ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

চোরাচালানের নগরী ছাগলনাইয়ায় কমিশন পেয়ে চাঙ্গা পুলিশ ও বিজিবি

২০২৪ জুন ২৭ ২২:১২:৪৭
চোরাচালানের নগরী ছাগলনাইয়ায় কমিশন পেয়ে চাঙ্গা পুলিশ ও বিজিবি

মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মজুমদার:ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরাচালানে চিনি, শাড়ি ও মাদকদ্রব্য আনার জন্য ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা অত্যন্ত নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে প্রতিদিন দেশে ঢুকছে এসব চিনির চালান। অভিযোগ রয়েছে, এ চক্রে জড়িত স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ, যাদের ছত্রচ্ছায়ায় চিনি চোরাচালানের নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে ছাগলনাইয়ার সীমান্ত এলাকা।

ছাগলনাইয়া পৌরসভা ও মহামায়া ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থান ঘুরে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিজিবির সহায়তায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার চিনি আসে ছাগলনাইয়াসহ ফেনীর বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে। এছাড়া চিনি, মাদক ও শাড়ি চোরাচালানের ক্ষেত্রে পুলিশ যাতে অনিরাপদ না হয়ে ওঠে সেজন্য হাতে রাখা হয় পুলিশকেও। এসব ভারতীয় চিনির চালান বাংলাদেশে আনার জন্য সীমানাপ্রাচীরের ৫-১০ গজ কাঁটাতার কেটে ফেলা হয়েছে। এসব কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত অবাধে দেশের অভ্যন্তরে চিনি ঢুকছে চোরাকারবারিদের মাধ্যমে। রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় চোরাকারবারিদের বিশাল সিন্ডিকেট বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলেও জানা যায়। এসব চোরাচালানে যারা জড়িত, তারা বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। কিছুদিন আগে ‘নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা’ এমন কিছু লোকজন চিনির বস্তা বহন করে এখন লাখ টাকা গুনছেন। ভারতের খুচরা বাজারে প্রতিকেজি চিনি বাংলাদেশি টাকায় ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হলেও ছাগলনাইয়াসহ ফেনীর চওড়া দ্রব্যমূল্যের বাজারগুলোর বেশিরভাগ দোকানে ভারতীয় চিনি ক্রেতাদের জন্য বাজারে কোনো সুফল বয়ে আনছে না। পাশাপাশি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশের চিনিশিল্পের ওপর।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী ও চিনি চোরাচালানকারীদের নিকট থেকে ছদ্মবেশে নেয়া তথ্য অনুযায়ী প্রায় প্রতিদিনই ভারত থেকে চিনি আসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও পুলিশের নিরাপত্তা প্রহরায়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক চোরাকারবারি ও কারবারের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকরা জানায় বিজিবি ও পুলিশকে মোটা অংকের কমিশন দিয়েই এ চিনি আনা হয়। এসব চোরাচালানের কমিশন প্রদানের শর্তে বিজিবি-পুলিশের মৌন সম্মতি ছাড়া অন্যান্য সহায়তার কথা থাকলেও সবসময় তাদের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যায় না। তবে শর্তের মধ্যে চোরাচালান তারা ধরবে না এটা নিশ্চিত হওয়া যায়। মাঝে মধ্যে স্থানীয় বিজিবি ও পুলিশ ছাড়া এলাকার বাইরের কোন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা টের পেলে তখন চিনি জব্দ করে নেয়।

ইউপি সদস্যরাও জড়িত

গত ২৫ মে জেলা এনএসআই কার্যালয়ের সহায়তায় ছাগলনাইয়ার মহামায়া ইউনিয়নের দেবপুর এলাকায় এক ইউপি সদস্যের খামার বাড়ী থেকে ১০ হাজার কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়।

জানা যায়,২৪ মে রাতে জেলা এনএসআই কার্যালয়ের দেয়া এক গোপন সংবাদের ভিত্তিতে স্থানীয় পশ্চিম দেবপুর ওবায়দুল মেম্বারের খামার বাড়ী যৌথ অভিযান পরিচালনা করেন এনএসআই ও ছাগলনাইয়া থানা পুলিশের একটি দল। রাতভর অভিযান শেষে সকালে ওই বাড়ি থেকে ১০ হাজার কেজি ভারতীয় অবৈধ উদ্ধারকৃত চিনির আনুমানিক মূল্য ১৩ লাখ টাকা। ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম ১৯৮ বস্তায় ১০ হাজার কেজি চিনি উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছে।

স্থানীয়রা জানায়, চিনির চোরাচালানে অধিকাংশ সময়ই নেতৃত্ব দেয় ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি মেম্বাররা।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক ইউপি মেম্বার প্রতিবেদককে জানায়, পুলিশ ও বিজিবিকে টাকা দিয়েই আমরা ব্যবসা করছি। চিনি বহনকারী শ্রমিক ও পরিবহনের খরচও সাধারণ খরচের চেয়ে ৬-৭ গুণ। পুলিশ-বিজিবিকে ম্যানেজ করার পর সকল খরচ দিয়ে আমাদের তেমন কোন লাভ থাকে না বললেই চলে। তাছাড়া এলাকার ছেলেরা এ ব্যবসা চলার কারণে অন্তত বেকারত্ব থেকে মুক্তি পেয়ে কিছু করে জীবন চালাতে পারছে। এখানে তো আর মাদক আসছে না। মাদক এলে তো আমরাই প্রতিরোধ করতাম। আমি মনে করি এ ব্যবসার বিরুদ্ধে না লেগে আরো উৎসাহ দেয়া উচিত।

তিনি জানান, ৫০ কেজির প্রতিটি চির বস্তা সীমান্ত থেকে গাড়িতে তুলে দেয়া পর্যন্ত প্রতি বস্তায় একজন শ্রমিককে ৩শ টাকা পারিশ্রমিক দেয়া হয়। বস্তাপ্রতি বিজিবি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা ও পুলিশ নেয় ১০০ টাকা করে।

পুলিশ-বিজিবির চওড়া কমিশন

চিনি চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত আরো একজন জানায়, এখানে ব্যবসায়ীদের লাভ একবারে শূণ্যের কোটায়। বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিনির দামে যে পার্থক্যটা আছে সেটা বিজিবি, পুলিশ, শ্রমিক ও পরিবহন খরচ দিয়ে প্রায় সমান হয়ে যায়। ছাগলনাইয়া থানার ওসি সুদীপ রায় কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রত্যেকটি চক্র মাসে ১০-১৫ হাজার টাকা পুলিশকে দিলেই হতো। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ফেনীর সোনাগাজী থানা থেকে ছাগলনাইয়ায় ওসি রদবদল হলে ছাগলনাইয়ায় ওসি হয়ে আসেন হাসান ইমাম। তখন প্রতি মাসের আগের ধার্যকৃত এমাউন্ট হাসান ইমাম আর মানে না। বস্তাপ্রতি তখন ৫০ টাকা আবার ক্ষেত্র বিশেষে ১০০ টাকা ধার্য করে দেয়া হয়।

কার মাধ্যমে পুলিশ ও বিজিবির কাছে টাকা পৌঁছানো হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, পুলিশ ও বিজিবির আলাদা প্রতিনিধি/সোর্স নিয়োগ দেয়া আছে। তারাই কত বস্তা এলো সেটা হিসাব করে পুলিশ ও বিজিবির জন্য বরাদ্দের টাকা কালেকশন করে নেয়। পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে হাতে হাতে কোন লেনদেন হয় না। তবে টাকা ঠিকঠাক ভাবেই নিয়মিত দিয়ে যেতে হয়। টাকা দিতে দেরি হলেই পুলিশ-বিজিবির ধরপাকড় শুরু হয়ে যায়।

গত ৯ মার্চ ২০২৪ মধ্যরাতে ছাগলনাইয়া উপজেলার চৌধুরী রাস্তার মাথায় ৯০০ কেজি ভারতীয় চিনি বোঝাই একটি ট্রাক জব্দ করেছে ফেনী ৪ বিজিবির একটি টহল দল। বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি টের পেয়ে ট্রাকটির চালকসহ চোরাকারবারিরা পালিয়ে যাওয়ায় এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। চিনিসহ ট্রাকটি দুপুরে জব্দ হলেও এই ঘটনায় রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্তও থানায় কোনো মামলা হয়নি। ফেনীস্থ-৪ বিজিবির অধিনায়ক লেপ্টেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেছেন, চিনিগুলো কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়েছে। তখন স্থানীয়রা জানান, আমাদের এলাকার বাইরে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন বিশেষ অভিযান না এলে চিনি ধরা পড়ে না। নাহলে চিনি তো প্রতিদিনই নামে।

গত ৭ জুন ছাগলনাইয়া বাজারের উত্তর পাশের একটি গুদামে ট্রান্সপোর্ট অভিযান চালান বিজিবি, পুলিশ ও ভূমি কর্মকর্তারা। এই যৌথ অভিযানে ২৫৩ বস্তায় ১২ হাজার ৬৫০ কেজি চিনি জব্দ জানায় ছাগলনাইয়া থানা পুলিশ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছাগলনাইয়া বাজারের উত্তর পাশে জাহাঙ্গীরের গোডাউনে এসে প্রথমে চিনি জমা হয়। এরপর পাইকারি আড়তদারদের কাছে পৌছে যায়। চালান ঢুকার ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় জাহাঙ্গীরই পুলিশের সঙ্গে চুক্তি করেন। তবে মাঝে মাঝে পুলিশকে কমিশন দেয়া ছাড়া বা চুক্তিতে উল্লেখিত পরিমানের চেয়ে বেশি চিনি ঢুকলে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এদিকে ছাগলনাইয়া-পরশুরাম সড়কের রৌশন ফকির মাজারের দক্ষিণ পাশে কৃষি বিতান নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গোডাউনেও চিনি মজুদ রাখার তথ্য মিলেছে।

তবে চোরাকারবারিদের কাছ থেকে পুলিশের কমিশন নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ছাগলনাইয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. হাসান ইমাম জানান, চোরাচালানকারীদের কাছ থেকে ঘুষ বা কমিশন নেয়ার কোন প্রশ্নই আসে না। আমারা আমাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছি। কোন চালানের খবর পাওয়া মাত্রই আমরা তা জব্দ করে মামলা দিচ্ছি। তবে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্ব যেহেতু বিজিবির তাই এর পুরো দায়িত্ব আমাদের নয়। বাকিটা বিজিবিই জানে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও এলাকাবাসীর ভাষ্যমতে সন্ধ্যা হলেই সীমান্তবর্তী এ উপজেলার সকল গ্রাম যেন জেগে ওঠে। সারা রাত চিনি চোরাকারবারিদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে সীমান্ত এলাকা। পুরো ছাগলনাইয়া উপজেলা এখন চিনির নগরী। ভারত-বাংলাদেশের ১০২ কিলোমিটার ফেনীর সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধপথে আসছে ভারতীয় চিনি। এসব অবৈধ ও নিম্নমানের চিনি আনার নিরাপদ রুট হিসেবে ছাগলনাইয়া, ফুলগাজী ও পরশুরামের সীমান্তকে ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা।

সরেজমিনে অনুসন্ধানে গিয়েও দেখা যায়, দিনে কিংবা রাতে একদম প্রকাশ্যেই চিনি নামছে সীমান্তের বিভিন্ন শূণ্য রেখা দিয়ে। অনুসন্ধানে গিয়ে যশপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিজিবিকে চিনি চোরাকারবারিদের সঙ্গে কমিশন নিয়ে দরকষাকষি করতেও দেখা যায়। চিনি আনা ও পরিবহনরত অবস্থায়ও আশপাশের রাস্তায় একটু দূর দিয়ে বিজিবি টহলরত থাকে। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরাফেরা করতে দেখা যায় বিজিবিকে। সামনে দাঁড়িয়ে বিজিবিকে দাঁড় করানোর চেষ্টা করলেও পাশ কাটিয়ে চলে যায় বিজিবির মোটরসাইকেল। চোরাচালানের তথ্য জানাতে বিজিবির কর্মকর্তাদের মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করতে গেলে তারা তাদের ব্যক্তিগত নম্বর দেয়। অফিসিয়াল নম্বর চাইলে তারা বলে অফিসিয়াল নম্বর সবাইকে দেয়া যায় না। কিন্তু চিনি নামার সময় তাদের সে ব্যক্তিগত নম্বরে ফোন করলেও কখনও নম্বর বন্ধ পাওয়া যায় আবার কখনও শতবার ফোন দিলেও রিসিভ হয়নি।

চোরাচালানে ঝুঁকছেন অন্যান্য পেশাদাররা

ছাগলানাইয়ার বিভিন্ন এলাকার কৃষি, নির্মাণ ও পরিবহন শ্রমিকরা এখন তাদের পেশাগত কাজ বাদ দিয়ে চিনি চোরাচালানের বিভিন্ন কাজে আত্মনিয়োগ করেছে। প্রতিবস্তা চিনি ভারতীয়দের হাত থেকে গাড়িতে উঠিয়ে দেয়া পর্যন্ত শ্রমিকদের ৩০০ টাকা দেয়া হয়। তারা জানায়, স্বাভাবিকভাবে একদিনে তারা যে পরিমান টাকা উপর্জন করে চোরাচালান সংক্রান্ত কাজ করলে সে টাকা ৩০ মিনিট কিংবা ১ ঘণ্টায় উপার্জন করা যায়। চিনি বহনের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা বলে, এতে লুকচুরির কিছুই নেই। বিজিবি সদস্যরাই আমাদের এ কাজে আসতে মাঝে মধ্যে উৎসাহ দেয়। তারা বলে, ‘সারাদিন গাধার মতো খেঁটে যেখানে ৪০০-৫০০ টাকা উপার্জন করা কষ্টকর হয়ে যায় সেখানে এক ঘণ্টার ব্যবধানেই হাজার টাকা উপার্জন হয়’। তবে শ্রমিকরা ২-৩ ঘণ্টা কাজ করলে তাদের আয়ের পরিমাণ দাড়ায় ৩-৪ হাজার টাকা।

তারা আরও জানায়, বাংলাদেশের বিজিবি ও পুলিশ এসব চোরাচালান থেকে ঘুষ নিলেও ভারতীয় বিএসএফ কোন ঘুষ নেয় না। মাঝে মাঝে চিনির চালান যখন বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে তখন তারা চিনির বস্তা কেটে ফেলে দেয়। তখন সুযোগ বুঝে ফেলে দেয়া বস্তা থেকে স্থানীয় লোকজন চিনি সংগ্রহ করে নিয়ে আসে।

ছাগলনাইয়ার দেবপুর, জয়নগর, যশপুর, মটুয়া ও পূর্ব ছাগলনাইয়াসহ প্রায় সকল গ্রামে সড়ক থেকে সীমান্তের শূন্য রেখা পর্যন্ত অস্থায়ী সড়ক নির্মাণ করেছে চোরাকারবারিরা। ভারতীয় বাহিনীর হাতে ২৩ বাংলাদেশি আটক থাকা অবস্থায়ও থেমে থাকেনি ছাগলনাইয়ার বিভিন্ন এলাকার চোরাচালান।

চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের ৯৯ পিলার পূর্ব ছাগলনাইয়া সীমান্ত থেকে ২৩ জন বাংলাদেশিকে চিনি চোরাচালানে যুক্ত থাকার অভিযোগে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী-বিএসএফ। ভারতের সমরগঞ্জ ও বাংলাদেশের ৯৯ পিলারের কাছে চোরাচালানের চিনির বস্তা বহনের কাজ করছিল শতাধিক শ্রমিক। এসময় বিএসএফ ধাওয়া করে। অনেকে পালিয়ে সীমান্তের বাংলাদেশ অংশে আসতে পারলেও প্রায় ২৩ জন শ্রমিক বিএসএফের হাতে ধরা পড়ে। তাদের কাছ থেকে ১২৫টি ব্যাগে মোট ৬ হাজার ২৫০ কেজি চিনি উদ্ধার করা হয়েছে। জব্দ করা হয় ১৭টি মোবাইল ফোন। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেপ্টেন্যান্ট কর্নেল শেখ মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা বলেন, দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবি ও বিএসএফের মাঝে পতাকা বৈঠকে বিএসএফ জানায়, চোরাকারবারের অভিযোগে ২৩ বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করা হয়েছে।

২৩ জন বাংলাদেশিকে ভারতীয় বাহিনী আটক করে নিয়ে যাওয়ার পরও কয়েকদিন স্বজনদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগের অপেক্ষায় ছিলেন স্থানীয় বিজিবি ও পুলিশ।

ফেনী-৪ বিজিবির অধিনায়ক লেপ্টেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো.বদরুদ্দোজা জানান, ফেনীর ১০২ কিমি সীমান্তে মে মাসে ৩৭ হাজার ৭৫০ কেজি ভারতীয় চিনি জব্দ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত কোনো না কোনো স্থান থেকে চোরাচালান চক্রের সদস্যদের ভারতীয় বিভিন্ন মালামালসহ আটক করা হচ্ছে।

চোরাচালানে কদর কমেছে দেশীয় চিনির

ফেনীর পাইকারি আড়তের কিছু ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন দোকানে ভারতীয় চিনি বিক্রি করার কারণে দেশীয় চিনির কদর কমেছে। ভারতীয় চিনির দানা বড়, খুচরা পর্যায়ে বিক্রয়ে লাভ বেশি ও বাংলাদেশি চিনির চেয়ে তেজস্ক্রীয়তা বেশি হওয়ার কারণে চাহিদা বেশি । ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারতের সীমান্ত থেকে চোরাই চিনি প্রতি বস্তা পাইকারি দরে ৫ হাজার ৫০০ টাকা করে কেনা হয় এবং খুচরা দোকানির কাছে ৫ হাজার ৬০০ থেকে ৫ হাজার ৬৫০ টাকায় বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে প্রতি কেজি ১২২ থেকে ১২৩ টাকা বিক্রি করেন। দেশি চিনি প্রতি বস্তা পাইকারি দরে ৬ হাজার টাকা করে কেনা হয় এবং খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ৬ হাজার ৬০০ টাকা বা ৮০০ টাকা বিক্রি করা হয়।

তবে ছাগলানাইয়া পৌর শহরের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ভারত থেকে চোরাচালানে আসা চিনি সরাসরি ফেনীর বড় বাজারে চলে যায়। আমরা ফেনীর আড়ৎ থেকে চিনি এনে বিক্রি করতে হয়। কোনটা ভারতীয় আর কোনটা দেশি আমরা এ সম্পর্কেও অবগত নই। তবে ছাগলনাইয়ার বাজারগুলোতে মাঝে মাঝে সাদা পোশাকে কিছু লোক এসে চিনির পাইকারি বাজার তালাশ করে। এসব লোকজন স্থানীয় বিজিবি কিংবা পুলিশের লোক নয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ হলেও তারা এলাকার বাইরে থেকে এসে খোঁজ করে অভিযান চালায়।

তবে চোরাচালানে বিজিবির সম্পৃক্ততা ও কমিশন নেয়ার অস্বীকার করে ফেনীর ৪ বিজিবির অধিনায়ক লেপ্টেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা বলেন, যেখানে বিজিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সীমান্তে চোরাচালান রোধ ও পাহারা দেওয়ার জন্য, সেখানে চোরাচালানে বিজিবির সম্পৃক্ততা বা সহযোগিতা থাকবে, এটি নিঃসন্দেহে স্থানীয়দের অপপ্রচার। বিজিবি প্রতিনিয়ত ফেনীর ১০২ কিলোমিটার সীমান্তে চোরাচালান রোধে কাজ করছে।

ফেনী -১ আসনের সংসদ সদস্য আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম জানান, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো। একদিনে তো এসব ঠিক করা যায় না। তবে আমরা প্রতিনিয়ত সীমান্তে চোরাচালান রোধে পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছি। সীমান্তের চোরাচালান রোধে বিজিবি, পুলিশ ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে নির্দেশনা দেয়া আছে।

মামুন/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে