ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

২৬১টি গাড়ি পাচ্ছেন ডিসি-ইউএনওরা

২০২৩ আগস্ট ৩০ ০৯:৫৯:১২
২৬১টি গাড়ি পাচ্ছেন ডিসি-ইউএনওরা

নিজস্ব প্রতিবেদক : এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও) যেন ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করে এই লক্ষে তাদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করেছে অর্থ বিভাগ। এর মধ্যে ৬১টি ডিসিদের জন্য এবং ২০০টি ইউএনওদের জন্য। মোট খরচ হবে ৩৮০ কোটি টাকা।

সোমবার (২৮ আগস্ট) এ প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। সরকারের কঠোরতা নীতি সত্ত্বেও গত কয়েক বছরে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তারা বেশি গাড়ি পাচ্ছেন। এমনকি গাড়ির প্রাপ্যতার শর্ত শিথিল করে তাদের দেওয়া হচ্ছে ২৭০০ সিসির গাড়ি, যা গ্রেড-১ ও ২ (সচিব ও অতিরিক্ত সচিব) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের বিশেষাধিকার।

এভাবে শর্ত শিথিল করে গাড়ি কেনার যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও পরিবহণ সেবা স্বাভাবিক রাখতে এ গাড়ি কেনা প্রয়োজন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবিএম মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, বর্তমান রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি ভালো নয়। এই মুহূর্তে গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত সরকার না নিলেই ভালো হতো। তারা প্রতিস্থাপক করার কথা বলছে। কিন্তু সব গাড়ি কি একসঙ্গে অচল হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি, কৃচ্ছ্রসাধনের যে সিদ্ধান্ত ছিল এটি তার পরিপন্থি। গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন করা দরকার ছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিটি গাড়ির মূল্য ধরা হয়েছে ১ কোটি ৪৫ লাখ টাকা এবং রেজিস্ট্রেশন ফি ৮০ হাজার ৫শ টাকা। এ হিসাবে একটি গাড়ি কিনতে মোট খরচ হবে ১ কোটি ৪৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫শ টাকা।

এর আগে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গাড়ি চেয়ে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব দেওয়া হয়। সেখানে কতগুলো যুক্তি তুলে ধরে বলা হয়, ডিসি এবং ইউএনওদের জন্য ২৬১টি গাড়ি কেনা দরকার।

জানা গেছে, এসব গাড়ি কেনার খরচ সরাসরি বাজেট থেকে দেওয়া হয়নি। মোট ব্যয়ের ৩৮০ কোটি টাকার মধ্যে চলতি বাজেটের অপ্রত্যাশিত খাত থেকে ২১০ কোটি টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিবালয়ের অংশ থেকে ১১০ কোটি টাকা এবং সরকারি যানবাহন অধিদপ্তরের নিজস্ব বাজেট থেকে ৬০ কোটি টাকার সংস্থান করা হয়েছে।

সরকারের কৃচ্ছ সাধন নীতির আওতায় নতুন গাড়ি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে অর্থ বিভাগের। এজন্য এ খাতের পুরো বরাদ্দ স্থগিত আছে। তবে অর্থ বিভাগের নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে সুকৌশলে গাড়ি কেনার একটি সুযোগও রাখা আছে। সেটি হলো-১০ বছরের অধিক পুরোনো গাড়ি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে নতুন গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া যাবে।

এ প্রক্রিয়ায় গাড়ি কেনাকে বলা হয়েছে প্রতিস্থাপন। তবে এবারের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে ১০ বছরের সময়সীমাকে বাড়িয়ে ১৪ বছর করা হয়েছে। কেননা, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, কোনো নতুন গাড়ি ১০ বছর পর চলাচলের জন্য অযোগ্য হয় না।

২০২০ সাল থেকে সরকারি খাতে গাড়ি কেনা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশ সফরসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যয়সাশ্রয়ী পদক্ষেপ গ্রহণের নীতি জারি করে সরকার। যা চলতি অর্থবছরেও বহাল রাখা হয়েছে। এরই মধ্যে মাঠপ্রশাসনের জন্য আড়াইশর বেশি গাড়ি কেনার প্রস্তাব দিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

প্রস্তাবের যৌক্তিকতা উল্লেখ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বলছে, সরকারি যানবাহন কেনার ১০ বছর পর সংশ্লিষ্ট যান প্রতিস্থাপকের বিধান রয়েছে। চলমান অর্থনৈতিক মন্দা বিবেচনায় প্রথমে ১৩ বছর বা তারও পুরোনো এবং ব্যবহার অনুপযোগী ৪৬১টি গাড়ির চাহিদা দিয়েছিল সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর। এটি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান, যারা সরকারি যানবাহন ক্রয়, মেরামত এবং ভিভিআইপিসহ প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের গাড়ি বরাদ্দসহ এ সংক্রান্ত যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করে।

২০১৮ সালে ১১৬টি উপজেলার জন্য ৫০টি এবং ২০১৯ সালে ৬৬টি গাড়ি কেনা হয়। এরপর অর্থনৈতিক মন্দার কারণে প্রতিবছর গাড়ি কেনার বরাদ্দ থাকলেও সরকারের অনুমোদন ছিল না। তাই এবার নির্বাচনী কার্যক্রমসহ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছে সরকারি যানবাহন অধিদপ্তর সূত্র।

অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একাধিক দফায় কথা হয়েছে। মাঠ প্রশাসনের প্রয়োজনের নিরিখেই এসব গাড়ি কিনতে সম্মত হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন গাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হলে মাঠ প্রশাসনে থাকা গাড়িগুলোর মধ্যে মেরামতযোগ্যগুলোকে সারানো হবে। আর যেসব গাড়ি সারানো লাভজনক মনে হবে না, সেগুলোকে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিক্রি করে দেওয়া হয়।

এদিকে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য জুলাইয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল কার্যালয়ের গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেয় নির্বাচন কমিশন। অপরদিকে একই সময় মাঠপর্যায়ের জরিপ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য গাড়ি কেনার প্রস্তাব দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে অর্থ বিভাগের শর্তারোপ : ডিসি ও ইউএনওদের গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের আনুষ্ঠিকভাবে কয়েকটি শর্ত জুড়ে দিয়েছে অর্থ বিভাগ।

সেখানে বলা হয়, প্রতিস্থাপক হিসাবে গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বর্তমান গাড়ির বয়স ১৪ বছর হয়েছে এবং অকেজো এ ঘোষণাসংক্রান্ত বিআরটিএর পরিদর্শক দলের অনুমোদন গ্রহণ করতে হবে। পরে সে অনুলিপি অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।

এছাড়া গাড়ি কনডেম কমিটির মিটিং করে তার অনুলিপিও পাঠাতে হবে। আর কনডেম করার পর গাড়িগুলো বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে, তা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এরপর জমার রশিদ অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে।

শেয়ারনিউজ, ৩০ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে