ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

ডিসি নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন হট্টগোল, বাতিল হচ্ছে দুই প্রজ্ঞাপন 

২০২৪ সেপ্টেম্বর ১০ ২৩:৫৫:৪১
ডিসি নিয়োগ নিয়ে নজিরবিহীন হট্টগোল, বাতিল হচ্ছে দুই প্রজ্ঞাপন 

নিজস্ব প্রতিবেদক: দুই দফায় দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। সোমবার ও মঙ্গলবার দুই প্রজ্ঞাপনে তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু বিতর্কিত হওয়ায় নিয়োগের একদিন পরই সিলেটের ডিসি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া পি.কে.এম এনামুল করিমকে প্রত্যাহার করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপসচিব শের মাহবুব মুরাদকে নিয়োগ দিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

উভয় প্রজ্ঞাপনে নিয়োগ পাওয়া বেশিরভাগ কর্মকর্তাই হাসিনা সরকারের ডিসি ফিটলিষ্টের কর্মকর্তা ও আগের সরকারের সুবিধাভোগীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপি-জামায়াত সমর্থক বলে চিহ্নিত ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তাদের।

বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি, অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘দালাল’দের ডিসি বানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে মুল ভূমিকা রেখেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি অনুবিভাগের দুই যুগ্মসচিব ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং কে. এম. আলী আযম। এই দুজনকে অন্যত্র বদলি ও ডিসি নিয়োগের দুটি প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানিয়েছে ডিসি পদ প্রত্যাশী বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের ক্ষুব্দ কর্মকর্তারা।

বিষয়টি নিয়ে আজ মঙ্গলবার দিনভর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে বিক্ষোভ ও হট্টগোল হয়েছে। এই দাবি নিয়ে রাতে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বঞ্চিতরা।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব ক্ষুব্দ কর্মকর্তাদের আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন এবং এই দুটি আদেশ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। এর প্রেক্ষিতে রাত ১০টার পর ক্ষুব্দ কর্মকর্তারা সচিবালয় ত্যাগ করেন।

আগেরদিন সোমবার ২৫ জন ডিসি নিয়োগ দেওয়া হলে সেখানে মাত্র ৩ জন বঞ্চিত কর্মকর্তা রয়েছেন বলে দাবি বিএনপি-জামায়াত সমর্থক কর্মকর্তাদের। পদায়ন করা সিলেটের ডিসিসহ বেশিরভাগ ডিসিই হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিল বলে অভিযোগ নিয়োগপ্রত্যাশীদের।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে আরও ৩৪ জেলায় নতুন ডিসি পদায়ন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করলেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ডিসির পদ প্রত্যাশী বিসিএস ২৪, ২৫ ও ২৭ ব্যাচের ক্ষুব্দ কর্মকর্তারা দুপুরে এপিডি অনুবিভাগের দুই কর্মকর্তার ড. জিয়াউদ্দিন আহমেদ এবং কে. এম. আলী আযমের রুমে প্রবেশ করে জানতে চান-কিভাবে এই ধরণের ব্যক্তিদের ডিসি নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হল?

এই সময় যুগ্মসচিব কে. এম. আলী আযমও উত্তেজিত হয়ে উঠলে বঞ্চিতরাও ক্ষেপে যান। এই সময় কেএম আলী আজম জানান, মন্ত্রিপরিষদ সচিবের আপত্তির কারণে ‘বঞ্চিত’দের ডিসি করা যায়নি। এতে আরও উত্তেজিত হয়ে উঠেন কর্মকর্তারা। শুরু হয় হট্টগোল। এনএসআইয়ের একজন কর্মকর্তা মোবাইন ফোনে ভিডিও ধারণ করতে গেলে ফোন ছিনিয়ে নেন বঞ্চিতরা। এই সময় ওই কর্মকর্তার সঙ্গে ধস্তাধস্তিও হয়।

এই সময় যুগ্মসচিব আলী আজম নিজের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃ্খলাবাহিনীকে খবর দিলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পুলিশ, ও সেনা সদস্যরা চলে আসেন। আলী আজম ও জিয়া উদ্দিনের কক্ষের সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরাও অবস্থান নেয় ঘটনাস্থলে। হট্টগোলের সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিব নতুন নিয়োগ পাওয়া ডিসিদের ব্রিফিং অনুষ্ঠানে ছিলেন।

এরপর বঞ্চিত কর্মকর্তারা দুপুর তিনটায় এই দুই কর্মকর্তার রুম অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের মহাসচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমানের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তিনি চলে গেলে পরিস্থিতি আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এই সময় বঞ্চিতরা একজোট হয়ে দুই যুগ্মসচিবকে সঙ্গে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কক্ষে যাওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

এই সময় কর্মকর্তাদের রোষ থেকে নিজেকে বাঁচাতে যুগ্মসচিব কে. এম. আলী আযম পাশ্ববর্তী রুমের টয়লেটে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেন। প্রায় ২ ঘন্টা পর সিনিয়র কর্মকর্তারা তাকে বের করেন। পরে দুই কর্মকর্তাকে সঙ্গে নিয়ে বিকাল ৫ টার দিকে প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বঞ্চিতরা।

প্রায় এক ঘন্টা বৈঠকে ডিসি পদে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তারা আগের সরকারের সুবিধাভোগী এবং বিভিন্ন মন্ত্রী-সচিবের একান্ত সচিব (পিএস) ছিলেন, মাঠপ্রশাসনে থাকাকালে অনিয়ম দুর্নীতি করেছেন তা তুলে ধরে প্রজ্ঞাপন বাতিলের দাবি জানাতে থাকেন। সেখানে বঞ্চিতরা দাবি তুলে বলেন, যেহেতু নব নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে বেশিরভাগই বিগত আওয়ামী সরকারের মদদপুষ্ট তাই দুটি প্রজ্ঞাপনই বাতিল করে মেধা, যোগ্যতা ও সততার ভিত্তিতে নতুন করে জেলা প্রশাসক পদায়ন করতে হবে।

আলোচনার পর্যায়ে বঞ্চিতদের দাবিকে যৌক্তিক বলে মেনে নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেস উর রহমান সবাইকে আশ্বস্থ করেন যে তারা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলবেন এবং এই দুটি আদেশ বাতিলের ব্যবস্থা করবেন। এরপর বঞ্চিতরা শান্ত হন।

ডিসি নিয়োগ পাওয়া কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ধরে বঞ্চিতরা বলেন, তাদের কয়েকজনের শেয়ারবাজারে মোটা অংকের বিনিয়োগ, সহকর্মীকে হেনস্তা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা, সাবেক মন্ত্রীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা দীর্ঘদিন জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোতে দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। আবার এখন নতুন করে পেলেন হিসেবে ডিসি নিয়োগ।

বঞ্চিত কর্মকর্তারা বলেন, ডিসি ফিটলিস্ট করার সময় বলা হয় মাঠ প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি), ইউএনও, এসিল্যান্ড পদে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কিন্তু ডিসি নিয়োগ পেয়েছেন এমন অনেকের মাঠ প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই, এমন দাবি করেছেন বঞ্চিত কর্মকর্তারা।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে