ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

দুদকের জালে ধরা পাসপোর্টের ‘সেই সাচ্চু’

২০২৩ সেপ্টেম্বর ০৪ ০৯:৫৪:৩৬
দুদকের জালে ধরা পাসপোর্টের ‘সেই সাচ্চু’

নিজস্ব প্রতিবেদক : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানের মুখে কর্মস্থলে অনুপস্থিত পাসপোর্ট অধিদপ্তরের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাচ্চু মিয়া। ইতোমধ্যে তাকে ‘পলাতক’ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে দায়ের করা বিভাগীয় মামলাও চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ফলে সাচ্চু এখন স্থায়ী বরখাস্তের মুখোমুখি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০২১ সালের ৩১ আগস্ট সাচ্চুর অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নামে দুদক। এক পর্যায়ে সাচ্চু তার ও তার স্ত্রীর সম্পদের বিবরণী তদন্ত দলের কাছে জমা দিতে বাধ্য হন। কিন্তু এই বিপত্তি বাধে। বাস্তব সম্পদের সাথে জমা দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে বিস্তৃত অমিল পাওয়া যায়। এ কারণে দুদক বিস্তারিত তদন্ত শুরু করলে হঠাৎ করেই তিনি কর্মক্ষেত্রে অনিয়মিত হয়ে পড়েন। ৮ মাসের বেশি কাজে অনুপস্থিত।

বিভিন্ন সময়ে সাচ্চুর কাছ থেকে ঘুষের শিকার হওয়া একাধিক পাসপোর্ট কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, সাচ্চু যেহেতু প্রতিরক্ষা প্রকৌশলী ছিলেন, তাই আইটি সেক্টরের সব ধরনের মালামাল ও যন্ত্রাংশ তার অধীনে রাখা হয়। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী 'বকশিশ' না পেলে সাচ্চু প্রয়োজনীয় অংশ প্রকাশ করতেন না। ফলে অনেক সময় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে সেবা নিতে বাধ্য হন। এভাবে চাঁদাবাজির কায়দায় দেশের ৬৯টি পাসপোর্ট অফিস থেকে ঘুষ আদায় করত সাচ্চু।

সূত্র জানায়, যারা সাচ্চুকে ঘুস দিতেন তারাও বড় ঘুসখোর। কেননা পাসপোর্ট অফিস বন্ধ থাকলে বা আবেদন জমা না হলে বিশেষ ঘুস চ্যানেলও বন্ধ হয়ে যায়। তাই অনেকটা চোরে চোরে মাসতুতো ভাইয়ের মতোই তড়িঘড়ি অফিসের কার্যক্রম চালু রাখতে সাচ্চুকে ঘুস দিতে কার্পণ্য করতেন না কেউ। এছাড়া নানারকম কেনাকাটায় কারচুপি করেও বড় ধরনের অর্থ তছরুপ করেন সাচ্চু। দুদকের তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সাচ্চুর নামে খোলা কয়েকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে।

কেবল পূবালী ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টেই লেনদেনের অঙ্ক ৩ কোটি টাকার বেশি। এছাড়া পাইওনিয়ার কম্পিউটার সার্ভিস নামের ভুয়া প্রতিষ্ঠানের নামে কয়েকটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। এসব অ্যাকাউন্টে লেনদেনের অঙ্ক পৌনে দুই কোটি টাকা।

দুদক জানায়, সাচ্চু ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা। তিনি ২০১২ সালে চাকরিতে যোগ দেন। বর্তমানে বেতন পান ৬৫ হাজার টাকা। কিন্তু তিনি অভিজাত জীবনযাপন করেন। ৪০ লাখ টাকার গাড়িতে ভ্রমণ করেন। এ ছাড়া রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্রশস্ত ফ্ল্যাট রয়েছে তার।

পাসপোর্ট বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসার জন্য ১৩ জানুয়ারি ভারতে যান সাচ্চু। কিন্তু এরপর আর কাজে ফেরেননি। তিনি ভারত থেকে ফিরেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চাকরিতে যোগ দেওয়ার জন্য তাকে বেশ কয়েকটি কল তাগাদা পত্র হয়েছিল। পরপর তিনবার কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকাজ) দেওয়ার পরও তিনি কোনো সাড়া পাননি। তার পরিবারের সবাই এ বিষয়ে কথা বলতে নারাজ।

পাসপোর্ট অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু বলেন, সাচ্চু মিয়া প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে মন্ত্রণালয় থেকে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে বলে জানান তিনি।

শেয়ারনিউজ, ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পাঠকের মতামত:

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে