ঢাকা, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Sharenews24

এনআরবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক

২০২৫ মার্চ ১৯ ১০:০৬:২৮
এনআরবি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্রাহকদের মাঝে আতঙ্ক

নিজস্ব প্রতিবেদক : এনআরবি ব্যাংক এখন বিতর্কিত ব্যবসায়ী ইকবাল আহমেদের নিয়ন্ত্রণে। ইকবাল আহমেদ, যিনি বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে গভীরভাবে যুক্ত, তার বিরুদ্ধে পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচার এবং পাচারকৃত অর্থে যুক্তরাজ্যে বিলাসবহুল সম্পত্তি গড়ার অভিযোগ রয়েছে। ইকবাল আহমেদ, যে একসময় শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত ছিলেন, ২০১৫ সালে দুর্নীতির অভিযোগে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত হন।

বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে পরিচালনা বোর্ডের সদস্য হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, যার ফলে এনআরবি ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, যাতে ব্যাংকটির সুশাসন পুনঃস্থাপন করতে চায়, ইকবাল আহমেদকে পর্ষদে রেখে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদ গঠন করেছে। তবে ব্যাংকটির পরিচালনায় ইকবালের উপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষত ইকবালের অতীতের কর্মকাণ্ডের কারণে।

ইকবাল আহমেদ এবং তার দুই ভাই কামাল আহমেদ ও বিলাল আহমেদ এনআরবি ব্যাংকের উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার হিসেবে ব্যাংকের মালিকানায় অংশীদার। ২০২৪ সালের মার্চ মাসের হিসাব অনুযায়ী, তাদের কাছে যথাক্রমে ৩.৮০%, ১.৫১% এবং ২.১৩% শেয়ার রয়েছে। তাদের ব্যবসায়ী গ্রুপের মধ্যে রয়েছে একাধিক কোম্পানি, যার মধ্যে সিমার্ক (বিডি) লিমিটেড, আইবিসিও লিমিটেড, ম্যানরু ইন্টারন্যাশনাল এবং অন্যান্য রিয়েল এস্টেট ও বিনিয়োগ কোম্পানি।

ইকবাল আহমেদ এবং তার ভাইদের বিরুদ্ধে যুক্তরাজ্যে তাদের বাড়ি ও বিলাসবহুল সম্পত্তি তৈরি করার অভিযোগ রয়েছে, যা তাদের আর্থিক ক্ষমতার ইঙ্গিত দেয়। তবে, এদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অনেক দুর্নীতি ও অর্থপাচারের অভিযোগও রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।

ইকবাল আহমেদ, তার ভাইদের সাথে যুক্ত হয়ে দীর্ঘ সময় ধরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ভাড়া গ্রহণের অভিযোগে নোটিশ পেয়ে রয়েছেন। এনআরবি ব্যাংক থেকে চার কোটি ৫১ লাখ টাকা ফেরত চাওয়া হয়েছে, অন্যথায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি, তিনি ব্রিটেনের রাজনৈতিক মহলেও সমালোচিত হয়েছেন, কারণ তিনি তার বিলাসবহুল জীবনযাত্রার জন্য রাজনৈতিক দলের তহবিল ব্যবহার করেছিলেন।

এনআরবি ব্যাংক এর শীর্ষ পদে ইকবাল আহমেদকে পুনরায় নিয়োগ দেওয়ার পর তা দেশের ব্যাংকিং খাতের সংস্কারের জন্য এক চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিতর্কিত ব্যক্তি কে ব্যাংকের শীর্ষে নিয়োগ দেওয়া হলে, তা ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ও স্বচ্ছতার প্রতি প্রশ্ন তোলবে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, "অর্থপাচার এবং ব্যাংকিং খাতের দুর্নীতির অভিযোগ থাকলে, এমন ব্যক্তিকে ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হলে তা বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।"

এদিকে, ইকবাল আহমেদ এবং তার পরিবারকে নিয়ে চলছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিতর্ক, যেখানে তাদের বিরুদ্ধে ফিন্যানশিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্সের রিপোর্টে দ্রুত বিচার প্রক্রিয়ার কথা বলা হয়েছে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংকের সিদ্ধান্ত এবং ব্যাংকের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বিগ্ন।

এখন পর্যন্ত ইকবাল আহমেদ ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি, তবে তিনি এখনো ব্যাংকের শীর্ষে থাকায় এনআরবি ব্যাংক নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে।

মুসআব/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে