ঢাকা, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

৩ হত্যার পর হোয়াটসঅ্যাপে চমকে দিল খুনি

২০২৫ ফেব্রুয়ারি ২২ ১০:১৪:১২
৩ হত্যার পর হোয়াটসঅ্যাপে চমকে দিল খুনি

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে তিনজনকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে এক ব্যক্তি ছিলেন পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এবিপি) আঞ্চলিক নেতা। হত্যাকাণ্ডের পর, খুনি বা খুনিরা গণমাধ্যমকর্মীদের মাধ্যমে খুদে বার্তা পাঠিয়ে নিজের অপরাধের দায় স্বীকার করে এবং এলাকার মানুষের প্রতি ভয়াবহ হুমকি দিয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে রামচন্দ্রপুরের শ্মশানঘাট এলাকায় গুলির শব্দ শুনে আতঙ্কিত হয়ে ওঠে স্থানীয়রা। পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে এলাকাবাসী ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনটি লাশ ও দুটি মোটরসাইকেল পড়ে থাকতে দেখে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশগুলো উদ্ধার করে।

নিহতদের মধ্যে ছিলেন হরিণাকুণ্ডু উপজেলার আহাদনগর গ্রামের আবু হানিফ (হানিফ আলী), তার শ্যালক লিটন এবং কুষ্টিয়া জেলার পেয়ারপুর গ্রামের রাইসুল ইসলাম। নিহত হানিফ পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির (এবিপি) আঞ্চলিক নেতা ছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক গুরুতর অপরাধের মামলা ছিল।

হত্যাকাণ্ডের পর, খুনি বা খুনিরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে একটি খুদে বার্তা পাঠিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে। বার্তায় বলা হয়, ‘‘ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা, কুষ্টিয়া, যশোর ও খুলনাবাসীদের উদ্দেশে জানানো যাচ্ছে যে, পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি নামধারী কুখ্যাত ডাকাত বাহিনীর শীর্ষ নেতা হানিফ তার দুই সহযোগীসহ জাসদ গণবাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছেন।’’

এছাড়া, বার্তায় হত্যাকারীরা হানিফের সহযোগীদের সতর্ক করে দিয়ে হুমকি দেয় যে, ‘‘এ অঞ্চলের হানিফের সহযোগীদের শুধরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো। অন্যথায় আপনাদেরও একই পরিণতির মুখোমুখি হতে হবে।’’

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ এবং চুয়াডাঙ্গা এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এবং জাসদ গণবাহিনীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছিল। হত্যাকাণ্ডের পূর্বে, হত্যাকারীরা গোপনে এই এলাকায় পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের বৈঠকের খবর পায় এবং সেই অনুযায়ী তারা এই হামলা চালায়।

শৈলকুপা থানার ওসি মাসুম খান জানান, হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা তিনটি লাশ উদ্ধার করে এবং সাথে দুটি মোটরসাইকেল, গুলি ও ম্যাগজিন উদ্ধার করা হয়। তিনি আরও জানান, নিহত হানিফের বিরুদ্ধে হত্যাসহ ১৩টি মামলা ছিল, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ২০০৩ সালে আব্দুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মামলায় হানিফের বিরুদ্ধে আদালত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিয়েছিল। তবে, পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় তিনি মুক্তি পেয়ে এলাকাতে ফিরে আসেন।

এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে আবারও স্পষ্ট হয়ে ওঠে, কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন অঞ্চলে পূর্ব বাংলা কমিউনিস্ট পার্টি ও জাসদ গণবাহিনীর মধ্যে অব্যাহত সংঘর্ষের চিত্র। এই ধরনের সহিংসতার কারণে স্থানীয় জনগণের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে, পরিস্থিতি যে এখনও উত্তেজনাপূর্ণ, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এই ঘটনায়, যেখানে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে আরও প্রাণহানির আশঙ্কা রয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক আধিপত্য এবং দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্বের যে জটিলতা রয়েছে, তা আগামী দিনে আরও বড় আকারে সামাল দিতে হবে।

তপন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে