ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি ২০২৫
Sharenews24

দেশে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রেল চলাচল

২০২৩ আগস্ট ২৭ ১১:৪৬:১৬
দেশে বন্ধ হয়ে যেতে পারে রেল চলাচল

নিজস্ব প্রতিবেদক : মূল বেতনের সঙ্গে চলমান ভাতা যোগ করে পেনশন ও গ্র্যাচুইটি প্রদান সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন না হওয়ায় রোববার (২৭ আগস্ট) মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট করতে যাচ্ছেন রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ অ্যান্ড লেবার এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

এর ফলে আজ রাত থেকে সারাদেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ প্রসঙ্গে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলছেন, রেলমন্ত্রী রানিং স্টাফদের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলেছেন, আমরা এটাই জানি। রবিবার রাত থেকে হরতাল হবে কিনা জানি না।

বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফরা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী, হেডকোয়ার্টারে ৮ ঘণ্টা ডিউটি শেষ করে ১২ ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার কথা। কিন্তু রেলওয়ের শ্রমিক সংকটের কারণে তারা ৭/৮ ঘণ্টা বিশ্রাম নিয়ে কাজে ফিরে যেতেন। রেলের কর্মচারীরা রেলের স্বার্থে কাজ করতে চান। কিন্তু রেলওয়ে তাদের স্বার্থ নিয়ে সিরিয়াস নয়। প্রতিবাদে নিজেদের অধিকার আদায়ে লড়তে যাচ্ছেন তারা।

জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী একজন রানিং স্টাফ (চালক, সহকারী চালক, গার্ড, টিকিট চেকার) তার নির্ধারিত এলাকায় (হেডকোয়ার্টার) ১২ ঘণ্টা এবং ডিউটি শেষে এলাকার বাইরে থাকলে (আউটার স্টেশন) ৮ ঘণ্টা বিশ্রাম পান। ট্রেনের ভেতর রেলওয়ের স্বার্থে যদি একজন চলমান কর্মী তার বিশ্রামের সময়ও কাজ করতে নিযুক্ত থাকে তবে অতিরিক্ত ভাতা দেওয়া হয়। যা রেলওয়েতে 'মাইলেজ' সুবিধা হিসেবে পরিচিত।

২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় মাইলেজ সুবিধা সীমিত করার জন্য রেল মন্ত্রীকে চিঠি দেয়। চিঠিতে জানানো হয়, সীমাহীন মাইলেজ সুবিধা কমিয়ে সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবস করতে হবে। এ ছাড়া বেসামরিক কর্মচারী হিসাবে চলমান কর্মীদের পেনশন এবং মহার্ঘ ভাতার সাথে মূল বেতনের সাথে প্রাপ্ত যে কোনও ভাতা বাদ দেওয়া হয়েছে। এরপরই ক্ষুব্ধ হন রানিং স্টাফরা।

মাইলেজ সুবিধা ফিরিয়ে আনার দাবিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছেন রানিং স্টাফরা। তারা কয়েকবার ধর্মঘট ও অতিরিক্ত কাজ থেকে বিরত থাকে। তবে রেলের মহাপরিচালক, রেল সচিব, রেলমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে তারা আন্দোলন থেকে সরে আসেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী সমিতি জানিয়েছে, কর্মচারীদের অবসরোত্তর ৭৫ শতাংশ মাইলেজ মূল বেতনের সঙ্গে যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলমান ছিল। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়। এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে চলমান স্টাফ অ্যান্ড ওয়ার্কার্স এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, অবসর গ্রহণের পর কর্মচারীদের মূল বেতনের সঙ্গে ৭৫ শতাংশ মাইলেজ যোগ করে পেনশন নির্ধারণের বিধান প্রায় ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। কিন্তু ২০২০ সালে রেলওয়ের কোডিফাইড রুল অমান্য করে রানিং স্টাফদের পার্ট অব পে হিসেবে গণ্য মাইলেজ, যা যুগ যুগ ধরে বেতন খাতের অংশ ছিল, সেখান থেকে সরিয়ে টিএ খাতে নেওয়ার ফলে জটিলতা তৈরি হয়।

এরপর ২০২১ সালের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ রেলওয়ের রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগ করে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানায়।

এরপর চলমান স্টাফরা রেলমন্ত্রী, রেল সচিবসহ রেলের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করে প্রাপ্যতার বিষয়ে আইনগত ভিত্তি ও যুক্তি তুলে ধরেন। রেল কর্তৃপক্ষ রানিং স্টাফদের দাবির যৌক্তিকতা অনুধাবন করে অর্থ মন্ত্রণালয়কে বারবার চিঠি দেন এবং প্রাপ্যতার বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেন।

কর্মচারী সমিতি জানিয়েছে, গত বছরের ৪ এপ্রিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ১০ এপ্রিল রানিং স্টাফদের কর্মবিরতিতে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে অর্থ মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল চিঠিটি প্রত্যাহার করে নেয়। পরে রেলমন্ত্রী কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে এ সমস্যা দ্রুত সমাধানের আশ্বাস দেন। যার ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুন রেলওয়ের মহাপরিচালক স্পষ্ট করে রানিং স্টাফদের মাইলেজ যোগে পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু গত ১৮ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের একটি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আবারও আপত্তি জানিয়েছে। ফলে চলমান স্টাফদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে গত ২০ আগস্ট রেলমন্ত্রী, সচিব এবং রেলওয়ে মহাপরিচালক আমাদের ডেকেছিলেন। আমাদের সব অঞ্চলের নেতাকর্মীরা সেদিন উপস্থিত হয়ে তাদের সঙ্গে বসে কথা বলেছি। কিন্তু রেলমন্ত্রী সেদিন আমাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে পারেননি। তিনি আমাদের হুমকি দিয়েছেন। আমরা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি, আর এরই মধ্যে ওনাদের প্রায় সাড়ে তিন বছর সময় দেওয়া হয়েছে।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটা নতুন কোনো বিষয় নয়, এটা ১৬০ বছর ধরে চলে আসছে। ১৬০ বছর ধরে চলে আসা একটা নিয়ম হুট করে বন্ধ করে দেবে, এটা তো রেলের কোনো স্টাফ মেনে নিতে পারে না। আমরা ওনাদের বারবার সময় দিয়েছি, বারবার আন্দোলন করেছি, বারবার প্রত্যাহার করেছি। কিন্তু এবার আর কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। তিনি (রেলমন্ত্রী) যদি সেদিন ভালো ব্যবহার করে অন্তত সব নেতাদের বোঝাতে পারতেন, তাহলে একটা ব্যবস্থা হয়ত হতো। কিন্তু তিনি তা করেননি।

রানিং স্টাফদের এই কর্মবিরতিকে ‘অধিকার আদায়ের লড়াই’ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আমরা আমাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলছি। আমাদের এবারের আন্দোলন অনির্দিষ্টকালের জন্য। আমরা তাদের সঙ্গে আর আলোচনায় যেতে রাজি নই। কারণ সর্বশেষ আলোচনাটা ফলপ্রসূ হয়নি। ২৮ তারিখ রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে আমরা টানা কর্মবিরতি শুরু করব।

এ বিষয়ে রেলওয়ের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. কামরুল আহসান গণমাধ্যমকে বলেন, রেলওয়ের রানিং স্টাফদের সঙ্গে মন্ত্রী মহোদয়ের মিটিং হয়েছে। তিনি স্টাফদের অনুরোধ করেছেন ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। আমরাও এটাই জানি। আমরা এখনো তাদের সঙ্গে কথা বলছি।

শেয়ারনিউজ, ২৭ আগস্ট ২০২৩

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর



রে