ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

দুদকের অভিযোগের জবাবে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক

২০২৫ মার্চ ২০ ১০:১৬:৩৫
দুদকের অভিযোগের জবাবে যা বললেন টিউলিপ সিদ্দিক

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাকে ‘লক্ষ্যবস্তু বানানো’ এবং তার বিরুদ্ধে ‘ভিত্তিহীন’ প্রচারণার অভিযোগ করেছেন ব্রিটেনের সাবেক মন্ত্রী টিউলিপ সিদ্দিক।

তার আইনজীবীরা বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এ একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে দুর্নীতির অভিযোগগুলোকে ‘মিথ্যা এবং হয়রানিমূলক’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, এসব অভিযোগ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, অথচ তাকে কখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি।

টিউলিপ সিদ্দিক জানুয়ারি মাসে লেবার মন্ত্রিসভার ইকনোমিক সেক্রেটারি টু দি ট্রেজারি অ্যান্ড সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তার কাজ ছিল যুক্তরাজ্যের অর্থবাজারের দুর্নীতি সামাল দেওয়া।

দুদকও এই অভিযোগের বিরুদ্ধে একটি চিঠির জবাব দিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, টিউলিপ সিদ্দিক আওয়ামী লীগের ‘দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন’। দুদক আরও দাবি করেছে, টিউলিপের ‘হাসিনা শাসনামল সম্পর্কে অজ্ঞতার দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয়’।

দুর্নীতির অভিযোগের পর টিউলিপ সিদ্দিক উত্তর লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসনের এমপি দাবি করেন যে, তিনি কোনো অনিয়ম করেননি এবং ‘স্বচ্ছতা’ বজায় রেখে কাজ করেছেন। তবে তিনি আরও বলেন, তিনি সরকারের কর্মকাণ্ডে ‘বিক্ষিপ্ততার’ কারণ হতে চাননি, এজন্য তিনি পদত্যাগ করেছেন।

এরপর, প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে এক চিঠিতে জানান যে টিউলিপের জন্য ‘ফিরে আসার দরজা খোলা’ রয়েছে।

টিউলিপ যখন প্রথমে অভিযোগের মুখোমুখি হন, তখন তিনি প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাসের কাছে যান। স্যার লরি ম্যাগনাস জানান, তিনি সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ‘অন্যায় কিছুর প্রমাণ’ পাননি। তবে, তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, টিউলিপ তার খালা, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ‘সম্ভাব্য দুর্নামের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক ছিলেন না’।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অবকাঠামো খাতের ব্যয় থেকে প্রায় ৩.৯ বিলিয়ন পাউন্ড আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুদক। এই তদন্তের ভিত্তি বাংলাদেশি রাজনীতিবিদ ববি হাজ্জাজের অভিযোগ।

অভিযোগে বলা হয়েছে যে, টিউলিপ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পে রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতা করেছিলেন এবং খরচ বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করেছিলেন।

এ বিষয়ে টিউলিপ সিদ্দিকের আইনজীবী বলেছেন, তিনি এই চুক্তিতে জড়িত ছিলেন না। তবে ২০১৩ সালে ক্রেমলিনে চুক্তিস্বাক্ষরের সময় তিনি শেখ হাসিনা এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে একটি ছবিতে ছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রীয় সফরে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের পরিবারের সদস্যদের আমন্ত্রণ জানানো অস্বাভাবিক নয়।’

দুদকের পালটা চিঠিতে প্রশ্ন করা হয়েছে, একজন রাজনীতিবিদ কিভাবে সরলতার কারণে নির্দোষ থাকার দাবি করেন?

এছাড়া, ২০০৪ সালে লন্ডন কিংস ক্রস এলাকায় উপহার হিসেবে পাওয়া ৭ লাখ পাউন্ডের ফ্ল্যাটটি নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটি ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘সত্য নয়’ বলে দাবি করেছেন টিউলিপ। তার আইনজীবী জানিয়েছেন, ফ্ল্যাটটি তাকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন আব্দুল মোতালিফ, যিনি তার গডফাদার এবং পারিবারিক বন্ধু।

ঢাকায় জমি দখলে টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর বিরুদ্ধেও তিনি জবাব দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে দুদকের ব্রিফিংকে ‘যুক্তরাজ্যের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের অগ্রহণযোগ্য চেষ্টা’ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। তার আইনজীবী বলেছেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক অভিযোগ বানানো এবং তার সুনাম নষ্টের জন্য মিডিয়া ব্রিফিং ও প্রকাশ্য বক্তব্য অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

দুদককে ‘অবিলম্বে’ এবং ‘২৫ মার্চ ২০২৫-এর মধ্যে’ সিদ্দিকের কাছে তাদের প্রশ্ন তুলে ধরতে হবে। অন্যথায়, তারা মনে করবে যে কোনো বৈধ প্রশ্ন নেই।

দুদক এ বিষয়ে সম্প্রতি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সিদ্দিক ‘আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠদের মালিকানাধীন বাড়িতে কাটিয়েছেন’ এবং এ থেকেই প্রমাণিত হয় যে তিনি দলটির দুর্নীতি থেকে লাভবান হয়েছেন। তবে টিউলিপের দাবি, তার দাবি অনুযায়ী কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

দুদকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘টিউলিপের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমস্ত অভিযোগ যুক্তরাজ্যের আদালতসহ যেকোনো আদালতে প্রমাণ করা যাবে।’

আরিফ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে