ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

ইসরাইলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যা বলল হামাস

২০২৫ এপ্রিল ১৮ ১৯:০৩:৫৮
ইসরাইলের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যা বলল হামাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরাইলের দেওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। তারা জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধের অবসান এবং ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে তারা সব জিম্মিকে মুক্ত করবে। এই লক্ষ্যে হামাস অবিলম্বে একটি সমঝোতা নিয়ে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।

বৃহস্পতিবার এক ভিডিও বিবৃতিতে হামাসের প্রধান আলোচক খালিল আল-হাইয়া এসব কথা বলেন।

তার ভাষায়, "আমরা কোনো আংশিক চুক্তি মেনে নেব না, যা (ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন) নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক এজেন্ডাকে বাস্তবায়ন করার সুযোগ দেয়।"

রয়টার্স, বিবিসি এবং ইসরাইলি সংবাদমাধ্যমগুলির দাবি অনুযায়ী, বর্তমানে হামাসের হাতে ৫৯ জন ইসরাইলি জিম্মি আটক রয়েছেন, যার মধ্যে ২৪ জন জীবিত থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। ইসরাইলের সর্বশেষ প্রস্তাবে ৪৫ দিনের যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ১০ জন জিম্মি মুক্তির উল্লেখ ছিল।

এদিকে হামাসের বক্তব্যের জবাবে ইসরাইলের কট্টরপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ হুমকি দিয়ে বলেছেন, "এখন হামাসের ওপর নরকের দরজা খুলে দেওয়ার সময় হয়েছে।"

অর্থাৎ, স্মোটরিচসহ ইসরাইল সরকার জানতো যে, হামাস তাদের এই প্রস্তাব মেনে নেবে না এবং তারা পুরো গাজা ধ্বংস ও দখল করার লক্ষ্যে পূর্ণ আক্রমণ চালাবে।

হামাস নেতা খালিল আল-হাইয়া এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “নেতানিয়াহু ও তার সরকার এই ধরনের আংশিক চুক্তিকে রাজনৈতিক এজেন্ডার ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছে, যাতে গাজায় তাদের গণহত্যা ও ক্ষুধার মাধ্যমে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়। তারা সব জিম্মিকেও বলি দিয়ে হলেও এটি করতে চায়।”

তবে হামাস এমন কিছু হতে দিতে চায় না। তারা একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতি চায়। হামাস কর্মকর্তার ভাষায়, "আমরা এখনই আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, যাতে সব জিম্মির বিনিময়ে একটি নির্ধারিত সংখ্যক ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্ত করে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটানো যায়।"

ইসরাইলি সরকার জানিয়েছে, তাদের লক্ষ্য হল হামাসকে পুরোপুরি নিরস্ত্র ও ধ্বংস করা।

এদিকে ইসরাইলি বর্বর বোমা হামলায় গাজায় প্রতিদিন বহু মানুষ নিহত হচ্ছেন। কারাগারে পরিণত হওয়া অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না।

দখলদার ইসরাইলের সর্বশেষ বিমান হামলায় গাজায় অন্তত ৩৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ত্রাণশিবিরে বসবাসকারী বেসামরিক নাগরিক। গাজার হামাস-পরিচালিত নাগরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

আল-মাওয়াসির ওই হামলার পর প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, একটি শক্তিশালী বিস্ফোরণের পর তাঁবুগুলোতে আগুন ধরে যায় এবং অনেক ফিলিস্তিনি, বিশেষ করে শিশুরা, সেখানে নিহত হয়।

এক ব্যক্তি বিবিসির ‘গাজা লাইফলাইন’ প্রোগ্রামকে বলেন, “আমি দৌড়েঁ বাইরে বেরিয়ে আসি এবং দেখি, আমার পাশের তাঁবু আগুনে পুড়ছে।”

এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনী এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি, তবে তারা হামলার তথ্য যাচাই করছে।

ইসরাইলি বাহিনী জানিয়েছে গত দুই দিনে তারা ‘সন্ত্রাসী ঘাঁটি, সামরিক স্থাপনা ও অবকাঠামোগত জায়গাসহ ১০০টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে।’

নেতানিয়াহুর সরকার বলছে, তাদের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে সহায়তার কোনো ঘাটতি নেই। বরং গত ১ মার্চ থেকে হামাসের ওপর চাপ বাড়াতে গাজায় অবরোধ বজায় রেখেছে, যাতে হামাস অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

তবে গাজার ১২টি প্রধান ত্রাণ সংস্থার প্রধানরা জানিয়েছেন, গাজায় মানবিক সহায়তা ব্যবস্থা “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসের মুখে”।

এদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অব্যাহতভাবে চলা ইসরাইলি সামরিক অভিযানে গাজায় প্রাণহানির সংখ্যা বেড়ে ৫১,০৬৫ জনে পৌঁছেছে, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

গাজার তথ্য অফিস জানাচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এখনও হাজার হাজার নিখোঁজ ব্যক্তি রয়েছেন, যার ফলে নিহতের সংখ্যা ৬২ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এছাড়া আহত হয়েছেন প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার ফিলিস্তিনি।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

আন্তর্জাতিক এর সর্বশেষ খবর

আন্তর্জাতিক - এর সব খবর



রে