ঢাকা, শনিবার, ১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

শাপলা চত্বরের ঘটনায় ডিবি হারুনসহ যারা পেয়েছেন ‘বিশেষ পুরস্কার’

২০২৫ জানুয়ারি ১৮ ১০:৪৪:১৬
শাপলা চত্বরের ঘটনায় ডিবি হারুনসহ যারা পেয়েছেন ‘বিশেষ পুরস্কার’

নিজস্ব প্রতিবেদক: শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ৫-৬ মে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনা, যা "অপারেশন ফ্ল্যাশ আউট" নামে পরিচিত, বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি অত্যন্ত বিতর্কিত ও আলোচিত অধ্যায়। এটি ছিল একটি সমাবেশ যা হেফাজতে ইসলামের পক্ষ থেকে আয়োজিত হয়েছিল, এবং যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ ও দাবিগুলি তোলা হয়েছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনায় পুলিশ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। এ ঘটনায় পুলিশের কর্মকর্তাদের পদক প্রদান, বিচার, এবং তদন্ত নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে।

ডিবি হারুন বা হারুন-অর-রশিদ, যিনি বর্তমানে পলাতক, এই অভিযানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিলেন। পুলিশ বাহিনীর একটি বিশেষ বুকলেটে তার ভূমিকার প্রশংসা করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, তিনি অত্যন্ত "বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সঙ্গে" কম ফোর্স ও অফিসার নিয়ে হাজারো হেফাজত কর্মীকে শাপলা চত্বর থেকে সরিয়ে দিতে সক্ষম হন। উল্লেখযোগ্যভাবে, হারুন ব্যক্তিগতভাবে আহমদ শফী (হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ নেতা) কে নিরাপদে ঢাকায় বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন এবং তাকে চট্টগ্রামে তার মাদ্রাসায় পাঠিয়ে দেন। এর জন্য তাকে "বিশেষ পুরস্কার" দেওয়া হয়।

এই ঘটনায় পুলিশের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং সদস্য পুরস্কৃত হন। যারা পুরস্কৃত হন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন:

- ডিএমপি কমিশনার বেনজীর আহমেদ

- সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেছুর রহমান

- ডিআইজি আছাদুজ্জামান মিয়া

- এডিসি আব্দুল জলিল মন্ডল

- শেখ মুহাম্মদ মারুফ হাসান

- মাহবুব হোসেন, যারা পুলিশের বিশেষ শাখার তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি ছিলেন।

এছাড়াও, পুলিশের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে, বিশেষভাবে সহায়ক ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এসব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তারা হেফাজতের সমাবেশ দমন করতে অত্যধিক সহিংসতা প্রয়োগ করেছেন।

এই ঘটনার ১৩ বছর পর, হেফাজতে ইসলাম আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে, যেখানে তারা সরকার, বিশেষত শেখ হাসিনা এবং ৫০ জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেছে। তাদের দাবি, শাপলা চত্বরে পুলিশের অভিযানে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল, এবং সেখানে মৃতদেহ গুম করা হয়েছিল।

এই অভিযানের পরিকল্পনা সরকার এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে গোপন বৈঠকে চূড়ান্ত করা হয়েছিল। তৎকালীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বে এই বৈঠক হয়, যেখানে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকেই অভিযানের পরিকল্পনা অনুমোদিত হয়, এবং পরে শেখ হাসিনার নির্দেশে অভিযান শুরু হয়।

ঘটনার দিন, পুলিশ এবং অন্য বাহিনীর সদস্যরা শাপলা চত্বরে ব্যাপক অভিযান চালায়, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে এবং গোলাগুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে হেফাজতের নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০ মিনিটের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরো এলাকা দখল করতে সক্ষম হয়।

এই ঘটনার পর, সরকার বা পুলিশ বাহিনী হতাহতের ব্যাপারে কোনো প্রমাণাদি অস্বীকার করে আসছে, তবে হেফাজতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে, বহু লোক নিহত এবং আহত হয়েছিল, এবং পুলিশ বাহিনী শাপলা চত্বরের বহু লাশ গুম করে ফেলেছিল।

এই ঘটনায় দীর্ঘ সময় পরও বিচার এবং তদন্ত চলছে, এবং এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পর্যন্ত গড়িয়েছে।

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে