ঢাকা, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

১৫ মাসে ১২৮ কারখানা পোশাক কারখানা চালু, বন্ধ ১১৩

২০২৫ এপ্রিল ২০ ০৯:১৭:৩৯
১৫ মাসে ১২৮ কারখানা পোশাক কারখানা চালু, বন্ধ ১১৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মতো ঘটনাপ্রবাহের মধ্যেও বাংলাদেশের রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতে নতুন বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। এতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হলেও একই সময়ে বহু কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে বিপুলসংখ্যক শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন।

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র (বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন) একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ১৫ মাসে সংগঠনের নতুন সদস্য হিসেবে ১২৮টি কারখানা যুক্ত হয়েছে। এই কারখানাগুলো সম্পূর্ণ উৎপাদনে গেলে প্রায় ৭৪ হাজার নতুন কর্মসংস্থান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ সময়ের মধ্যেই বিজিএমইএর ১১৩টি সদস্য কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। এতে ৯৬ হাজার ১০৪ জন শ্রমিক চাকরি হারিয়েছেন। বিশেষ করে গত আগস্টের পর বন্ধ হয়েছে ৬৯টি কারখানা, যেখানে ৭৬ হাজার ৫০৪ জন শ্রমিক কাজ করতেন।

তবে এই টানাপড়েনের মধ্যেও পোশাক রপ্তানিতে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (EPB) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩ হাজার ২৫ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০.৮৪ শতাংশ বেশি।

নতুন ১২৮টি কারখানার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:

একেএইচ আউটওয়্যার

এ জেড কম্পোজিট

নেক্সটন

এলএসএ অ্যাপারেলস

সিটেক ফ্যাশন

স্প্যারো গ্রিনটেক

সুপ্রিম আউটফিট

এর মধ্যে ১৮টি কারখানায় ১ হাজারের বেশি শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। অর্থাৎ, অধিকাংশই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প।

এ জেড কম্পোজিট গাজীপুরে পরীক্ষামূলকভাবে উৎপাদন শুরু করেছে। বর্তমানে ১৫০ শ্রমিক কাজ করলেও ঈদুল আজহার পর পুরোদমে চালু হলে ৭০০–৮০০ শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির এমডি জহিরুল হাসান।

অন্যদিকে, দেশের অন্যতম রপ্তানিকারক স্প্যারো গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ গত সেপ্টেম্বরে গাজীপুরে স্প্যারো গ্রিনটেক নামে নতুন কারখানা চালু করেছে, যেখানে ১,৮০০ জন শ্রমিক কাজ করছেন। বর্তমানে গ্রুপটির চারটি কারখানায় মোট ১৮ হাজার কর্মসংস্থান রয়েছে।

স্প্যারো গ্রুপের এমডি শোভন ইসলাম জানান, নতুন কারখানাটি ভালো পারফর্ম করলেও যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক আরোপের কারণে অর্ডার কিছুটা কমেছে। এতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

বন্ধ হওয়া কারখানার মধ্যে রয়েছে:

বেক্সিমকো গ্রুপের ২৪টি (এর মধ্যে ১৪টি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত)

কেয়া গ্রুপের ৪টি

টিএনজেডের ৪টি

ভারগো এমএইচ, মডিশ অ্যাটায়ার, সিরোক অ্যাপারেলস, ওডিশ ক্রাফট প্রভৃতি

৩১ হাজার ৬৭৯ জন শ্রমিক এবং ১ হাজার ৫৬৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী এসব কারখানায় কর্মরত ছিলেন। সরকার ৫২৫ কোটি ৪৬ লাখ টাকা পরিশোধ করেছে তাদের পাওনা পরিশোধে, তবে অনেকেই এখনো তাদের পাওনা বুঝে পাননি।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, বড় ও মাঝারি কারখানাগুলো প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় (AI) বিনিয়োগ করে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়াচ্ছে, এজন্য রপ্তানি বাড়ছে। তবে ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসার খরচ সামলাতে না পেরে ঝরে পড়ছে।

বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, নতুন কারখানা চালু ও পুরোনো কারখানা বন্ধ হওয়া একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতির ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সতর্কতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন হলেও জাতীয় নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অনেকে বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন না।

তৈরি পোশাকশিল্পে নতুন বিনিয়োগ ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি থাকলেও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আন্তর্জাতিক শুল্কনীতি ও ব্যবসায়িক খরচের চাপে খাতটি চাপের মুখে। সরকারের তৎপরতা ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যনীতির ওপর নির্ভর করছে এ খাতের ভবিষ্যৎ।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে