।মূল কাঁচামাল পিটিএ ও এমইজি আমদানিতে শুল্ক ১ শতাংশ হলেও এর সহায়ক উপকরণ—কেমিক্যাল, প্যাকেজিং সামগ্রীর ওপর শুল্ক ৩১–৪৩ শতাংশ।এতে উৎপাদনে বাড়তি খরচ টনপ্রতি প্রায় ৪ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে, আমদানি করা MMF-এর শুল্ক কার্যত শূন্য হওয়ায় স্থানীয় পণ্য প্রতিযোগিতায় হেরে যাচ্ছে।

অর্থনীতিবিদ মুহম্মদ সিকান্দার খান বলেন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পগুলোকে উপেক্ষা করে রপ্তানিমুখী খাত টেকসই হবে না। ‘টেক্সটাইল খাতকে শক্ত ভিতের ওপর না দাঁড় করালে তৈরি পোশাক রপ্তানি অনেকটা বেলুনের মতো—যেকোনো সময় চুপসে যেতে পারে।’

চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, "রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে না পারলে আমরা পিছিয়ে যাব। তুলাবহির্ভূত উপকরণ ও পলিয়েস্টার উৎপাদনে নজর না দিলে প্রতিযোগিতা কঠিন হয়ে পড়বে।"

বিটিএমএর ভাইস প্রেসিডেন্ট সালেউদ জামান খান বলেন, "৯০ শতাংশ কাঁচামাল এখনও আমদানিনির্ভর। ফলে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার বাড়ছে। স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যদি নিজস্বভাবে PSF ও পেট চিপস উৎপাদনে প্রণোদনা পায়, তবে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে এবং সরবরাহ চেইন আরও শক্তিশালী হবে।"

মডার্ন সিনটেক্স লিমিটেডের পরিচালক মো. মুস্তাফা হায়দার বলেন,"সরকার যদি পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পে বিনিয়োগ সহায়ক করে, তাহলে পেট চিপসসহ প্রয়োজনীয় কাঁচামাল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন সম্ভব।"তিনি আরও বলেন, "আমদানি করা পণ্য শুল্কমুক্ত, কিন্তু নিজস্ব উৎপাদনে ভ্যাট ও ট্যাক্সের বোঝা বেশি। এতে শিল্প বিকাশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে।"

মুসআব/

শেয়ারনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে থাকতে SUBSCRIBE করুন

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে