ঢাকা, সোমবার, ২০ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

কৃষি ব্যাংক থেকে মৃতদের নামে ভূতুড়ে ঋণ!

২০২৪ জুন ১৪ ০০:১৪:০৪
কৃষি ব্যাংক থেকে মৃতদের নামে ভূতুড়ে ঋণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে মারা যাওয়া ৫ জনসহ ৬ জন মৃত ব্যক্তিকে ঋণ দিয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের। পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায় এমন ঘটনা ঘটেছে।

মূলত মৃত ব্যক্তিদের নাম- ঠিকানা ব্যবহার করে ২০১৪-১৫ সালে ব্যাংক থেকে বিভিন্ন অঙ্কের ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। এদের আবার কারও কারও নামে রয়েছে একাধিক ঋণ।

জানা গেছে, ঋণগ্রহীতা ব্যক্তিদের সবার বাড়ি উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনেরা কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখায় যোগাযোগ করলে কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করছেন।

ব্যাংক ও ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ১৯৮৪ সালের ১১ ডিসেম্বর কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার কার্যক্রম শুরু হয়।

ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাউফলের সূর্য্যমনি ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের কেতাব উদ্দিন হাওলাদারের তিন ছেলে জবেদ আলী, হজরত আলী ও রহম আলী ২০১৪ সালে ওই শাখা থেকে কৃষিঋণ নিয়েছেন। তাদের মধ্যে জবেদ আলীর নামে ২৫ ও ৩০ হাজার টাকার দুটি, হজরত আলীর নামে ৪৫ হাজার ও রহম আলীর নামে ৫০ হাজার টাকার ঋণ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

কিন্তু জবেদ আলী ১৯৬০, হজরত আলী ১৯৬৫ ও রহম আলী ১৯৬৬ সালে মারা যান।

জবেদ আলীর ছেলের ঘরের নাতনি মোমেলা বেগম বলেন, তিনি তার দাদাকে দেখেননি। ২০১৪ সালে দাদার নামে ঋণ নেওয়া হয়েছে তাও তারা জানেন না।

হজরত আলী হাওলাদারের ছেলের ঘরের নাতি মো. ফকরুল ইসলাম (৫৭) গণমাধ্যমকে বলেন, আমার তিন দাদার নামে লোন। আমি জন্মের পরে তাদের দেখি নাই।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে ব্যাংক থেকে নোটিশ আসার পরে আমরা লোন সম্পর্কে অবহিত হই। এরপর বারবার কৃষি ব্যাংকে যোগাযোগ করে এই ঋণের বিষয়ে চাইলেও ম্যানেজাররা কোনো প্রতিকার করে নাই।

কালিকাপুর গ্রামের আহম্মদ আলী হাওলাদারের ছেলে মো. জয়নাল হাওলাদার মারা যান ১৯৬৯ সালে। তার নামে ২০১৪ সালে ৪০ হাজার টাকার কৃষিঋণ তোলা হয়েছে।

জয়নালের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্য মো. আবুল বাশার (৬৪) বলেন, তার বাবার মৃত্যুর সময় ব্যাংকের শাখাই ছিল না। ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়ে জানতে পারেন, বাবার নামে ২০১৪ সালে ঋণ তোলা হয়েছে।

অপর ঋণ গ্রহীতা জয়নাল আবেদীন হাওলাদারের ছেলে আসাল উদ্দিন হাওলাদার (৮০) হেসে হেসে কালবেলাকে বলেন, আমার বাবা মারা গেছেন ৭০-৮০ বছর আগে। আমার বয়সও ৮০ বছর। সেই বাবার নামে একটা লোন, এই লোন তো আমরা নিই নাই, লোন সম্পর্কে কিছু জানি না। একি আজব ঘটনা!

কালিকাপুর গ্রামের মো. বাবুল মৃধা (৪৪) ঢাকায় থাকেন। তিনি কোনো দিন কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেননি। তার নামে কেশবপুর শাখা থেকে ২০১৪ সালে ১৭ হাজার ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে। তার ছোট ভাই ফারুক হোসেন মৃধার (৪২) নামে ৭৫ ও ১৭ হাজার টাকার দুটি ঋণ উত্তোলন করা হয়েছে।

আবদুল করিম মৃধা নামের এক ব্যক্তির নামে ৩৫ হাজার টাকার ঋণ উত্তোলন দেখানো হয়েছে। গ্রাম কালিকাপুর উল্লেখ করা হলেও তার বাবার নাম উল্লেখ করা হয়েছে রুস্তম আলী মৃধা। অথচ এ নামের কাউকে কালিকাপুর গ্রামে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে একই এলাকার মৃত আব্দুল ছত্তার মৃধার ছেলে বাবুল মৃধার নামে রয়েছে ১৭ হাজার টাকার ঋণ। বাবুল মৃধার স্ত্রী হামিদা বেগম কালবেলাকে জানান, তার স্বামী কৃষি ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ গ্রহণ করেননি।

তবে ঋণের জন্য আবেদন করেছিলেন। তারপর একদিন ঋণ পাশ হয়েছে জেনে ব্যাংকে গেলে ব্যাংক থেকে জানানো হয় আজকে টাকা পাবেন না। এরপর আর কখনো কৃষি ব্যাংকে যাননি এবং কোনো টাকা নেননি।

২০১৪ সালে কেশবপুর শাখার মাঠ কর্মকর্তা ছিলেন মো. শফিউর রহমান। পাঁচ বছর আগে তিনি অবসরে চলে গেছেন।

তার দাবি, তিনি কোনো মৃত ব্যক্তি কিংবা নামে-বেনামে কারও ঠিকানা ব্যবহার করে ঋণ দেওয়ার সুপারিশ করেননি।

এ বিষয়ে উপজেলার সূর্য্যমনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন বাচ্চু গণমাধ্যমকে বলেন, যাদের নামে লোন নেওয়া হয়েছে বলে জেনেছি তারা ৫০-৬০ বা ৭০ বছর আগে মারা গেছেন। একটা চক্র এ কাজ করছে জানিয়ে লোন নেওয়ার ঘটনাকে তিনি মিথ্যা, বানোয়াট ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে মনে করেন।

কৃষি ব্যাংকের কেশবপুর শাখার বর্তমান ব্যবস্থাপক হুসাইন মো. তাইফ আলম জানান, গত সপ্তাহে (মঙ্গলবার) ৪-৫জন লোক এসে তাকে বিষয়টি জানান। তারা ২০২০ সালে ঋণ পরিশোধের নোটিশ পেয়েছেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ঋণগুলো ২০১৪-১৫ সালে অনুমোদন করা হয়েছে। এরপর তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তারা বিষয়টি খুবই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন এবং বিষয়টি এখন তদন্তাধীন রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে কৃষি ব্যাংকের বিভাগীয় মহা ব্যবস্থাপক গোলাম মাহবুব গণমাধ্যমকে বলেন, মৃত ব্যক্তির নামে লোন মঞ্জুর হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তদন্ত কমিটি গঠন করেছি, তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।

শেয়ারনিউজ, ১৩ জুন ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে