ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

পুলিশ পরিচয়ে ডাকাত দলের তাণ্ডব

২০২৪ এপ্রিল ০৭ ১০:০২:১৫
পুলিশ পরিচয়ে ডাকাত দলের তাণ্ডব

নিজস্ব প্রতিবেদক : রূপনগরে বিরুলিয়া বেড়িবাঁধে অবস্থিত একটি ওয়ার্কশপে পুলিশ পরিচয়ে হানা দেয় ডাকাত দল। এসময় ওই ওয়ার্কশপের কর্মীদেরকে বেধরক মারধর করা হয়। এঘটনার চার দিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ। এছাড়া এরা ডাকাতির রহস্যও এখন পর্যন্ত উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ। সিসি ক্যামেরা ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ডাকাত দল শনাক্ত করা গেলেও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মারধরের শিকার ওয়ার্কশপের কর্মীরা বলছেন, পুলিশ পরিচয়ে প্রবেশ করা ডাকাত দলের সদস্যদের অন্তত একজনকে সেনাবাহিনীর লোগো থাকা গেঞ্জি পরে থাকতে দেখা গেছে।

গত মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই ওয়ার্কশপে হানা দেয় ১০ সদস্যের এই ডাকাত দল।

তারা সবাই ছিল লম্বা প্রকৃতির। এদের মধ্যে দীর্ঘকায়ী একজনকে স্যার বলে সম্বোধন করছিলেন অন্যরা। ডাকাত দলের অন্যদের উচ্চতা ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি থেকে ১০ ইঞ্চির মধ্যে। যে নীল রঙের পিকআপে লুটের মাল পাচার করা হয় সেটি চুরির বলে সন্দেহ করছেন তদন্তসংশ্লিষ্টরা।

ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রূপনগর থানার এসআই বখতিয়ার হোসেন খান গণমাধ্যমকে বলেন, রাস্তা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ১৬টি সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ডাকাত দলের বিষয়ে ধারণা পাওয়া গেছে। কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও ঘটনায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা যায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তার করা গেলে লুটের মালামাল উদ্ধার করা যাবে।

মামলার বাদী সিনোহাইড্রো কোম্পানির মিস্ত্রি মো. মনজু মিয়া জানান, ওয়ার্কশপটিতে তিনি প্রায় ৭ বছর ধরে কর্মরত। ঘটনার সময় তিনি ও সিকিউরিটি গার্ডসহ ৮ জন ওয়ার্কশপে ছিলেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কালো ও সাদা মাস্ক পরা আনুমানিক ১০ জন ডাকাত ছুরি, চাপাতি, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওয়ার্কশপে ঢুকে প্রথমেই গেটে নিয়োজিত সিকিউরিটি গার্ড চান মোহনের হাত-পা বেঁধে ফেলে।

তিনি জানান, এরপর অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মারধরের একপর্যায়ে ওয়ার্কশপে থাকা সবার হাত-পা বেঁধে সোয়া লাখ টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়। ডাকাতরা বরিশাল ও ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলছিল। ডাকাত দলের দীর্ঘকায় দেহের একজনকে অন্য ডাকাতরা স্যার-স্যার বলে সম্বোধন করছিল।

মনজু মিয়া বলেন, দীর্ঘকায় দেহের এক ডাকাতের হালকা হলুদ রঙের সেনাবাহিনীর লোগোযুক্ত হাফহাতা গেঞ্জি পরা ছিল। ওই ডাকাত জিম্মিদের বলেন, ‘আমরা থানা থেকে এসেছি, আমাদের কাজ আমাদের মতো করে করতে দাও।’ ডাকাতরা জিম্মিদের বেধড়ক পিটিয়ে মাথা না তোলার ভয় দেখিয়ে মাথা নিচু করে একটি রুমের ভেতরে নিয়ে বসিয়ে রাখে। রাত সাড়ে ৮টার দিকে ওয়ার্কশপে একটি গাড়ি ঢোকার শব্দ শুনতে পান জিম্মিরা। এর কিছুক্ষণ পর তালা ভাঙার শব্দ শুনতে পান তারা; এরপর গাড়িতে মালামাল তোলার আওয়াজ পাওয়া যায়।

মনজু মিয়া জানান, রাত সোয়া ১১টার দিকে লুটপাট শেষ করে ডাকাতরা। যাওয়ার সময় যে কক্ষে জিম্মিদের আটকে রাখা হয়েছিল সেই কক্ষের দরজার ছিটকানি বাইরে থেকে লাগিয়ে দেওয়া হয়। ডাকাতরা চলে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর জিম্মিরা মুখ দিয়ে একে অপরের হাতের বাঁধন খুলে কক্ষের সিলিং দিয়ে অন্য কক্ষ দিয়ে বের হয়ে ছিটকানি খোলেন। এরপর একটি কক্ষে ঝুড়ির ভেতরে থাকা সবার মোবাইল ফোন নিয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানানো হয়।

খবর পেয়ে কোম্পানির কর্মকর্তারা ওয়ার্কশপের ভেতরে গোডাউন চেক করে দেখতে পান- গোডাউনের তালা ভাঙা। গোডাউনে রাখা ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের ব্যাটারি, ৪ লাখ টাকার বিভিন্ন গাড়ি ও ইঞ্জিনের যন্ত্রাংশ, প্রায় ১২ লাখ টাকা মূল্যের কপার স্ট্যান্ডার্ড ওয়্যার, ৫০ হাজার টাকার মিডিল ক্লাম, দেড় লাখ টাকা মূল্যের ৫ হাজার ৭৬০ পিস ইনডক্লামসহ ২১ লাখ ৫২ হাজার ১০৪ টাকা মূল্যের মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডাকাত দলের আচরণে অনেকটা স্পষ্ট যে, তারা প্রশিক্ষিত। প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও বেশ ধারণা রয়েছে তাদের। ডাকাতির পুরো ঘটনাটাই তারা সম্পন্ন করেছে সুশৃঙ্খলভাবে। ফলে ৫ ঘণ্টা তাণ্ডব চালালেও বাইরের কেউই বিষয়টি আঁচ করতে পারেনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্টরা আরো বলছেন, নীল রঙের যে পিকআপ ভ্যানে লুটের মাল পরিবহন করা হয় সেটি শনাক্ত করা হয়েছে। আসামিদের গতিবিধি দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ধরা পড়ার ভয়ে চুরির পিকআপ তারা ডাকাতিতে ব্যবহার করেছে।

এবিষয়ে রূপনগর থানার ওসি মো. আবদুল মজিদ জানান, ডাকাতদের গ্রেপ্তার এবং লুট করা মালামাল উদ্ধারে রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা খুব শিগগিরই তাদের আটক করা হবে।

শেয়ারনিউজ, ০৭ এপ্রিল ২০২৪

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে