ঢাকা, বুধবার, ৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি, উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

২০২৫ জানুয়ারি ০৭ ১০:২৯:৪৫
আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ৩৫ শতাংশ ঋণই এখন খেলাপি, উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে উঠেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। গত জুন মাসে এই পরিমাণ ছিল ২৪ হাজার ৭১১ কোটি টাকা, যা ছিল মোট ঋণের ৩৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। এর অর্থ, তিন মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ১ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা, যা উদ্বেগজনক।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এই পরিস্থিতির পেছনে প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) মালিকানাধীন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের সরাসরি প্রভাব রয়েছে। পি কে হালদারের ব্যবস্থাপনায় থাকা বেশ কিছু আর্থিক প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি, যার ফলে পুরো খাতের ওপর প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে এফএএস ফিন্যান্সের খেলাপি ঋণ ৯৯.৯২ শতাংশ, ফারইস্ট ফিন্যান্সের ৯৮ শতাংশ এবং বিআইএফসি ও পিপলস লিজিংয়ের ঋণ ৯৭ শতাংশের কাছাকাছি।

এছাড়া, ব্যাংকগুলোতেও খেলাপি ঋণ বেড়েছে, কারণ, দীর্ঘদিন ধরে লুকানো খেলাপি ঋণ এখন সামনে আসছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকগুলোতে তদারকি শুরু হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি খোলাসা হচ্ছে। বিশেষ করে, সরকার পরিবর্তনের পর ব্যাংকগুলোর তদারকি আরো কঠোর হয়েছে, যার ফলে এসব খেলাপি ঋণ সামনে এসেছে। তবে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছুটা আগে থেকেই কঠোর তদারকি চালিয়ে আসছিল, ফলে সেখানে প্রকৃত খেলাপি ঋণ কিছুটা সহজে দেখা যাচ্ছে।

বর্তমানে, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের ঋণের পরিমাণ এবং খেলাপি ঋণের পরিমাণ এখনো উদ্বেগজনক। বিশেষ করে, এফএএস ফিন্যান্স, ফারইস্ট ফিন্যান্স, বিআইএফসি এবং পিপলস লিজিংয়ের খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ। অন্যদিকে, কিছু প্রতিষ্ঠান যেমন আইডিএলসি ফাইন্যান্স, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স এবং লঙ্কা-বাংলা ফাইন্যান্সের মতো প্রতিষ্ঠানে খেলাপি ঋণের হার ১০ শতাংশের নিচে রয়েছে, তবে মোট প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এই পরিস্থিতি থেকেই পরিষ্কার যে, খাতটি একেবারে সঙ্কটে রয়েছে।

এদিকে, ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকট এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অস্থিরতা এই পরিস্থিতি আরও খারাপ করেছে। ব্যাংকগুলোর মধ্যে যে সংকট দেখা দিয়েছে, তার ফলে অনেক গ্রাহক তাদের আমানত সরিয়ে নেন, যা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য একটি বড় চাপ তৈরি করেছে। এতে ঋণ বিতরণ কমেছে এবং তাদের আমানত ও ঋণ কমে গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ঋণ বৃদ্ধির হার কমে গেছে। ২০২৩ সালের জুন শেষে এসব প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৪ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা, যা সেপ্টেম্বরে ৭৩ হাজার ৬৬২ কোটি টাকায় নেমে আসে। অন্যদিকে, আমানতও কমে গেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মোট আমানত ছিল ৪৭ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা, যা জুনে বেড়ে ৪৭ হাজার ৯০৬ কোটি টাকায় পৌঁছেছিল। তবে, সেপ্টেম্বর মাসে তা আবার কমে ৪৭ হাজার ৮৩৮ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।

এদিকে, কিছু প্রতিষ্ঠানে ঋণখেলাপির হার কমানোর লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে, পি কে হালদারের মতো ব্যক্তির প্রভাব এখনও খাতে রয়েছে, যা একদিকে যেমন আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংকট বাড়াচ্ছে, তেমনি সরকারের জন্যও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য কিছু নিয়ম-কানুন কঠোর করা হয়েছে, তবে তা পরিস্থিতি দ্রুত উন্নত করার জন্য যথেষ্ট হচ্ছে না।

কেএইচ

পাঠকের মতামত:

অর্থনীতি এর সর্বশেষ খবর

অর্থনীতি - এর সব খবর



রে