ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে যা বলেছে গার্ডিয়ান

২০২৪ সেপ্টেম্বর ০৩ ১০:৫৩:১৪
শেখ হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে যা বলেছে গার্ডিয়ান

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন ধরে ভারতের অন্যতম মিত্র ছিলেন। চলতি বছরের আগস্টে হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। এই প্রেক্ষাপটে ভারত এখন কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। হাসিনার দীর্ঘদিনের সমর্থক দিল্লি এখন নতুন বাস্তবতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চাপে রয়েছে।

আগস্টের গোড়ার দিকে, বাংলাদেশজুড়ে ছাত্রদের বিক্ষোভ তীব্র আকার ধারণ করে। রাস্তায় রাস্তায় মৃতদেহ ছড়িয়ে পড়ে আন্দোলন তীব্র আকার হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত একটি হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতে চলে যান। তার সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সহযোগী বা সিনিয়র মন্ত্রী ছিলেন না। তখন থেকেই সেখানেই অবস্থান করছেন।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভ থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলনই হাসিনার পতনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার সরকার বিক্ষোভকারীদের ওপর দমন-পীড়ন চালায়, শত শত নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়। এমতাবস্থায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা তার বাসভবন ত্যাগ করলে সারা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ উল্লাসে ফেটে পড়ে। কিন্তু দিল্লিতে হাসিনার এই পতনকে বিপর্যয় হিসেবে দেখা হয়।

ভারত দীর্ঘদিন ধরে শেখ হাসিনার অন্যতম প্রধান সমর্থক। ১৯৭৫ সালে তার পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাকে ভারতে আশ্রয় দেওয়া হয়। সেখানে ৬ বছরেরও বেশি সময় সপরিবারে নির্বাসিত ছিলেন। দিল্লির সঙ্গে হাসিনার ব্যক্তিগত সম্পর্ক এবং দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতার মাধ্যমে শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক মিত্রে পরিণত করেন।

তবে, ভারতীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ রয়েছে, যা হাসিনার শাসনকে আরও কঠোর ও কর্তৃত্ববাদী করে তুলেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে এবং নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে বিদেশি শক্তিকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে দিল্লি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় ফেরার পরও হাসিনাই প্রথম তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন।

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের নীতি পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তী সরকার এখন বাংলাদেশে দায়িত্ব পালন করছেন। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. তারা এই সময়ে হাসিনা সরকারের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে চায়। দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ শুরু করেছে নতুন সরকার।

এদিকে, ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়েও উঠছে নানা প্রশ্ন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও অপহরণের শতাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সাম্প্রতিক বিক্ষোভের সময় হত্যার জন্য তাকে তদন্ত করছে। বাংলাদেশ সরকার তার কূটনৈতিক পাসপোর্টও বাতিল করেছে, যে পাসপোর্ট দিয়ে তিনি ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।

শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি অভিযোগ করেন, শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নিয়ে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছেন।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শেখ হাসিনার ওপর ভারতের অতিরিক্ত নির্ভরতা এখন তাদের জন্য সংকটজনক হয়ে উঠেছে। ভারত এখন একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে রয়েছে এবং বাংলাদেশের জনগণের গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং নতুন সরকারের সাথে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে।

সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারত যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে তা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়ায় যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। পরিবর্তে, দিল্লি স্থিতিশীলতা এবং আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের কথা বলে, যা বাংলাদেশে নতুন সরকারের লক্ষ্যগুলির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।

বাংলাদেশ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আলী রিয়াজ বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকারের আকস্মিক পতন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ব্যর্থতার ফলে হয়েছে। পতনে হতবাক এবং অপ্রস্তুত ভারত। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক পরিস্থিতিতে এটি ভারতের জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে এসেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ছে, যা ভারতের জন্য উদ্বেগের বিষয়।

আলী রিয়াজ বলেন, ভারত বাংলাদেশের ব্যাপারে খুবই সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েছে, যেখানে তারা রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্র সম্পর্কের পরিবর্তে শুধুমাত্র শেখ হাসিনা ও তার দলের ওপর নির্ভরশীল। ফলে ভারত এখন নিজের তৈরি করা সংকটের সম্মুখীন।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের কয়েক সপ্তাহে মোদি সরকারের প্রতিক্রিয়া বাংলাদেশে নতুন সরকারের গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রচেষ্টার প্রতি সামান্যই মনোযোগ দেয়। বরং ভারত দেশের স্থিতিশীলতা এবং হিন্দু সংখ্যালঘুদের হুমকির বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

এছাড়াও এই সপ্তাহে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেনের সাথে মোদির ফোন কলের পরে ভারতের এক বিবৃতিতে উদ্বেগটি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছিল। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের অফিসের বিবৃতিতে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করা হয়নি, ভারতীয় পক্ষ বলেছে যে দুই নেতা ‘স্বাভাবিকতা’ এবং দ্রুত আইন-শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

ভারতের এ ধরনের মন্তব্য বাংলাদেশে ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। একজন বাংলাদেশি বিশ্লেষক বলেছেন, ‘আমরা স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি না, আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

এএসএম/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে