ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

সংবিধান সংস্কারে বিএনপির ও কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ও সাদৃশ্য

২০২৫ জানুয়ারি ১৬ ১৬:১১:১০
সংবিধান সংস্কারে বিএনপির ও কমিশনের দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য ও সাদৃশ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশের সংবিধান সংস্কারে চলমান আলোচনায়, বিএনপি ও সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলির মধ্যে কিছু মিল এবং কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। গত বছর বিএনপি সংবিধান সংশোধনের জন্য ৬২টি প্রস্তাব জমা দেয়, যেগুলোর বেশিরভাগই অন্তর্বর্তী সরকার ব্যবস্থা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, এবং ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার দিকে মনোযোগ দিয়েছিল। সম্প্রতি, অধ্যাপক আলী রীয়াজের নেতৃত্বাধীন সংবিধান সংস্কার কমিশন তার সুপারিশসম্বলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যাতে অনেকটা বিএনপি’র প্রস্তাবের প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

প্রধান মিলগুলো:

বিএনপি তাদের প্রস্তাবে উল্লেখ করেছে যে, কোনো ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। কমিশনও একই প্রস্তাব দিয়েছে, তবে তারা আরও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে যে, কোনো ব্যক্তি একাধিকবার প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হলে তার জন্য এ বিধান প্রযোজ্য হবে এবং প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় তিনি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব বা সংসদ নেতা হিসেবে অবস্থান করতে পারবেন না।

বিএনপি এবং সংবিধান সংস্কার কমিশন উভয়ই রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন। বিশেষত, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমতার মধ্যে সমতা আনতে এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে উভয় পক্ষই একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছে।

বিএনপি ও কমিশন উভয়ই দ্ব চেম্বার্স সংসদ বা উচ্চকক্ষ গঠনের প্রস্তাব করেছে। বিএনপি প্রস্তাব করেছে যে, সংসদের উচ্চকক্ষে দেশের বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী, পেশাজীবী এবং প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই উচ্চকক্ষে মোট ১০৫ জন সদস্য থাকবেন, যার মধ্যে ১০০ জন ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন এবং ৫টি আসন রাষ্ট্রপতি মনোনীত করবেন।

অবশ্যই উল্লেখযোগ্য পার্থক্য:

বিএনপি তাদের প্রস্তাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে, যেখানে নির্বাচনকালীন সময় একটি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পরিচালিত হবে। এদিকে, সংবিধান সংস্কার কমিশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বদলে একটি অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব দিয়েছে। কমিশনের প্রস্তাব অনুযায়ী, আইনসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর অথবা সংসদ ভেঙে গেলে, নির্বাচন পরবর্তী সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনা করবে, যার প্রধান হবে ‘প্রধান উপদেষ্টা’। এই সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। বিএনপি তাদের প্রস্তাবে বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য একটি ‘জুডিশিয়াল কমিশন’ গঠনের কথা বলেছে। তবে, সংবিধান সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের অধীনে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং ‘স্থানীয় আদালত’ ব্যবহারের প্রস্তাব করেছে। এটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হাইকোর্ট বিভাগের সমান এখতিয়ারসম্পন্ন হাইকোর্ট স্থাপন করবে, যা বিচার বিভাগের কার্যক্রমকে আরও উন্নত করতে সহায়তা করবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল প্রতিষ্ঠার কথা বলেছে, যা নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নিয়োগ করবে। BNP তাদের প্রস্তাবে বলেছেন, নির্বাচন কমিশনকে আরও নিরপেক্ষ ও কার্যকর করতে “প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন, ২০২২” সংশোধন করা হবে।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের সারসংক্ষেপ সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে, তবে বিএনপি এখনও এই প্রস্তাবের পুরো বিশ্লেষণ করতে পারেনি। বিএনপির নেতারা জানান, তারা কমিশনের সুপারিশের বিস্তারিত হাতে পাওয়ার পর দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন এবং এরপর দলীয় অবস্থান জানাবেন। তবে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেছেন যে, উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট সংসদ ও ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়গুলি তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে মিলে গেছে, তবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিষয়টি আদালত থেকে আগেই রায় পেয়েছে এবং কমিশনও সেই পথ অনুসরণ করেছে।

এখন, সংবিধান সংস্কারের এই প্রস্তাবগুলো নিয়ে রাজনৈতিক আলোচনা আরো তীব্র হবে, এবং ভবিষ্যতে দেশের রাজনীতি ও রাষ্ট্রব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে।

কেএইচ/

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে