ঢাকা, মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪
Sharenews24

প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে নতুন জটিলতা

২০২৪ অক্টোবর ১০ ১৯:২৮:০১
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে নতুন জটিলতা

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রশাসনে এমনিতে কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন নিয়ে এক ধরনের স্থরিবতা বিরাজ করছে। যে কাজ একদিনে হওয়া কথা, সেই কাজ সাত দিনেও হচ্ছে না। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ রয়েছে।

এরমধ্যে সরকারের চারজন উপদেষ্টা তাঁদের মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের অধীন দপ্তরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি ও পদায়নের আগে তাঁদের সম্মতি নিতে বলেছেন। ফলে ওই সব সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাদের বদলি ও পদায়ন নিয়ে নতুন করে জটিলতা তৈরি হয়েছে।

এ চার উপদেষ্টার হাতে ১০টি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব রয়েছে। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন স্থানীয় সরকার এবং ভূমি উপদেষ্টা হাসান আরিফ। তিনি তাঁর সম্মতি ছাড়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়ন না করতে প্রধান উপদেষ্টাকে চিঠি দিয়েছিলেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে সেই চিঠি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

বদলি-পদায়নে সম্মতি নিতে বলা আরেক উপদেষ্টা হলেন শিল্প মন্ত্রণালয় এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা আদিলুর রহমান খান। এ বিষয়ে আদিলুর রহমান খান বুধবার সচিবালয়ে ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় যোগ দেওয়ার আগে মুচকি হেসে বলেন, ‘ভালো থাকবেন, কথা হবে।’এরপর খানিকটা সময় নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে এই মাসের শেষে কথা বলব।’

এই চার উপদেষ্টার মন্ত্রণালয়ের বাইরেও অন্যান্য সরকারি দপ্তরে কর্মকর্তাদের পদায়নে ঝামেলায় পড়ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ তাঁর বিভাগে কর্মকর্তাদের বদলি-পদায়নের আগে তাঁর সম্মতি নিতে বলেছেন বলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।

এক কর্মকর্তা জানান, একজন অতিরিক্ত সচিবকে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনে পদায়নের ফাইল প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে পাঠানো হলে ওই ফাইলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সম্মতি নেওয়ার পরামর্শ দেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে সংযুক্ত উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার।

পরে ওই কর্মকর্তাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ওই কর্মকর্তা উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করলেও মতামত দেননি উপদেষ্টা। ফলে এখনো তাঁর পদায়ন হয়নি।

প্রশাসনে স্থবিরতা

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বঞ্চিত পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে কয়েক ধাপে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। গত সরকারে নিয়োগ পাওয়া পাঁচ সিনিয়র সচিব ও ১০ জন সচিব এখন ওএসডি রয়েছেন।

এ ছাড়া গ্রেড-১ ভুক্ত এবং অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের বেশ কিছু কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন স্তরের আড়াই শতাধিক কর্মকর্তাকে ওএসডি করে রাখা হয়েছে। সিনিয়র সচিব, সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার এত কর্মকর্তাকে একসঙ্গে এর আগে কখনো ওএসডি করে রাখা হয়নি। ক্ষমতার পালাবদলের পর গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে আগের সরকারের নিয়োগপ্রাপ্তদের ওএসডি করায় বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের শীর্ষ পদ ফাঁকা রয়েছে।

বর্তমানে তিনটি মন্ত্রণালয় এবং চার বিভাগে সচিবের পদ ফাঁকা রয়েছে। এগুলো হলো পরিকল্পনা বিভাগ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ ছাড়া পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগে সচিব পদমর্যাদায় একজন সদস্যের পদ ফাঁকা রয়েছে। ডিসি হিসেবে নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়ার পর তাঁদের নিয়োগ বাতিল করায় আট জেলার ডিসির পদও ফাঁকা।

এদিকে, সচিব পদে নিয়োগ দেওয়ার পরদিন ওই নিয়োগ বাতিল করা, ডিসি পদে নিয়োগের পরদিন নিয়োগ বাতিল করা এবং চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কয়েক দিন পর তা বাতিল করার ঘটনা জনপ্রশাসনে এখন প্রায়ই ঘটছে।

খাদ্য ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইলাহী দাদ খানকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর চুক্তিতে খাদ্যসচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন তাঁর নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

একইদিন (৩০ সেপ্টেম্বর) বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান এ কে এম মতিউর রহমানকে পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়। এরপর ০২ অক্টোবর তাঁকে ওএসডি করে সরকার।

গত ০৯ সেপ্টেম্বরউপসচিব পি কে এম এনামুল করিমকে সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরদিন এনামুলের নিয়োগ বাতিল করে সেখানে আরেকজনকে ডিসি পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে এনামুলকে ওএসডি করা হয়।

গত ১০ সেপ্টেম্বর একসঙ্গে ৩৪ জেলায় ডিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পরদিন সেখান থেকে ৮ জেলার ডিসিদের নিয়োগ বাতিল করে সরকার। চার ডিসির কর্মস্থল বদলে দেওয়া হয়। ওই আট জেলায় এখনো নতুন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

১৪ আগস্ট বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. মোকাব্বির হোসেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করে সরকার। এরপর ১৭ আগস্ট মোকাব্বিরকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব পদে বদলি করা হয়।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরে এপিডি অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক মন্ত্রণালয়ের কিছু উইংয়ে বেশি কর্মকর্তা থাকায় তাঁরা বসার জায়গা পাচ্ছেন না। কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে পদ খালি আছে, সেগুলোতে পদায়ন করা যাচ্ছে না। কারণ, পছন্দের কর্মকর্তা ছাড়া তাঁরা নেবেন না।

মিজান/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে