ঢাকা, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

সঞ্চয়পত্র ভাঙার রেকর্ড: ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙার পেছনের কারণ

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২১ ১৬:২৫:৫৫
সঞ্চয়পত্র ভাঙার রেকর্ড: ২৫ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভাঙার পেছনের কারণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের নতুন কারণ সামনে এসেছে, যেখানে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর হার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত তিন মাস (অক্টোবর-ডিসেম্বর) প্রায় ২৫ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছেন সাধারণ গ্রাহকেরা। সঞ্চয়পত্রের প্রতি মানুষের আগ্রহ কমে যাওয়ার পাশাপাশি, এর বিক্রি কমে যাওয়ার কারণও অর্থনীতির সংকট ও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সরকারের ঋণ সংগ্রহের জন্য একসময় অন্যতম প্রধান মাধ্যম হিসেবে সঞ্চয়পত্র ছিল, কিন্তু বর্তমানে এর চাহিদা কমে গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি মানুষের সঞ্চয়পত্র ভাঙতে বাধ্য করছে। মানুষের আয় যেভাবে বাড়ছে না, ঠিক তেমনিভাবে তাদের ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে তাদের কাছে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর বিকল্প নেই।

আরেকটি কারণ হিসেবে উঠে এসেছে ব্যাংকগুলোর প্রতি আস্থা কমে যাওয়া। অনেক ব্যাংক এখন গ্রাহকের টাকা দিতে পারছে না, যা সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার ২৭ শতাংশ কমে গেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল ৪১ হাজার ২৯০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকায় কমে গেছে।

এছাড়া, সরকারের সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কমে যাওয়ায়, সরকারের ঋণের বোঝাও কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে পূর্বের সঞ্চয়পত্রের সুদের পরিশোধের জন্য এখনও বাজেটে বড় অঙ্কের অর্থ বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে।

গবেষকদের মতে, সঞ্চয়পত্র ভাঙার প্রধান কারণ হচ্ছে মানুষের জরুরি অর্থনৈতিক চাহিদা এবং তাদের ব্যয়ের চাপ। গত তিন মাসে, অর্থাৎ অক্টোবর, নভেম্বর, এবং ডিসেম্বর মাসে যথাক্রমে ৯ হাজার ৮৩ কোটি, ৮ হাজার ১৫০ কোটি, এবং ৮ হাজার ৪৬১ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র ভেঙেছে সাধারণ মানুষ। এর ফলে, সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা কমে গেছে, যা সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, বর্তমানে ব্যাংকিং সেক্টরের প্রতি আস্থা সংকটে রয়েছে। অনেক ব্যাংক গ্রাহকের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না, আর এর কারণে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা আরও বেড়েছে। এ ছাড়া, গত কয়েক মাসে সরকারী পরিবর্তন এবং ব্যাংক হিসাব ও বিনিয়োগে নজরদারি বাড়ানোয়, মানুষ সঞ্চয়পত্র থেকে টাকা তুলে অন্য বিনিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।

এ পরিস্থিতি সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যা তৈরি করেছে। সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমে যাওয়া এবং ভাঙানোর হার বাড়লে সরকারকে আরও কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। সরকারের বাজেটের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী, সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ পাওয়ার আশা কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে দেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) ও অন্যান্য সরকারি কার্যক্রমের উপর।

এই সংকট মোকাবিলা করতে, অন্তর্বর্তী সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছে, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, সঞ্চয়পত্রের প্রতি সাধারণ মানুষের আগ্রহ ফিরিয়ে আনা কঠিন হতে পারে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে